Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
TMC

সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব বিরোধীরা, উন্নয়নের জোরদার দাবি তৃণমূলের

গত পাঁচ বছরে কতটা শক্তি ধরে রাখতে পারল শাসক দল, আসন্ন ভোটে কী ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা, পায়ের তলায় কতটা রাজনৈতিক মাটি পেল তারা— আনন্দবাজারের পর্যবেক্ষণ।

An image of TMC flag

—প্রতীকী চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ০৮:১৯
Share: Save:

তেভাগা আন্দোলনের মাটি সন্দেশখালি। এই বিধানসভা এলাকা দীর্ঘ দিন বামেদের দুর্গ ছিল। ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের ঝড়ের মাঝেও এখানে অটুট ছিল বামেদের ক্ষমতা। ২০১৬ সাল থেকে আর কোথাও বিরোধীদের তেমন অস্তিত্ব নেই। সর্বত্রই একচ্ছত্র আধিপত্য তৃণমূলের। কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকা ছাড়া বিরোধীদের তেমন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিও চোখে পড়ে না।

সন্দেশখালি ১ ও ২ ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েত নিয়ে এই বিধানসভা কেন্দ্র। দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি। জেলা পরিষদ আসন ৬টি। এখন সব আসনই তৃণমূলের হাতে। বামেদের দাবি, সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগর, ন্যাজাট ১, ২, শেয়ারা-রাধানগর পঞ্চায়েত এলাকা এবং সন্দেশখালি ২ ব্লকের সন্দেশখালি, দুর্গামণ্ডপ, কোরাকাটি পঞ্চায়েত এলাকায় সামান্য কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি বামেরা করতে পারে। এ ছাড়া, আর কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় দাঁত ফোটানোর অবস্থা নেই বামেদের। একই দশা বিজেপির।

অথচ, বাম আমলে, আনুমানিক ১৯৯৮-২০০৩ সালে তৃণমূল-বিজেপি মিলে পঞ্চায়েত সমিতি চালিয়েছে। কোরাকাটি পঞ্চায়েতও বিজেপির দখলে ছিল এই সময়ে। প্রধান ছিলেন ভবরঞ্জন মণ্ডল। ২০০১ সালে তুষখালি এলাকায় গুলি করে খুন করা হয় তাঁকে। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে। কালীনগর পঞ্চায়েত ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বামেদের দখলে ছিল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ফের সন্দেশখালি ২ পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে আসে। তবে শেষ পর্যন্ত দলবদলের ফলে তৃণমূলের হাতে ক্ষমতা আসে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, বাম বা বিজেপি এখনও যথেষ্ট অসংগঠিত এই এলাকায়। বেশিরভাগ জায়গায় কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন।সে জন্য শাসক দলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করে তারা। অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে তৃণমূল। তাদের মতে, নিজেদের সংগঠন গড়ে তুলতে না পারার দায় তাদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে বিরোধীরা। তৃণমূলের আরও দাবি, রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের জোয়ারের উপরে ভরসা রেখেছেন এখানকার মানুষ।

সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার বলেন, “এখানে বামেদের সংগঠন দুর্বল হয়ে গিয়েছে সন্ত্রাসের জেরে। কোনও জায়গায় রাজনৈতিক কর্মসূচি নিলেই তৃণমূল মারধর করে। উল্টে আমাদের লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে। সন্ত্রাসমুক্ত ভোট হলে মানুষ আমাদেরই পাশে থাকবেন।’’ তাঁর অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটে এখানে কার্যত মনোনয়নই জমা দিতে দেয়নি তৃণমূল। এ বারও মনোনয়নের প্রথম দিন থেকে তৃণমূলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। নিরাপদ জানান, ভোট ঘোষণার পরে ইতিমধ্যে আমাদের দু’জনকে খুলনা এলাকায় মারধর করা হয়েছে।তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যাব, তেমন অবস্থা নেই।’’

২০১১ সালের পর থেকে বিভিন্ন ভোটে বিজেপি এখানে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। তাদের দাবি, সারা বছর কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেয় না তৃণমূল। ভোট ঘোষণা প্রথম থেকে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব দাসের কথায়, “আমাদের এক মণ্ডল সভাপতিকে বিডিও অফিসের কাছে তৃণমূলের পার্টি অফিসে সামনে মারধর করে ফোন, মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ফোন ফেরত দেয়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হলে ওরা জানে, সব পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করবে।”

তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজান বহু দিন থেকে এই এলাকায় দলের ‘শেষ কথা।’ তিনি বলেন, “বিরোধীদের সংগঠন নেই, কারণ মানুষের সঙ্গে ওঁদের সারা বছর সম্পর্ক থাকে না। শুধু ভোটের সময়ে এসে ভোট চায়। তাই পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। আর সংবাদমাধ্যমের সামনে দায় চাপাচ্ছে তৃণমূলের উপরে। কোনও সন্ত্রাসের পরিবেশ সন্দেশখালিতে নেই। মানুষ রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের জন্য তৃণমূলের পাশে আছেন। বিরোধীদের সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Development
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE