বেআইনি: মাটি কাটা চলছে শাসনে। ফাইল চিত্র
কৃষি জমি থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কাটার অভিযোগ আছে উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে। শুরু হয়েছে ধরপাকড়। হাবরা থানার পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বৃহস্পতিবার। আমডাঙাতেও অভিযান চালিয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাবরার বুদোরহাটি এলাকা থেকে ধরা পড়ে ইলতুসমিস কবীর এবং জুলহার মৃধা। বাড়ি সোনাকানিয়া ও কুমড়ো এলাকায়। মাটি-বোঝাই তিনটি ট্রাক্টর, একটি ছোট গাড়ি এবং মাটি কাটার একটি জেসিপি মেশিন আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সোনাকানিয়া গ্রামের এক বাসিন্দার সম্মতিতে তাঁর কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছিল। তার বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ করছে পুলিশ।
বুধবার স্থানীয় সানপকুর এলাকা থেকে পুকুর ভরাটের সময়েও পুলিশ তিনটি মাটি-বোঝাই ট্রাক্টর আটক করে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। এত কড়াকড়ির পরেও কৃষি জমি থেকেই গভীর করে মাটি নেওয়ার কাজ চলছিল। ট্রাক, শক্তিমান, ডাম্পারে করে সেই মাটি চলে যাচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়।
এ দিন জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু মাটি কাটার যন্ত্র ও ট্রাক আটক করেন। শাসন ও দেগঙ্গা থানা এলাকা থেকে ৬টি মাটি কাটার যন্ত্র, চারটি ট্রাক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে এক মাটি কারবারি। বৃহস্পতিবার আমডাঙার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক লক্ষ্মণ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী হানা দেয় আমডাঙার সাধনপুরে। সেখান থেকেও তিনটি ট্রাক আটক করা হয়। জামিন অযোগ্য ধারায় আমডাঙা থানায় অভ্র বসু নামে এক মাটি কারবারির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে এমন অভিযান নিয়মিত চলবে।’’
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা জুড়ে বেআইনি ভাবে মাটি কাটা ও বহনের বরুদ্ধে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি জমি থেকে হোক বাস্তু জমি— সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি ছাড়া মাটি কাটা বেআইনি। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা করে না মাটি মাফিয়ারা। বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় মূলত কৃষি জমি থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কাটা চলছে বহু বছর ধরে। কোথাও ইটভাটার জন্য, আবার কোথাও পুকুর ভরাটের জন্য সেই মাটি নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত ট্রাক্টরের সঙ্গে ট্রলি বেঁধে এবং নম্বরহীন ট্রাকে করে ওই মাটি বহন করা হয়।
মাটির গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ পথচারীর। দিন কয়েক আগে দেগঙ্গার কলসুরে একটি মাটির গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বাইক আরোহী এক মহিলার। প্রতিবাদে দেহ ফেলে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ।
সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজারে। তারপরেই পুলিশ ও প্রশাসন জেলা জুড়ে ধরপাকড় শুরু করে। উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস বলেন, ‘‘কৃষিজমির উপরের অংশটি (টপ সয়েল) উর্বর। মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। উর্বরতা ফিরতে বহু দিন সময় লেগে যায়। ১ সেন্টিমিটার মাটি তৈরি হতে এক হাজার বছর সময় লাগে।’’
সহ প্রতিবেদন: অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy