Advertisement
E-Paper

ভোটে যুযুধান দুই ছেলে, স্নেহের ভাঙন রুখতে ভোটই দেবেন না মা

মা কোন দিকে? বড় ছেলে অসীম ও মেজো ছেলে অমিত— একে অন্যের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন পুরভোটের ময়দানে। যুযুধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের হয়ে মনোনয়ন দিয়েছেন তাঁরা। মাঝখান থেকে ফাঁপরে পড়েছেন মা গীতারানিদেবী। যৌথ পরিবারের গৃহকর্ত্রী মায়ের চোখে দুই ছেলের কেউই ফেলনা নয়। তাই কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে দোলাচলে তিনি।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০১:১৪
সহাবস্থান। বনগাঁর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সহাবস্থান। বনগাঁর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মা কোন দিকে?

বড় ছেলে অসীম ও মেজো ছেলে অমিত— একে অন্যের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন পুরভোটের ময়দানে। যুযুধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের হয়ে মনোনয়ন দিয়েছেন তাঁরা। মাঝখান থেকে ফাঁপরে পড়েছেন মা গীতারানিদেবী। যৌথ পরিবারের গৃহকর্ত্রী মায়ের চোখে দুই ছেলের কেউই ফেলনা নয়। তাই কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে দোলাচলে তিনি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছেন, এ বার ভোটই দেবেন না। কারণ যাঁকেই ভোট দেবেন, অন্য জনের হয়ে মায়ের মনে অস্বস্তি থেকেই যাবে! গীতারানিদেবীর কথায়, “দুই ছেলেই আমার প্রিয়। কাউকে অসন্তুষ্ট করব না। ভোটই দেব না ভেবেছি।”

এই ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার দত্তবাড়ির বড় ছেলে অসীম দত্ত। ওই ওয়ার্ডে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাড়ির মেজো ছেলে বছর পঁয়তাল্লিশের অমিত দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের হয়ে। অসীমবাবুরা পাঁচ ভাই, এক বোন। বাবা গোপালবাবুর মৃত্যুর পরে মা গীতারানিই সংসার আগলে রেখেছেন। পরিবারের হাঁড়ি এখনও আলাদা হয়নি। হাল আমলে এত বড় পরিবার খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু সেই পরিবারেই এ বার রাজনীতির দুই ভিন্ন মেরুর হাওয়া বইছে। তবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা একেবারেই নেই পরিবারের বাকিদের মধ্যে। গীতারানিদেবী বললেন, “ছেলেদের বলে দিয়েছি, “রাজনীতি যা হবে বাড়ির বাইরে। বাড়িতে ও সব নিয়ে কোনও আলোচনা নয়।”

মায়ের সে কথা মেনেও নিয়েছেন দুই ভাই। পরিবারের বাকিদের মধ্যেও রাজনীতির তরজা চোখে পড়ল না। রবিবার সকালে দত্তবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের সদস্যেরা দিব্যি ছুটির মেজাজে। বাড়িতে এ দিন দেখা গেল, অসীমবাবুর স্ত্রী রিঙ্কু ও অমিতবাবুর স্ত্রী সোমাদেবী ঘরের মেঝেয় বসে সব্জি কাটছিলেন। বললেন, “বাড়িতে রাজনীতি নিয়ে অলোচনা করি না। সকলে মিলে রোজকার মতো কাজকর্ম করছি।”

বাড়িতে ছিলেন না অসীম-অমিত— কেউই। প্রচারে বেরিয়েছিলেন। ফোন করতে বাড়িতে ফিরলেন অসীমবাবু। দাদার ফোন পেয়েই কিছু ক্ষণ পরে বাড়িতে এলেন অমিতও। দু’জনেই ইতিহাসে এমএ করেছেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন। অসীমবাবু প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। অমিতবাবু হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক।

দীর্ঘ দিন ধরেই অসীমবাবু কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে পড়াকালীন তিনি রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বর্তমানে জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) সাধারণ সম্পাদক। এক কথায়, বনগাঁর কংগ্রেস রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই এ বার তিনি প্রার্থী হয়েছেন। জানালেন, ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে শুরু করছেন প্রচার। ওয়ার্ডের বহু মানুষ কর্মসূত্রে ভোরে উঠে ট্রেন ধরতে বাড়ি থেকে বেরোন। অসীমবাবু তাঁদের রাস্তাতেই দেখা করে বলছেন, “এখন সময় নষ্ট করব না। রাতে বাড়ি যাব।”

অসীমবাবু এ বারই প্রথম দাঁড়িয়েছেন ভোটে। বাড়ির সদস্যদের কাছে ভোট চাইবেন না? অসীমবাবুর জবাব, “অবশ্যই চাইব। তবে একা একা নয়। দস্তুর মতো প্রচারে বেরিয়ে, দলের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে মা এবং বাড়ির অন্যদের কাছে ভোট চাইব।” মুখে হাসির ঝিলিক খেলিয়ে বললেন, “ভাই অমিতের কাছেও আবেদন করব, ওয়ার্ডের উন্নতির স্বার্থে আমাকেই ভোট দিতে।”

অমিতবাবু ও তাঁর ভাই দেবব্রত দু’জনেই সিপিএমের পার্টি-সদস্য। দাদা অমিতের সঙ্গে প্রচারে দেখা যাচ্ছে দেবব্রতবাবুকেও। ১৯৯০ সালে অমিতবাবু সিপিএমের পার্টির সদস্যপদ পেয়েছিলেন। অমিতবাবু তখন নেহাতই ছেলেমানুষ। জানালেন, হাফপ্যান্ট পড়া অবস্থা থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসএফআই-ডিওয়াইএফের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন।

প্রচারের ফাঁকে বাড়িতে ফিরে বললেন, “দল হিসাবে হয় তো সিপিএম এখানে একটু পিছিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু প্রার্থী হিসাবে আমি সকলের কাছে বেশি জনপ্রিয়। অতীতেও এখানকার মানুষ আমাকে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সুযোগ হয়নি। এ বার দাঁড়িয়ে পড়লাম।” পরিবারের লোকজনের কাছে ভোট চাইবেন? অমিতবাবুর কথায়, “আলাদা করে আর তার দরকার নেই। আমার ধারণা, পরিস্থিতি আমার অনুকূলেই।” তবে প্রচারে বেরিয়ে দু’জনেই এটা মাথায় রাখছেন, লড়াইটা রাজনৈতিক মতাদর্শের। একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সমালোচনার কথা ভুলেও মুখে আনছেন না। দু’জনেরই মত, “রাজনীতি তো বৃহত্তর জগতের বিষয়। পরিবারের মধ্যে সে সব যেন না ঢোকে।” দুই ছেলের মধ্যে কাউকে ভোট দিয়ে নিজের কাছে নিজের অস্বস্তি বাড়াতে চান না গীতারানি। তবে চান কাউন্সিলরের শিরোপা যেন দত্তবাড়িরই কেউ পায়।

এই পরিস্থিতিতে দত্ত বাড়ির দুই ছেলের বলার জো থাকছে না, ‘মেরে পাস মা হ্যায়!’

southbengal simantra maitra bangaon Amit Dutta Ashim Dutta CPM Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy