চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি) উপলক্ষে বাংলাদেশের বেনাপোল এবং এ দেশের পেট্রাপোল সীমান্তের ‘নো ম্যানন্স ল্যান্ডে’ যৌথ ভাষা উৎসবের আয়োজন ঘিরে কোথাও কোনও তৎপরতা নেই। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জেরে আদৌ উৎসব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অথচ, প্রতি বছর ওই উৎসবের জন্য জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই দু’দেশের মধ্যে তৎপরতা চোখে পড়ত। দফায় দফায় বৈঠক হত। এ দেশের তরফে একসঙ্গে আয়োজন করত বনগাঁ পুরসভা, ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু এ বার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা কেউ তাঁদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ ঘোষ। আলাদা ভাবে অনুষ্ঠান করার তোড়জোড় শুরু করেছে ওই পঞ্চায়েত সমিতি এবং পুরসভা।
প্রতি বছর বনগাঁর যে সব সাধারণ মানুষ উৎসবে শামিল হতেন, তাঁদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আর ভাষা-উৎসব বা তার আবেগকে গুরুত্ব দেবেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বাড়ি যে ভাবে ভাঙা হয়েছে, যে হারে অশান্তি চলছে, তাতে উৎসব হবে না বলেই তাঁরা ধরে নিয়েছেন। একইসঙ্গে হতাশাও প্রকাশ করেছেন।
বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে আমরা এ বার ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু'দেশের যৌথ উৎসবে থাকছি না। আমরা বনগাঁ শহরে নিজেদের মতো করে উৎসব পালন করব। পুরসভার পক্ষ থেকে স্থায়ী ভাবে ভাষা-শহিদদের স্মরণে শহিদ বেদি তৈরি করা হচ্ছে।’’
বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বিএসএফের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে আমরা পেট্রাপোল এলাকায় পঞ্চায়েতের থেকে আলাদা অনুষ্ঠান করব। নো ম্যানন্স ল্যান্ডে যৌথ উৎসব এ বার না হওয়ার সম্ভাবনা।’’
অনেক বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি কিছুক্ষণের জন্য দু’দেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হত। দু'দেশের ভাষাপ্রেমীরা অবাধে যাতায়াত করতেন। ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যৌথ অনুষ্ঠান-মঞ্চ হত। দু'দেশের শিল্পীরা সেখানে অনুষ্ঠান করতেন। মঞ্চে দু'দেশের অতিথিরাও থাকতেন। নিরাপত্তার কারণে কয়েক বছর আগেই মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান বাতিল হয়। তবে, ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু'দেশের অতিথি এবং বিশিষ্টদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বাংলাদেশের ভাষা-শহিদদের স্মরণে অস্থায়ী শহিদ বেদিতে মালা দেওয়া হত। চলত মিষ্টি-ফুল বিনিময়, পরস্পরকে আলিঙ্গনও। ভাষা এবং দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা হত। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ গত বছর পর্যন্ত উৎসবে শামিল হয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)