রাতের অন্ধকারে মৎস্যজীবীদের নৌকোয় হানা দিয়ে এক জনকে তুলে নিয়ে গেল বাঘ। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের বনছাবড়ি ধসের খালের কাছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবুরালি মোল্লা নামে কুলতলির দেউলবাড়ির বাসিন্দা বছর চল্লিশের ওই মৎস্যজীবীর খোঁজ মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত রবিবার আবুরালি সহ আরও ছয় মৎস্যজীবী কুলতলির চিতুরি ঘাট থেকে নৌকো করে মাছ-কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে যান। চার-পাঁচ দিন বিভিন্ন নদী-খাঁড়িতে ঘুরে মাছ-কাঁকড়া ধরেন। শুক্রবার ফেরার কথা ছিল। আগের রাতে বানছাবড়ি ধসের খালের কাছে নৌকো নোঙর করেছিলেন সকলে।
আবুরালির সঙ্গীরা জানান, রাত ১০টা নাগাদ জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আবুরালির উপরে। ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলের দিকে। সঙ্গীরা লাঠি, বাঁশ নিয়ে বাঘকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। অন্ধকারে দ্রুত জঙ্গলে ঢুকে যায় বাঘ।
সকালে এলাকায় ফিরে বন দফতরের কার্যালয়ে বিষয়টি জানান মৎস্যজীবীরা। বন দফতর সূত্রের খবর, আবুরালির খোঁজ চলছে।
বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে আবুরালির। স্ত্রী মহিমা মোল্লা জানান, ছেলেরা পড়াশোনা করে। আবুরালিই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে। তিনি বলেন, “রাত ৮টা নাগাদ ফোনে কথা হয়ছিল ওঁর সঙ্গে। বলেছিলেন, মাছ ধরা হয়ে গিয়েছে। সকালে ফিরে আসবেন। তারপরে রাতেই বাঘে নিয়ে গেল! জায়গা-জমি নেই আমাদের। মাছ ধরেই সংসার চলত। ছেলেদের নিয়ে এখন কী ভাবে বাঁচব, জানি না।”
এই ঘটনায় মৎস্যজীবীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সহ সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল বলেন, “চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত দশ জন মৎস্যজীবী বাঘের হানায় জখম হয়েছেন বা মারা গিয়েছেন। কেউ কেউ নিখোঁজ। অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। আমাদের দাবি, প্রতিটি পরিবারকে সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরিবারের এক জনের চাকরি ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)