Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
টাকি স্টেশন

ট্রেন বন্ধের আশঙ্কায় অবরোধ

মাসের পর মাস লোকসানে চলছে বলে রাজ্যের আটটি লাইনে ট্রেন চালানো বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছে পূর্ব রেল।

আশঙ্কা: টাকিতে। নিজস্ব চিত্র

আশঙ্কা: টাকিতে। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৪
Share: Save:

লোকসানে চলা কিছু লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করার প্রস্তাবের প্রতিবাদে শনিবার টাকি স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল। ভোগান্তি হয় বহু মানুষের।

মাসের পর মাস লোকসানে চলছে বলে রাজ্যের আটটি লাইনে ট্রেন চালানো বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছে পূর্ব রেল। তবে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার এসএস গহলৌতের লেখা চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে, রাজ্য যদি লোকসানের অন্তত ৫০ শতাংশ বহন করতে রাজি থাকে, তা হলে জনস্বার্থে এই সব লাইনে ট্রেন চালানো যেতে পারে। ওই আটটি লাইনের মধ্যে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ শাখাও আছে।

এই চিঠির খবর চাউর হতেই ক্ষুব্ধ রেলযাত্রীরা। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ টাকি স্টেশনে শিয়ালদহগামী ট্রেনের সামনে তৃণমূল নেতা চিন্ময় মণ্ডলের নেতৃত্বে ট্রেনের গায়ে দলীয় পতাকা লাগিয়ে অবরোধ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, হাসনাবাদ-শিয়ালদহ শাখায় টিকিট কম বিক্রি হচ্ছে বলে ট্রেন বন্ধ করা চলবে না। প্রায় ৪৫ মিনিট ট্রেন বন্ধ ছিল।

চিন্ময়বাবু জানান, সুন্দরবনের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জের মধ্যে নতুন ট্রেন চলাচলের আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এর জন্য হাসনাবাদে শিলান্যাসও হয়েছে। জমি জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। বারাসত-বসিরহাটের মধ্যে বড় অংশে ডবল লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধায়র জন্য ট্রেন বেড়ে ২২ জোড়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বারাসত-হাসনাবাদের মধ্যে ট্রেন বন্ধ হতে পারে শুনে সকলেই ক্ষুব্ধ।

রেল সূত্রের খবর, বারাসত-হাসনাবাদ শাখার মধ্যে পড়ে বারাসত, কাজিপাড়া, কয়ড়া-কদম্বগাছি, কালীবাড়ি, সন্ডালিয়া, বেলিয়াঘাটা, লেবুতলা, ভাসিলা, হাড়োয়া, কাঁকড়া, মির্জানগর, মালতিপুর, ঘোড়ারাস, চাঁপাপুকুর, ভ্যাবলা, বসিরহাট, অনন্তপুর, মধ্যমপুর, নিমদাঁড়িয়া, টাকি এবং হাসনাবাদ— এই ২১টি স্টেশন। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। ভিড়ের ঠ্যালায় ট্রেনে ওঠা মুশকিল হয়। তা হলে কী ভাবে রেলের লোকসান হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। রেলের এক অফিসারের কথায়, ‘‘এমনিতেই মান্থলির মূল্য কম। বেশিরভাগই মান্থলি কেটে যাতায়াত করেন। আর যাঁরা টিকিট কাটেন, তাঁদের অনেকেই ইচ্ছাকৃত কম টাকার টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠেন। যা চেকারেরও বোঝার উপায় থাকে না।’’ হাসনাবাদ-বারাসতের মধ্যে নিয়মিত চেকিংয়েরও ব্যবস্থা নেই। ফলে টিকিট না কেটে যাতায়াতের প্রবণতা বেশি বলে দাবি ওই অফিসারের।

যদিও লোকসানের কথা মেনে নিতে নারাজ হাসনাবাদ-শিয়ালদহ যাত্রী ইউনিয়নের প্রাক্তন সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, সত্যিই যদি এই শাখায় রেলের লোকসান হত, তা হলে কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে বারাসত-সন্ডালিয়া এবং লেবুতলা-চাঁপাপুকুর স্টেশনের মধ্যে ডবল লাইন করা হল? কেনই বা ভ্যাবলা-বসিরহাট হয়ে হাসনাবাদের মধ্যে রাস্তা, ক্রসিং পয়েন্ট এবং টিকিট কাউন্টারের পরি‌ষেবার উন্নতি করা হল? রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘এ সব আসলে রাজনীতির অঙ্গ। বাজেটের আগে রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার কৌশল।’’

নিত্যযাত্রী শ্যামলকুমার ভট্টাচার্য, নুরুল হুদা, কমলকান্তি ভট্টাচার্যদের কথায়, ‘‘হাসনাবাদ থেকে বারাসত হয়ে কলকাতায় যেতে হলে ট্রেন ছাড়া উপায় নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষের ট্রেনই ভরসা। যাঁরা টিকিট কাটেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক রেল দফতর। তা না করে ট্রেন পরিষেবা বন্ধের কথা ভাবা উচিত নয়।’’ সংসদে বিষয়টি তোলার কথা জানিয়েছেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি।

বসিরহাটে ট্রেন বন্ধের আশঙ্কার কথা শুনে বসিরহাটের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিয়ালদহ-হাসনাবাদের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এই সিদ্ধান্ত রোখার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE