Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
TMC

WB Municipal Election 2022: দুই পড়শি পুরসভায় সাতটি ওয়ার্ড হাতছাড়া বামেদের

এর বাইরে মধ্যমগ্রামের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব ক’টিতেই জিতেছে তৃণমূল। তৃণমূলের বারাসত সংসদীয় জেলার সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠন না থাকায় বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন। মানুষের আশীর্বাদ ছাড়া এই জয় সম্ভব হত না।’’ অশনিবাবু বারাসত পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৯৭৬ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন।

সহাবস্থান: নির্দল প্রার্থীর জয়ের পরে তাঁর সমর্থকদের হাতে দেখা গেল তৃণমূলের পতাকাও। বুধবার, বারাসতের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সহাবস্থান: নির্দল প্রার্থীর জয়ের পরে তাঁর সমর্থকদের হাতে দেখা গেল তৃণমূলের পতাকাও। বুধবার, বারাসতের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৬:৪২
Share: Save:

থমথমে চোখ-মুখে গণনা কেন্দ্রের বাইরে এসে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন। সেই কান্না খানিক জয়ের আনন্দের, খানিকটা দীর্ঘ উদ্বেগের শেষে স্বস্তিরও বটে।

বারাসত পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই প্রার্থীর নাম চৈতালি ভট্টাচার্য। আদি তৃণমূল চৈতালির স্বামী সজল বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ ছিলেন। দল টিকিট না দেওয়ায় স্ত্রীকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন
সজল। এ দিন তৃণমূল প্রার্থী দোলন বিশ্বাসকে ৩৭৩ ভোটে হারিয়ে দেন চৈতালি। সকাল থেকেই গণনা কেন্দ্র বারাসত সরকারি কলেজের বাইরে উদ্বিগ্ন মুখে পায়চারি করছিলেন নির্দল ওই প্রার্থী। ভিতরে এক মনে স্ত্রীর ভোটের সংখ্যা যোগ করতে দেখা যায় সজলকে।

জয়ের পরে কাঁদতে কাঁদতে চৈতালি বলেন, ‘‘সার্টিফিকেট পরে নেব। আগে ছেলেমেয়েকে দেখতে যাব। এত শাসানি, হুমকি ভোটের পর থেকে পেয়েছি যে, ভয়ে ওদের আত্মীয়দের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ের হৃদ্‌যন্ত্রে
সমস্যা রয়েছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সাড়ে সাত বছরের মেয়ে চাপ নিতে পারছিল না।’’

সেই শাসানির অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বরং দলের তরফে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী তথা বারাসত পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় গণনা কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘সত্যিই যদি ছাপ্পা কিংবা সন্ত্রাস হত, তা হলে বিরোধীরা পাঁচটি আসনে জিততে পারত না।’’ সুনীলবাবু অবশ্য ৩৩৮৯ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন।

গত রবিবার বারাসতে পুর নির্বাচনে প্রায় সব ওয়ার্ডেই বহিরাগতদের দাপাদাপি এবং ব্যাপক ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করেছিল বাম এবং বিজেপি। এ দিন ফল বেরোলে দেখা যায়, বিজেপি একটি আসনও জিততে পারেনি।
অন্য দিকে, গত বার বামেদের জেতা সাতটি আসন এ বার কমে তিনে নেমে এসেছে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই প্রার্থী শুক্লা ঘোষ, ১২ নম্বরে সিপিএম প্রার্থী দুলাল দাস ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী বরুণ ভট্টাচার্য জিতেছেন। কিন্তু বামেদের হাতছাড়া হয়েছে ১০, ১৩, ১৬ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। সিপিএম নেতা দেবব্রত বসুর কথায়, ‘‘চারটি ওয়ার্ড আমরা হারলেও শতাংশের হারে ভোট অনেকটা বেড়েছে। প্রবল লুটপাটের মধ্যেও তিনটি ওয়ার্ড ধরে রাখা গিয়েছে, সেটাই বা কম কী?’’ আবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী নির্দল প্রার্থী, পেশায় হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক শামসুন নাহারের দাবি, তিনি বাম কিংবা তৃণমূল কারও সমর্থন ছাড়াই মানুষের ভোটে জিতেছেন। এই পাঁচ বিরোধী ছাড়া বারাসত পুরসভার বাকি সব ওয়ার্ডই জিতে নিয়েছে তৃণমূল।

অন্য দিকে মধ্যমগ্রাম পুরসভাতেও সাত থেকে চারে নেমে গিয়েছে বামেদের আসন। সেখানকার ১১ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড জিতেছে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড দু’টি জিতেছে সিপিএম। বামেদের হাতছাড়া হয়েছে ৫, ৯, ২২ নম্বর ওয়ার্ড।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ খান বলেন, ‘‘ভোট লুট না হলে আরও বেশি ওয়ার্ডে জিততাম। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা লড়াই দিয়েছিলাম। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এজেন্টদের মেরে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়। এটা কি ভোট হয়েছে?’’

এর বাইরে মধ্যমগ্রামের ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব ক’টিতেই জিতেছে তৃণমূল। তৃণমূলের বারাসত সংসদীয় জেলার সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠন না থাকায় বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন। মানুষের আশীর্বাদ ছাড়া এই জয় সম্ভব হত না।’’ অশনিবাবু বারাসত পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৯৭৬ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE