Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Clay Artist

বরাত নেই, কর্মহীন বনগাঁর কুমোরপাড়া

নোটবন্দি ও জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প কারখানাগুলির। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের ক্রমশ দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে। কেমন আছে জেলার ছোট শিল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা    শ্রমিক-মালিকের জীবন। খোঁজ নিল আনন্দবাজার মৃৎশিল্পীরা জানালেন, বছরের এই সময়ে নানা দেবদেবীর মূর্তির চাহিদা থাকে। চৈত্র মাসে অন্নপূর্ণা, বাসন্তী শীতলা পুজো হয়।

দুশ্চিন্তা: ভবিষ্যতের কথা ভেবে কপালে ভাঁজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দুশ্চিন্তা: ভবিষ্যতের কথা ভেবে কপালে ভাঁজ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

লকডাউনের জেরে অন্ধকার নেমে এসেছে বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙার পটুয়াপাড়ায়। প্রতিমার বায়না দিয়েও নেননি পুজো উদ্যোক্তারা। টাকাও পাননি শিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীরা জানালেন, বছরের এই সময়ে নানা দেবদেবীর মূর্তির চাহিদা থাকে। চৈত্র মাসে অন্নপূর্ণা, বাসন্তী শীতলা পুজো হয়। পাশাপাশি বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে লক্ষ্মী ও গণেশমূর্তিও ভাল বিক্রি হয়। শীতলা পুজো অবশ্য চৈত্র-বৈশাখের পড়েও হয়। এ সময়ে শীতলাপ্রতিমাও তৈরি করেন শিল্পীরা।

কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা।

বনগাঁ শহরের প্রতিমা শিল্পী স্বপন ভট্টাচার্যের কাছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে বায়না আসে। গত কয়েক মাস ধরে রীতিমতো ব্যস্ত ছিলেন বাসন্তী, শীতলা, রাধাকৃষ্ণ-সহ নানা প্রতিমা গড়ার কাজে। নিজের শিমুলতলা এলাকার বাড়িতে ধারদেনা করে কর্মী রেখে কাজ চালাচ্ছিলেন। ছন্দপতন ঘটল বাসন্তী পুজোর ঠিক আগে। লকডাউন শুরু হওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে স্বপনের। একের পর এক প্রতিমার বায়না বাতিল হয়ে যায়। যে সব প্রতিমা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা-ও নেননি পুজো উদ্যোক্তারা।

স্বপন বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার প্রতিমা বাড়িতে পড়ে আছে। কী ভাবে এই ক্ষতি পূরণ করব জানি না।’’ হাবড়ার এক প্রতিমা শিল্পীর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু টাকা আমরা অগ্রিম পাই। বাকি টাকা প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেন উদ্যোক্তারা। অনেকে আবার প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পরেও টাকা শোধ করেন। সারা বছরের সম্পর্ক। এ ভাবেই আমাদের কাজ করতে হয়। প্রতিমা বায়না দেওয়ার সময়ে পুরো টাকা চাইলে অনেকে বায়না বাতিল করে দিতে পারেন।’’ প্রতিমার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বকেয়া টাকা কিছুই আর হাতে আসছে না বলে জানালেন ওই শিল্পী।

শিল্পীরা আরও জানালেন, বায়নার টাকায় ঠাকুর গড়ার খরচ পোষানো সম্ভব নয়। তাই ধারদেনা করতে হয়। তা কী ভাবে শোধ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই।

এ বার নববর্ষের উদযাপনও সে ভাবে হল না। ফলে তৈরি করে রাখা সব মূর্তি শিল্পীদের ঘরেই পড়ে রয়েছে। কোনও প্রতিমার শুধু রঙ করা বাকি। কোনও প্রতিমার সাজপোশাক বাকি। কোনও প্রতিমা আবার সম্পূর্ণ তৈরি হয়েই পড়ে আছে। হাতে টাকা আসেনি। এখন ধারের টাকা কী ভাবে শোধ করবেন তা ভেবেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে শিল্পীদের।

বনগাঁর প্রতিমা শিল্পী লক্ষ্মণ পাল বলেন, ‘‘গত বছর বাসন্তী প্রতিমার বায়না ছিল ৫টি। এ বার ছিল ১২টি। শীতলা, কালী, গণেশ প্রতিমার বায়নাও ভাল ছিল। ধারদেনা করে তাই প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করেছিলাম। ভাল আয়ের আশায় ছিলাম। কিন্তু লকডাউনে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।’’ শিল্পীরা জানালেন, বৈশাখ মাস থেকে দুর্গা প্রতিমার বায়নাও আসতে শুরু করে। এ বার তা বন্ধ। আর্থিক ক্ষতি সামলে শিল্পীরা দুর্গা প্রতিমাই-বা কী ভাবে গড়বেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় তাঁরা। পুজো আদৌ হবে কিনা, হলেও তার বাজেট কেমন হবে, এই সব নিয়ে উদ্বিগ্ন মৃৎশিল্পীরা। এক শিল্পীর কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্য না পেলে শিল্পটাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।’’ প্রতিমা শিল্পীদের পাশাপাশি তাঁদের সহযোগীরাও কাজ হারিয়ে অথৈজলে পড়েছেন। নিজেরাই দেনায় জর্জরিত। এ অবস্থায় সহযোগীদের জন্য তাঁরা প্রায় কিছুই করতে পারছেন না। হাবড়া অশোকনগরের মৃৎশিল্পীরা প্রশাসনের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Clay Artist West Bengal Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE