Advertisement
E-Paper

নির্দল হয়ে ভোটে লড়ছেন যুব তৃণমূল সভাপতি, গোবরডাঙায় অস্বস্তিতে দল

পুরসভার বিদায়ী উপ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে পুরভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন এলাকার যুব তৃণমূল সভাপতি। ঘটনাটি গোবরডাঙা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। উপপুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম তরফদার এ বার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০২:১৩
অসীম তরফদার ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

অসীম তরফদার ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

পুরসভার বিদায়ী উপ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে পুরভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন এলাকার যুব তৃণমূল সভাপতি। ঘটনাটি গোবরডাঙা পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।

উপপুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম তরফদার এ বার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর। তাঁর নিজের ওয়ার্ডটি এবারে মহিলা সংরক্ষিত। ফলে দল তাঁকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডটি সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত। বর্তমান ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের চিত্রলেখা দত্তকে দল ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দলেরই একাংশের কর্মী-সমর্থকদের মদতে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন গোবরডাঙা শহর যুব তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। কয়েক জন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাও চেয়েছিলেন বিশ্বনাথ দলীয় টিকিট পান। গোবরডাঙা শহর তৃণমূল সভাপতি সমীর নন্দী ওই বিষয়ে বলেছেন, ‘‘বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁদের নির্দেশ মতো আমরা বিশ্বনাথবাবুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’ দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বিশ্বনাথকে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দল বিরোধী কাজ মেনে নেওয়া যাবে না।’’

বছর পঁয়তাল্লিশের বিশ্বনাথবাবু ১৯৯৮ সাল থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। কেন তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হলেন। বিশ্বনাথবাবু জানিয়েছেন, দলীয় নির্দেশ ছিল, ওয়ার্ডে বৈঠক করে বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থকের মতামত নিয়ে এ বারে প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

সেই মতো ওয়ার্ডে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত, সমীর নন্দী, শঙ্কর দত্ত, রাজীব দত্তের মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বনাথবাবুর দাবি, ‘‘ওই সভায় ৯৫ শতাংশ কর্মী-সমর্থক আমার নাম প্রার্থী হিসাবে মেনে নেন। কিছু কর্মী-সমর্থক বর্তমান কাউন্সিলর চিত্তলেখা দত্তকে চেয়েছিলেন। আর অসীমবাবুর এক আত্মীয় তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। যিনি কিছু দিন আগেও বিজেপি করতেন। তারপরেও দেখলাম, অসীমবাবু নিজের উপপুরপ্রধানের পদটিকে ব্যবহার করে উপর মহলের নেতৃত্বের কাছ থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে এসেছেন।’’ নির্দল প্রার্থী বলেন, ‘‘দল আমাকে টিকিট না দেওয়ার পরে ওয়ার্ডে আমি মিটিং ডাকি। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ আমাকে বলেন, আপনি ভোটে দাঁড়ান, আমরা আপনাকে জেতাব। তা ছাড়া, ১৩ নম্বর ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা নিজেদের মধ্যে ওয়ার্ড বিনিময় করেছেন, তা ওয়ার্ডের মানুষ ভাল ভাবে মানতে পারেননি। সে কারণে এলাকার মানুষের দাবি মেনে আমাকে ভোটে দাঁড়াতে হয়েছে।’’

দলীয় সূত্রের খবর, প্রথমে অসীমবাবুকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করতে স্থানীয় নেতৃত্বের কারও কারও আপত্তি ছিল। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের চাপে তাঁরা শেষ মুহূর্তে মত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন। জ্যোতিপ্রিয়বাবু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, উপপুরপ্রধানকে প্রার্থী করতে হবে। তা ছাড়া, বিদায়ী চেয়ারম্যান সুভাষ দত্তের সমর্থনও অসীমবাবু প্রতি ছিল।

অসীমবাবু দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পুরসভার কাউন্সিলর। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও ২০০৫ সালে তিনি ভোটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেছিলেন। অসীমবাবুর দাবি, ‘‘ওই বছর ওয়ার্ডের তৎকালীন দলীয় কাউন্সিলর স্বপন বিশ্বাস টিকিট না পেয়ে নির্দলে দাঁড়িয়েছিলেন। বামেরাও তাকে সমর্থন করেছিল। তাতেও ভোটে জিততে কোনও অসুবিধা হয়নি।’’

ফের একই রকম পরিস্থিতি? কী বলছেন অসীমবাবু? তাঁর কথায়, ‘‘২৫ বছর ধরে আমি কাউন্সিলর। মুখ্যমন্ত্রী ও পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন তার প্রেক্ষিতে মানুষ আমাকে ভোট দেবেন। তা ছাড়া, ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরও প্রচুর উন্নয়ন করেছেন।’’

১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৯৯৫ সালে বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রী ভারতী কর্মকার কংগ্রেসের টিকিট না পেয়ে নির্দলে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ভারতীদেবীর প্রতীক ছিল আপেল। এ বার বিশ্বনাথবাবুরও প্রতীক, সেই আপেল। ২০০৫ সালে অসীমবাবু যখন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন, তখন তাঁর হয়ে যাবতীয় কাজকর্ম সামলাতেন বিশ্বনাথ। অসীমবাবুর সঙ্গে তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর চিত্রলেখাদেবীর অবশ্য অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ায় কোনও ক্ষোভ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘গত বার আমি চারশোর বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু দলের জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে আমি অসীমবাবুকে ওয়ার্ডটি ছেড়ে দিয়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছি। দলীয় নির্দেশ সকলকে মেনে চলতে হবে।’ ’দলের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমি আর কী বলতে পারি।’’ তবে কবে তাঁকে সরকারি ভাবে বহিষ্কার করা হবে, তা অবশ্য নেতাদের কথায় এখনও স্পষ্ট নয়।

ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী শ্যামল ভট্টাচার্য এবং বিজেপির প্রার্থী গৌতম পাল। গৌতমবাবুর সঙ্গে অসীমবাবুর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এলাকার মানুষের কথায়, ‘‘অসীমবাবুকে বিজেপি প্রার্থী গুরু হিসাবে মানেন। সেই অর্থে এখানে গুরু-শিষ্যের লড়াই।

gobardanga southbengal trinamool tmc municipal election Jyotipriyo Mullick CPM Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy