তখন চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট বাঁচাতে মুখে কুলুপ নেতাদের। নিয়মের বালাই নেই পানিহাটি পুরসভায়। বছরভর চলে জল-যুদ্ধ। অথচ আঙুল উঠছে ২৪৬ কোটি টাকায় তৈরি জলপ্রকল্পে। এমনটাই অভিযোগ বিরক্ত কেএমডিএ আধিকারিকদের।
জেএনএনইউআরএম-এর টাকায় তৈরি এই প্রকল্পের শর্ত ছিল, জল সরবরাহ শুরুর পরে বন্ধ করতে হবে মাটির নীচ থেকে জল তোলা। এক বছরেরও বেশি শুরু হয়েছে জল সরবরাহ। কিন্তু মাটির নীচের জল তোলা বন্ধ দূরস্থান, কিছু জায়গায় নতুন করে বোরিং হয়েছে।
কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, পুরকর্তা এবং বিধায়ক সকলের কাছে অনুরোধ ছিল, অন্তত এক দিন সমস্ত পাম্প বন্ধ রাখুক পুরসভা। শুধুমাত্র প্রকল্পের জল ছাড়া হোক বাসিন্দাদের কাছে। তাতে পানিহাটির বাসিন্দারা প্রকল্পের জল কতটা পাচ্ছেন তা স্পষ্ট হবে। সেটুকুও পদক্ষেপ করতে চায় না পুরসভা। পানিহাটি পুরসভার এক কর্তা বলছেন, এক বেলা জল না পেলে মানুষের বিক্ষোভ সামাল দেবে কে?
কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, জলপ্রকল্পে একটা সমস্যা হয়েছিল পুজোর আগে। প্রকল্পের দু’টি ইউনিট, সিটিএস-১ এবং ২। সেন্ট্রাল বিয়ারিং নষ্ট হয়ে সিটিএস-১ বসে যাওয়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পুর এলাকায় জল সরবরাহ হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সমস্যা মিটে গিয়েছে।
কী এই সেন্ট্রাল বিয়ারিং? গঙ্গা থেকে তুলে আনা জলে প্রাথমিক শোধন পর্বে ফিটকিরি ও ক্লোরিন গ্যাস চালানো হয়। এই দুই রাসায়নিকের সাহায্যে জলের কঠিন বস্তুকে থিতিয়ে তা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কেটে বাদ দেওয়া হয়। কেটে বাদ দেওয়ার কাজটি করে একটি ঘুর্ণায়মান ব্রিজ। ব্রিজকে ঘোরায় সেন্ট্রাল বিয়ারিং। সেই যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় শোধনপর্বটি হচ্ছিল না। কিন্তু পানিহাটির জলসঙ্কট তো বছরভর! শীত-গ্রীষ্ম জুড়ে পুরসভার জলের গাড়ি ছোটে বিভিন্ন এলাকায়। সঙ্গে রয়েছে মাটির নীচের জলও।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, প্রকল্পে রয়েছে ১৩টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক। ট্যাঙ্ক ও পরিষেবা লাইনের মাঝের ভাল্ভ নিয়ন্ত্রণ করে পুরসভা। মূল সমস্যা সেখানে, জানাচ্ছেন কেএমডিএ-র ওই আধিকারিক। তিনি জানান, ভাল্ভ পুরো খুলে রাখায় ট্যাঙ্কের কাছের বাড়িগুলিতে দোতলা পর্যন্ত সরাসরি জল উঠে যায়। এর ফলে ট্যাঙ্ক থেকে দূরে থাকা বাড়িগুলি জল পাচ্ছে না।
এর সমাধান কী? ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, কলকাতা পুরসভার মতো প্রতি বাড়িতে নিজস্ব জলাধার রাখা উচিত। একতলার উপরে জল তুলতে হলে সেই জলাধারে জমিয়ে রাখা প্রকল্পের জল পাম্প বসিয়ে তোলা উচিত। না হলে যতই প্রকল্প বাড়ানো হোক, সমস্যার কোনও সমাধান নেই।
জলসঙ্কট মেটাতে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার প্রকল্প পরিবর্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খরচ হবে ১১০ কোটি টাকা। মাটির নীচে আরও দু’টি জলাধার ও পাঁচটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি হবে। উপপ্রধান মলয় রায় অভিযোগ মেনে নিয়ে বলছেন, ‘‘কিছু বাসিন্দা অনিয়ম করছেন বলে আমরা শুনছি। কিন্তু আশপাশের মানুষকেও সচেতন থেকে তা পুরসভাকে জানাতে হবে। এরকম কিছু হলে জলের লাইন কেটে দেওয়া হবে।’’ সমাধান প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতার মতো পরিকাঠামো পানিহাটির নেই। তাই সব ক্ষেত্রে অনুকরণ সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy