Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Municipal Election 2022

West Bengal Municipal Election 2022: ভোট দিয়েই ছেলের মৃত্যুর জবাব দিতে চান প্রত্যয়ী মা

রফিকের পরিজনেরা জানালেন, সে বার ভোটের দিন সকাল থেকেই অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল। একটি বাগানবাড়িতে ভোট উপলক্ষে মাংস-ভাতের আয়োজন করেছিলেন পাড়ার ‘দাদারা’।

পুরভোটের দুপুরে মধ্যমগ্রামের বাড়িতে রফিক আলির প্রৌঢ় বাবা-মা।

পুরভোটের দুপুরে মধ্যমগ্রামের বাড়িতে রফিক আলির প্রৌঢ় বাবা-মা। ছবি— সুদীপ ঘোষ

চন্দন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৪
Share: Save:

ভগ্নপ্রায় একচিলতে ঘর। চাল এতটাই নিচু যে, তা প্রায় মাটি ছুঁইছুঁই। ঘরের বারান্দায় বসে সেলাই মেশিন চালাচ্ছেন এক মহিলা। সামনে ফাঁকা উঠোনটাই রান্নাঘর। পাতলা ছাউনির নীচে হাঁড়িতে রান্না বসেছে। বাকি চার পাশ খোলা। পুরভোটের উত্তাপ গোটা এলাকায় বোঝা গেলেও তার রেশ পড়েনি মধ্যমগ্রাম পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের দিগবেড়িয়ার এই বাড়িতে। বারান্দায় বসে বছর ষাটের এক প্রৌঢ়া চোখের জল মুছতে মুছতে বলে চলেছেন, ‘‘এই ভোটই তো আমার রফিককে কেড়ে নিয়েছিল। ও তো সবার মতো ভোটের দুপুরে মাংস-ভাত খেতে গিয়েছিল। কী করে জানবে, ওখানে বোমা রাখা আছে?’’

সাত বছর আগে, ২০১৫ সালের শেষ পুরভোটে মধ্যমগ্রাম পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের দিগবেড়িয়ার নদীবাঁধ এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল ভোটের দিন। আহত হন পাঁচ জন। চার জন সুস্থ হয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে এলেও ফেরা হয়নি বছর ৩০-এর রফিক আলির। ঘটনার ১২ দিনের মাথায়, সেখানেই মারা যান তিনি।

রফিকের পরিজনেরা জানালেন, সে বার ভোটের দিন সকাল থেকেই অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছিল। একটি বাগানবাড়িতে ভোট উপলক্ষে মাংস-ভাতের আয়োজন করেছিলেন পাড়ার ‘দাদারা’। সেই মাংস-ভাত খেতে গিয়েছিলেন রফিক। তার পরেই ওই ঘটনা। রফিকের দাদা ইউনিস আলি বললেন, ‘‘আমরা গরিব। মাংস-ভাত তো রোজ জোটে না। খাওয়ার লোভেই ভাই সে দিন ওখানে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে যে একটি বস্তায় বোমা রাখা আছে, বুঝতে পারেনি। অজানতেই পা দিয়ে দেয়।’’ ইউনিস জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় রফিকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও লোক ছিল না। বহু ক্ষণ পরে সকলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এখন রফিকদের ২২ জনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। রফিকের পাঁচ দাদা দিনমজুরের কাজ করেন। তবে রোজ কাজ জোটে না। রফিকের বাবা শের আলি বলেন, ‘‘ছেলে মারা যাওয়ার মাস দুয়েক পরে এলাকার কয়েক জন সাংসদের অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওঁরাই রফিকের স্ত্রীর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। ভেবেছিলাম, সংসারের হিল্লে হল। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই বৌমা ওর মা-বাবার কাছে চলে যায়। তার পর থেকে কোনও যোগাযোগ নেই।’’ এর পরে বেশ কয়েকটি ভোট গিয়েছে। যদিও তাঁদের দিকে আর কেউ ফিরে তাকাননি বলেই রফিকের পরিবারের দাবি। এমনকি, প্রচারেও অনেক প্রার্থী এড়িয়ে গিয়েছেন রফিকদের বাড়ি।

তবে এ দিন সকাল থেকে রফিকের বাড়িতে ভোট দিতে যাওয়ার ডাক এসেছে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে। সকালে পরিবারের কয়েক জন বুথমুখী হলেও দুপুর পর্যন্ত সে দিকে যাননি রফিকের প্রৌঢ় মা-বাবা। তবে রফিকের মা দৃঢ় স্বরে জানালেন, ভোট না দিয়ে নষ্ট করবেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভোটের জন্য আমার রফিক চলে গেল, যত দিন পর্যন্ত বাঁচব, ভোট দিয়েই তার জবাব দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Municipal Election 2022 TMC BJP CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE