Advertisement
০৭ মে ২০২৪
মাছ রাখার হিমঘর নেই কাকদ্বীপে

লাভের গুড় খাচ্ছেন পাইকাররা

ঝুড়িভর্তি করে উঠে আসছে ইলিশ। সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে লভ্যাংশে অংশীদারী প্রথা চালু রয়েছে। কাকদ্বীপের ওই মাঝি সোনারঞ্জন দাস জানান, আগে যেখানে অল্প মাছ ধরেই কাজ হচ্ছিল, দাম পড়ে যাওয়ায় প্রচুর বেশি মাছ ধরতে হচ্ছে।

হিমঘর: কাকদ্বীপে তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

হিমঘর: কাকদ্বীপে তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

প্রচুর ইলিশ। কিন্তু লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছেন পাইকাররাই। আর মৎস্যজীবীরা পড়ে রয়েছেন সেই তিমিরেই।

ভরা ইলিশের মরসুমেও এই কথাটাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সোনারঞ্জন দাস। জেলেপট্টির ওই মাঝির কাছে এখন প্রচুর ইলিশই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মাছের জোগান বাড়লেও তা মজুত করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। ফলে পাইকার-মজুতদারদেরই পৌষমাস। কিন্তু এ ভাবে চলতে পারে না। সে জন্য কাকদ্বীপে দ্রুত হিমঘর তৈরির দাবি জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের দাবি অনুযায়ী কাকদ্বীপ বন্দরে বেনফিসের তরফে মাস দু’য়েক হল একটি ছোট সরকারি হিমঘর তৈরির কাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু মৎস্যজীবীদের জন্য এরকম আরও বেশ কয়েকটি প্রয়োজন।

ঝুড়িভর্তি করে উঠে আসছে ইলিশ। সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে লভ্যাংশে অংশীদারী প্রথা চালু রয়েছে। কাকদ্বীপের ওই মাঝি সোনারঞ্জন দাস জানান, আগে যেখানে অল্প মাছ ধরেই কাজ হচ্ছিল, দাম পড়ে যাওয়ায় প্রচুর বেশি মাছ ধরতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘খরচা, খাটনি প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু মাছ বিক্রি করার সময় পাইকার কম দর বললে তাতেই ছেড়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে মাছ।’’

বাড়তি ইলিশের লাভ পাইকাররাই ঘরে তুলছেন। কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, সাগরের বিভিন্ন বন্দর থেকে ধরা মাছ ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজারেই আসে। প্রতি মরসুমে ভাল ইলিশের প্রায় ৯০ শতাংশ হিমঘরে ঢুকে যায়। ডায়মন্ড হারবারের এক পাইকার তথা হিমঘর মালিক বিজয় সাহু বলেন, ‘‘ভাল মাছ মানুষকে খাওয়াতে গেলে বড় মাছ রাখতে হয় হিমঘরে। তা সব সময় পাওয়া যায় না। তাই কেবল কাকদ্বীপ, বা নামখানা নয়, ওড়িশা এবং মায়ানমার থেকেও মাছ এনে মজুত করতে হয়।’’

মরসুম চলাকালীন মজুতের প্রয়োজন ফুরোলে সেটুকু মাছ বাজারে আসে প্রায় ফেলনা দামে। এখন যা হয়েছে। অভিযোগ, বেশ কিছু পাইকারদের হাতে হিমঘর থাকায় ইলিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে তাঁদের হাতেই বলে জানান মৎস্যজীবীরা।

কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা সতীনাথ পাত্রের দাবি, ‘‘খাটনি করছে মৎস্যজীবী শ্রমিকরা। কিন্তু বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়ে যাচ্ছে পাইকার এবং হিমঘর মালিকদের হাতে। তাই এখানকার মৎস্যজীবীরাও আরও বেশি সংখ্যায় হিমঘরের দাবি তুলেছে। যাতে মজুত করা মাছ পরে বিক্রি করা যায়।’’

যে হিমঘরটি তৈরি হচ্ছে তা আরও কয়েকমাসে সেটি ব্যবহারযোগ্য হবে বলে দাবি করছেন মৎস্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু সেটি মাত্র ১৫০ মেট্রিক টন মাছ মজুত করে রাখার মতো। ইলিশের ভরা মরসুমে এক দিনেই তার চেয়ে অনেক বেশি মাছ কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন মৎস্য বন্দর থেকে ধরা পড়ে। নামখানা এবং পাথরপ্রতিমার বন্দরগুলিতেও প্রয়োজন হিমঘর। কিন্তু এখন সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের অধিকর্তা বিধানচন্দ্র রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE