Advertisement
১০ মে ২০২৪
Sagar Island

সাগরমেলার প্রস্তুতি শুরু, দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন

পরিবেশবিদদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে লক্ষাধিক পুণ্যার্থী সমুদ্র তটে স্নান করেন। পুজো দেন। পুজোর ফুল-মালার প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলে ছেয়ে যায় উপকূল।

ভরাট: নতুন করে মাটি দিয়ে পাড় বাধানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

ভরাট: নতুন করে মাটি দিয়ে পাড় বাধানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল
গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪৮
Share: Save:

প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর মেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন। একই সঙ্গে বাড়ে প্লাস্টিক দূষণ। সমুদ্রের জলে নানা রকম বর্জ্য ফেলায় ক্ষতি হয় জলজ বাস্তুতন্ত্রের। এ নিয়ে বার বারই সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। অভিযোগ, মেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে প্রশাসনের নজর থাকলেও ব্রাত্যই থেকে যায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ।

পরিবেশবিদদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে লক্ষাধিক পুণ্যার্থী সমুদ্র তটে স্নান করেন। পুজো দেন। পুজোর ফুল-মালার প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলে ছেয়ে যায় উপকূল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সৈকতে বালি-মাটি চাপা পড়ে যায়। পরে তা ভেসে যায় নদীতে। ভেসেল আসার সময়ে পুণ্যার্থীরা গঙ্গাকে প্রণাম জানিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট নদীতে ফেলেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনও নজরদারি থাকে না বলে অভিযোগ।

মেলা চলাকালীন যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করেন অনেকে। এর থেকে দূষণ ও নানা রোগ ছড়ায়।

এ বছর করোনার প্রকোপ না থাকায় সাগর মেলায় ১০ লক্ষেরও বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা দূষণমুক্ত রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে।

এ বছর মেলা চত্বরে স্থায়ী শৌচালয় থাকছে ২৫০০টি। অস্থায়ী শৌচালয় থাকছে ৩৫০০টি। যদিও এত সংখ্যক পুণ্যার্থীর জন্য তা পর্যাপ্ত কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কাকদ্বীপ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে খবর, মেলার ক’দিন প্রায় ৪০ লক্ষ জলের পাউচ বিলি করা হবে। পাউচ তৈরির জন্য চারটি মোবাইল ওয়াটার মেশিন থাকবে। ওয়াটার ট্যাঙ্ক থাকবে ৩১৫টি। যদিও প্রতিবছরই মেলা শেষে দেখা যায় যত্রতত্র জলের পাউচ পড়ে থাকছে। এর থেকেও প্লাস্টিক দূষণের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা চত্বর প্লাস্টিকমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ জন্য যৌথ ভাবে কাজ করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, জেলা প্রশাসন ও জিবিডিএ। এ বছর মেলায় পরিবেশবান্ধব ১৬ লক্ষ ব্যাগ বিলি করা হবে। বসানো হবে বর্জ্য নিষ্কাশন যন্ত্র। সাগর ব্লক প্রশাসনের তরফে মেলা চত্বর সাফ রাখার জন্য ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ করা হবে। আবর্জনা নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা থাকবে। বসানো হবে ৪০০০ ডাস্টবিন। মেলা চত্বরের দোকানগুলি থেকেও পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, পাটের ব্যাগে প্রসাদ বিতরণের জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে প্রশাসন। পর্যটকেরা যাতে প্লাস্টিকের জলের বোতল যেখানে সেখানে না ফেলেন, সে জন্য মাইকে বিভিন্ন ভাষায় প্রচার চলবে। সমুদ্র দূষণ রুখতে কপিলমুনি আশ্রমের সামনে সৈকতের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে ফ্লোটিং বুম। সঙ্গে থাকবে জাল। এই ভাসমান বুম জলের উপরিতল থেকে জালকে ভাসিয়ে রেখে সাগরে ভেসে যাওয়া আবর্জনা আটকাবে।

পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতি বছরই প্রশাসন দূষণ রুখতে নানা পদক্ষেপের কথা বলে। যদিও মেলা শেষে দেখা যায়, দূষণ বেড়েই চলেছে। সমুদ্র সৈকতে আবর্জনা বালি মাটির নীচে জমে থাকছে। প্রশাসনকে আরও বেশি সংখ্যক শৌচালয় বানাতে হবে। প্লাস্টিক বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। শুধু মেলা চত্বর নয়, কলকাতার বাবুঘাট থেকে সাগর পর্যন্ত এই নিয়ম চালু করা উচিত।’’

এ বিষয়ে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘মেলা চত্বর ও গোটা সাগরদ্বীপ এলাকায় ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কেউ ব্যবহার করলে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। মেলায় চারটি বর্জ্য নিষ্কাশন যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিলি করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagar Island Ganga Sagar Mela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE