Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
দিনে ঘটলে কী হত!

গাছের ডাল ভেঙে পড়ল চায়ের দোকানে

গত বছর নভেম্বর মাসে একই এলাকায় তিনটি দোকানের উপরে ডাল ভেঙে পড়েছিল। তিন জন জখমও হন সে বার। গাছের ডাল ভেঙে পর পর দুর্ঘটনা ঘটায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।

আচমকা: ডাল ভেঙে এলাকায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

আচমকা: ডাল ভেঙে এলাকায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

গাছের পেল্লায় ডাল ভেঙে পড়ল চায়ের দোকানের উপরে। টিনের ছাউনি ভেদ করে ডালটি ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। শুক্রবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার কালুপুর বাজার এলাকায়। দোকানটি বন্ধ থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।

গত বছর নভেম্বর মাসে একই এলাকায় তিনটি দোকানের উপরে ডাল ভেঙে পড়েছিল। তিন জন জখমও হন সে বার। গাছের ডাল ভেঙে পর পর দুর্ঘটনা ঘটায় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন রায় বলেন, ‘‘আর কত দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে কে জানে!’’

চায়ের দোকানটি নিরঞ্জন বিশ্বাসের। সকাল-সন্ধে তাঁর দোকানে বহু মানুষ ভিড় করেন। ঘটনার কথা শোনার পরে তাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ভোর রাতে ডাল ভেঙেছে বলে রক্ষা পেলাম। সন্ধের সময়ে হলে কত জন যে মারা যেতেন ভেবেই আমরা আতঙ্কিত!’’ চায়ের দোকানের পাশে রয়েছে সাইকেল গ্যারাজ। আগের বছরেই ডাল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গ্যারাজটি। জখম হয়েছিলেন গ্যারাজ মালিক অরুণ আদিত্য। তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত। বললেন, ‘‘শুকনো-মরা ডাল কী বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে! জীবন হাতে নিয়ে দোকান করছি। রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে দোকান বন্ধ করে দিতাম।’’ কালুপুর বাজার এলাকায় সড়কের পাশে থাকা দোকানিরাও আতঙ্কিত। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘এ ভাবে ডাল ভেঙে পড়তে থাকলে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’’

যশোর রোড, ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে রয়েছে প্রাচীন গাছ। ওই সব গাছের অসংখ্য ডাল বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে। দেখলে মনে হবে ডালগুলি সজীব। কিন্তু আসলে শুকনো। ওই সব ডালই ভেঙে বিপদ ঘটছে। দিন কয়েক আগে হাবড়ার হাটথুবা এলাকায় ডাল ভেঙে জখম হয়েছিলেন এক বাইক চালক।

বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত প্রায় ষাট কিলোমিটার পথেও একই ভাবে শুকনো মরা ডাল বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে। ওই পথে দীর্ঘ দিন ধরে গাছের ডাল ভেঙে এর আগে মৃত্যু হয়েছে। জখমও হয়েছেন অনেকে। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও যানচালকেরা ডাল কাটার দাবি তুলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সমস্যা মেটেনি। কয়েক বছর আগে গাইঘাটার মণ্ডলপাড়া এলাকায় ডাল ভেঙে অটোর উপর পড়ে চার জনের মৃত্যু ঘটেছিল। এই পথে রোজ কয়েক হাজার ট্রাক যাতায়াত করে। বাস, অটো, টোটো-সহ ছোট-বড় যানবাহন চলে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রিবাহী বাসও চলাচল করে।

পেট্রাপোল থেকে দত্তপুকুর পর্যন্ত পথেও কিছু গাছে শুকনো ডাল একই রকম ভাবে ঝুলে রয়েছে। এক অটো চালক বলেন, ‘‘বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’’ যশোর রোড দিয়ে রোজ হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। অভিযোগ, এ সড়কে যাত্রী-সুরক্ষা বলে কিছু নেই।

এক পরিবেশপ্রেমীর কথায়, ‘‘শুকনো মরা ডাল কাটা জরুরি। কিন্তু দেখতে হবে, ওই কাজ করতে গিয়ে গাছের সজীব ডালপালার যেন কোনও ক্ষতি না হয়।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, এ অঞ্চলে গাছে ঘুঁটে দেওয়া হয়। গাছের গোড়ায় গরম চা ও জলও ফেলা হয়। গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন মারা হয়। রয়েছে কাঠচোরদের দৌরাত্ম্য। এ সবের কারণে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। এ সব ঠেকানোর জন্য কোনও নজরদারিও নেই।

প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোর রোডের পাশে থাকা গাছের মরা ও শুকনো বিপজ্জনক ডাল শনাক্তকরণের কাজ হয়ে গিয়েছে। গত বছর গাইঘাটার চাঁদপাড়া এলাকায় বেশ কিছু গাছের এ রকম ডাল কাটাও হয়েছিল। তার পরে ওই কাজ আর খুব বেশি এগোয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। কয়েক মাস আগে প্রশাসনের তরফে পেট্রাপোল থেকে হাবড়া পর্যন্ত পথে ১৬৩টি গাছ শনাক্ত করা হয়েছিল। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক নির্বাহী বাস্তুকারের আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই মরা ও শুকনো ডাল কাটার কাজ শুরু হবে।’’

সাধারণ মানুষ অবশ্য আর এ ধরনের আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। তাঁরা চাইছেন, দ্রুত কাজ শুরু হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon Tree Branches Tea Shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE