Advertisement
E-Paper

মমতা ‘সবচেয়ে দুষ্টু লোক’, সন্দেশখালিতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা শুভেন্দুর! কুণাল হেসে বললেন, ‘হাস্যকর’

নতুন বছর থেকে প্রতি মাসে এক বার করে সন্দেশখালি যাওয়ার ঘোষণা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। আবাস যোজনার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নতুন ঘোষণা করলেন। যার প্রেক্ষিতে কটাক্ষ ছুড়ে দেন কুণাল ঘোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১৩
Suvendu and Kunal

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। (ডান দিকে) কুণাল ঘোষ। — ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেশখালিতে প্রশাসনিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘সন্দেশের মতো মিষ্টি হয়েছে বৈঠক।’ ঠিক পরের দিন সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক সভা করে তাঁকে আক্রমণ শানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীর ‘দুষ্টু লোক’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে কটাক্ষ করলেন। সন্দেশখালিতে আন্দোলনের সময়ে মমতার পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছিল, তাঁদের মঞ্চে তুলে সংবর্ধিত করে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা। যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দুকে খোঁচা দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।

সোমবার সন্দেশখালিতে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সাবধানবাণী ছিল ‘দুষ্টু লোক’দের থেকে টাকা না নেওয়ার। মঙ্গলবার সেই সন্দেশখালিতে এসেই শুভেন্দুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘দুষ্টু লোক কে? এ রাজ্যে সব থেকে, বড় দুষ্টু লোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ শুভেন্দু অভিযোগ করেন, বসিরহাট লোকসভায় জয়ী তৃণমূলের হাজি নুরুলের মনোনয়ন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই কারণে মামলা করেছেন গত লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। তিনি জানান, আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি সেই মামলার পরের শুনানি রয়েছে। বিরোধী দলনেতার বার্তা, ‘‘নিশ্চিন্ত থাকুন এখানে (বসিরহাট লোকসভা) বিজেপির সাংসদ হবেই। এ রাজ্যে বিজেপির সরকার হবে। সন্দেশখালির মহিলাদের জেল খাটানোর জন্য জেল খাটতে হবে মমতাকে। আর ১৫ মাস ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’’ শুভেন্দুর ‘দুষ্টু লোক’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণালের কটাক্ষ, ‘‘হাস্যকর কথা বলছেন। উনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের অভিভাবক। মমতা যেটা বলতে চেয়েছেন, সেটা সবাই বুঝেছেন, সন্দেশখালির মানুষ বুঝেছেন। শুধু শুভেন্দু অধিকারীরা বোঝেননি। এটা তাঁদের সমস্যা।’’ পাশাপাশি শুভেন্দুর বাংলায় সরকার গড়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে কুণালের খোঁচা, ‘‘কুঁজোরও শখ হয় চিৎ হয়ে শোওয়ার, গামছারও ইচ্ছা করে ধোপা বাড়ি যাওয়ার। এ সব বিজেপির দিবাস্বপ্ন। চলুক।’’

বছরের শুরুতে সন্দেশখালি নিয়ে উত্তাল ছিল রাজ্য রাজনীতি। গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির তৎকালীন তৃণমূল ব্লক সভাপতি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে যায় ইডি। কিন্তু শাহজাহানের সরবেড়িয়া আকুঞ্জিপাড়ার বাড়িতে ঢোকার মুখে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন তদন্তকারীরা। ইডি আধিকারিকদের মারধর করে তাঁদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কয়েক জন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এই আবহে সন্দেশখালির কয়েক জন মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ করেন শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই বিতর্ক পরে রাজ্য রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারী নির্যাতন, জমিদখল, মাছের ভেড়ির লিজ়ের টাকা না দেওয়ার মতো বিভিন্ন অভিযোগে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি পথে নামে। যদিও প্রথম থেকে নারী নির্যাতনের বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করে তৃণমূল। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান এবং তাঁর কয়েক জন অনুগামী। ঘটনাক্রমে লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। যদিও সন্দেশখালি বিধানসভায় অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয় তৃণমূল। সেই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) মুখ্যমন্ত্রী শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে বলেছেন। এঁরা এখন খারাপ হয়ে গিয়েছেন। আর যখন এঁরা জমি দখল করতেন? মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করতেন? সরকারি টাকা লুটেপুটে খেতেন? তখন তিনি কোথায় ছিলেন? এখন শাহজাহানরা জেলে। রাজ্য তথা ভারতবর্ষের মানুষ তাঁদের সম্বন্ধে জেনে গিয়েছেন। তাই এখন নিজেদের ভাবমূর্তি ভাল রাখার জন্য, ভোট ব্যাঙ্ক ঠিক রাখতে সর্বসমক্ষে তাঁদের ‘দুষ্টু লোক’ বলা হচ্ছে।’’

বাংলা আবাস যোজনার দেওয়া অর্থের পরিমাণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ‘‘এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় ঘর হয় না (দুই দফায় এই পরিমাণ অর্থ দেয় সরকার)। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে তিন লাখের ঘর বানাব, সঙ্গে শৌচালয়। থাকবে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল। আর ১৫ মাস ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তার পর লাইন দিয়ে পদ্ম ফুলে ভোট দিতে হবে।’’

সোমবার মমতার প্রশাসনিক সভাস্থলে বিদ্যাধরী নদীর উপর সেতু তৈরির দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন কয়েক জন। যার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না।’’ ওই কথার রেশ ধরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আর চার মাস পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওঁর ১৪ বছর পূর্ণ হবে। মুখ্যমন্ত্রী এত দিনে জানতে পারেননি যে সন্দেশখালীর জেলিয়াখালিতে বিদ্যাধরী নদীর উপর একটি সেতুর দরকার। উনি যখন জানতে পারেননি তখন আর ওঁর জানার দরকার নেই। আমাদের ক্ষমতায় আনুন। আমরা এই সব সেতু তৈরি করে দেব।’’ পাশাপাশি শুভেন্দুর ঘোষণা, ‘‘২০২৫ সাল থেকে প্রতি মাসে সন্দেশখালি আসব এবং গীতা বিলি করব। সন্দেশখালির প্রতিটি হিন্দু ভাইবোনকে গীতা পড়তে হবে। তাঁদের সকলকে গীতা দেব।’’

Suvendu Adhikari Mamata Banerjee Kunal Ghosh sandeshkhali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy