Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Jyotipriya Mallik arrest

‘বালুদা’কে নিয়ে উদ্বেগে রাত জাগলেন বহু তৃণমূল নেতা-কর্মী

রাত দেড়টা নাগাদ মন্ত্রীর গ্রেফতারের খবর জানাজানি হয়। নেতা-কর্মীরা অনেকেই নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলতে থাকেন।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
হাবড়া শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৬
Share: Save:

পার্টি অফিসের টিভিতে চোখ রেখে দাঁতে নখ কাটছিলেন এক তৃণমূল কর্মী। ঘন ঘন চায়ের অর্ডার দিচ্ছিলেন। সঙ্গে পুড়ছিল সিগারেট। সঙ্গী-সাথীদের চোখেমুখে উদ্বেগ।

বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় ১১টা। একে একে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বাড়ির পথ ধরলেন। এক স্থানীয় নেতা বলতে বলতে বেরোলেন, ‘‘আজ রাতে মনে হয় আর ঘুম আসবে না চোখে!’’

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাসতালুক বলে পরিচিত। এক সময়ে এই জেলারই আর এক প্রান্ত গাইঘাটা থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় থেকে হাবড়া কেন্দ্র থেকেই জিতে আসছেন। এলাকার দলের বহু নেতা-কর্মীর সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা তাঁর। তাঁদের অনেকেই বৃহস্পতিবার রাতটা কার্যত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।

হাবড়ার এক পার্টি অফিসের বাইরে পায়চারি করতে করতে এক নেতাকে বলতে শোনা গেল, ‘‘মনে হচ্ছে আজকের রাতটা কাটবে না, তার আগেই দাদাকে পুরে দেবে।’’
আশঙ্কাটা অমূলক ছিল না।

রাত দেড়টা নাগাদ মন্ত্রীর গ্রেফতারের খবর জানাজানি হয়। নেতা-কর্মীরা অনেকেই নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলতে থাকেন। জানা গেল, কেউ কেউ নাকি মাঝ রাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ‘‘দাদার খবরটা শুনে উদ্বেগ ধরে না রাখতে পেরেই রাতে বেরিয়েছিলাম। দলের কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করলাম’’— বললেন এক নেতা।

সংবদমাধ্যমের কর্মীদের কাছেও ফোন আসছিল ঘন ঘন। সকলেই দাদার খবর জানতে চান। ভোর ৪টেয় জেলার এক প্রাক্তন পুরপ্রধানের ফোনে ঘুম ভাঙল। জানতে চাইলেন, ‘‘খবরটা কি সত্যি?’’ কোন খবর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কথা বলায়, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রেখে দিলেন।

তবে এমন উদ্বেগ শুধু হাবড়ায় নয়, জেলার আরও প্রান্তে দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধের পর থেকে। কিছু দিন আগেই বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। সে বার অবশ্য এ হেন উদ্বেগ দেখা যায়নি জেলা জুড়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

দলের একটি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে হাবড়া থেকে অনেকেই জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়ির কাছে পৌঁছে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা, প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। নীলিমেশ বলেন, ‘‘ভোর সাড়ে ৩টের সময়ে বালুদাকে (জেলা রাজনীতিতে এ নামেই পরিচিত জ্যোতিপ্রিয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সস্নেহে ডাকনামেই ডাকেন) গাড়িতে তোলা হয়। ওই সময়ে আমাকে দেখে হাত নাড়লেন। খুবই খারাপ লাগছিল।’’ নারায়ণের কথায়, ‘‘সারা রাত ঘুম হয়নি। শুক্রবারও বালুদার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে যাই।’’

শুক্রবার সকালে হাবড়া শহরে গিয়ে দেখা গেল, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মুখ থমথমে। কেউ সরাসরি মুখ খুলতে চাইলেন না। জনান্তিকে কেউ কেউ জানালেন, এই তো ক’দিন আগেই ‘দাদা’ এলেন পজো
উদ্বোধনে। কত হাসিখুশি ছিলেন। কী যে হয়ে গেল! পুজো উদ্বোধনে এসে হাবড়া শহরের জল প্রকল্পের
কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন জ্যোতিপ্রিয়।

হাবড়ার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পুজোর সময়েও বালুদাকে দেখে মনে হয়নি কোনও টেনশনে আছেন। হয় তো কেউ বুঝিয়েছিল, সমস্যা মিটে গিয়েছে। কিন্তু
বাকিবুর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কেন জানি আমাদের ভয় ভয় লাগছিল।’’

জেলা রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিবাদ নানা সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মুখ খুলত চাননি কাকলি। ফোনে বললেন, ‘‘দিল্লিতে আছি, মিটিংয়ে ব্যস্ত।’’

বনগাঁ মহকুমা জুড়েও জ্যোতিপ্রিয়ের অনুগামীর সংখ্যা কম নয়। তাঁরাও অনেকে রাত জেগেছেন। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস রাত আড়াইটে পর্যন্ত টিভির পর্দা থেকে চোখ সরাননি। বললেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি চক্রান্ত করে এই নক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।’’

বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠও রাত ২টো পর্যন্ত জেগে ছিলেন। অসংখ্য মানুষ ফোন করে বালুদার খবর জানতে চেয়েছেন বলে জানালেন। গোপালের কথায়, ‘‘বালুদা আমাদের কাছে অভিভাবক। তিনি তৃণমূল কর্মীদের লালন-পালন করেছেন। রেশনের খাদ্য বণ্টনে বরং উনি স্বচ্ছতা এনেছিলেন। দফতরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিলেন। অথচ, ওই দফতরের দুর্নীতির অভিযোগেই গ্রেফতার হতে হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE