E-Paper

‘ভাল রাস্তাঘাট কত দিন চোখে দেখিনি’

ওঁরা সকলে নতুন প্রজন্মের ভোটার। কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছেন। পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বহু আকাঙ্ক্ষা ওঁদের। গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান নিয়েও স্বপ্ন দেখেন।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৪
হিঙ্গলগঞ্জের তরুণদের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কথা। নিজস্ব চিত্র 

হিঙ্গলগঞ্জের তরুণদের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কথা। নিজস্ব চিত্র 

রূপব্রত ঘোষ: আকাশ তো এ বার প্রথম ভোট দেবে পঞ্চায়েতে। কেমন লাগছে?

আকাশ ঘোষ: জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রথম অংশ নেব। উৎসাহ তো আছেই। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার যে মূল রাস্তা, বায়লানি থেকে হাসনাবাদ যাওয়ার এই রাস্তা ছোট থেকে দেখছি বেহাল। কখনওই সম্পূর্ণ ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তাটা ভাল দেখলাম না। মাঝে মধ্যে ভোট এলে একটু জোড়াতালি দেয়। তারপর আবার খারাপ হয়ে যায়। এখন যা অবস্থা হয়েছে, বাইকে বা গাড়িতে করে টাকি কলেজে ভর্তি হলে কী ভাবে যাতায়াত করব, তাই ভাবছি। সামনে ভোট, এখন আবার শুনছি কাজ শুরু হবে রাস্তার। ভোটের আগে সম্পূর্ণ রাস্তাটা নতুন করে করা দরকার।

অনুপম ঘোষ: শুধু কী এই রাস্তা! গুরুত্বপূর্ণ খেয়াঘাট বিশপুর ও মামুদপুর খেয়াঘাট। দুই গ্রামের মাঝে গৌড়েশ্বর নদীতে ভোট এলেই সেতু তৈরির জন্য পরিদর্শনে আসেন সরকারি কর্মীরা। কাজের কাজ এখনও কিছুই হল না। এ বারও পরিদর্শনে এসেছিলেন ওঁরা। এই নদীতে সেতু হলে দ্রুত হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে যাতায়াত করতে পারব। এখন খুব সমস্যা হয় নদী পার হয়ে কলেজে যেতে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। সাইকেল বা বাইক নৌকোয় তুলে নদী পেরোতে সমস্যা হয়।

সোমা গিরি: গোটা পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে বিভিন্ন রাস্তা বেহাল। বিশেষ করে গোটা দুর্গাপুর গ্রাম জুড়ে যত রাস্তা আছে— সব খারাপ। স্থানীয় পঞ্চায়েত বিগত দিনে রাস্তাঘাট নিয়ে বিশেষ কাজ করেছে বলে মনে হয় না। বেশিরভাগ রাস্তায় সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার নামে। রাত হলে যাতায়াতের সমস্যা হয়। মহিলা হিসেবে ভয় করে আরও বেশি। যারাই আগামী দিনে পঞ্চায়েত পরিচালনা করুক, এই সমস্যাগুলো সমাধান করা খুব জরুরি। গ্রাম থেকে থানা প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূর। বহু বছর আগে গ্রামে একটা পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। এখন আর নেই। আবার গ্রামে পুলিশ ফাঁড়ি চালু হওয়া খুব দরকার।

সোমনাথ মণ্ডল: এ সব পরিকাঠামোর সমস্যা তো আছেই। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান কিছুই নেই গ্রামে। একশো দিনের কাজ তো বন্ধই হয়ে গেল। তা হলে আমরা যারা কলেজে পড়ছি, তারা কি গ্রামে ফিরে বাড়ি বসে থাকব? গ্রামে কাজ কই!সরকারি চাকরি পাওয়া তো ঈশ্বরের দেখা পাওয়ার সমান হয়ে গিয়েছে।

রূপব্রত: গ্রামে কর্মসংস্থানের অবস্থা সত্যিই খারাপ। আমরা যাঁরা ২০২২ সালের টেট পাশ করলাম, জানি না কবে চাকরি মিলবে। সরকারি চাকরি মিলবে আদৌ মিলবে কি না জানি না। এ ছাড়া, এমএসসি, বিএড করেও এসএসসিতে এখনও একবার বসতে পারলাম না। ২০১৬ সালের পরে তো আর এসএসসি পরীক্ষা হলই না। গ্রামে দু’এক বছর আগেও বিপুল পরিমাণে চিংড়ি চাষ হত।অনেকে মাসে ৮-১০ হাজার টাকার বেতনের পেতেন সেখানে কাজ করে। অনেকে বিভিন্ন ভাবে উপার্জনের সুযোগ পেতেন। গত এক বছর হল চিংড়ি চাষের অবস্থাও খারাপ। বেশিরভাগ মালিক চাষ করছেন না। অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছেন শ্রমিকের কাজ নিয়ে।

সোমা: চিংড়ি চাষ না হওয়ায় কর্মসংস্থানের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, পাশাপাশি কয়েকশো বিঘা চাষের জমি পতিত পড়ে রয়েছে। যেখানে আগে ধান চাষ হত। লাভের আশায় সেই সব জমির মালিক চিংড়ি চাষ করতে লিজ় দিয়েছিলেন। তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। সেই সব জমিতে এখন না হচ্ছে চিংড়ি চাষ, না হচ্ছে ধানের ফলন। জমির উপরে যাঁদের সংসার চলে, তাঁরা খুবই সমস্যায় আছেন।

অনুপম: গ্রামের সব বাড়িতে পানীয় জলের পাইপলাইন এখনও এল না। পঞ্চায়েত এলাকার অনেক পাড়ায় গরম পড়তেই পানীয় জলের সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে। এই সুযোগে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে উঠেছে অবৈধ পানীয় জলের কারবার।

সোমনাথ: গ্রামে আজও একটা পার্ক হল না। কত সুন্দর সুন্দর জায়গায় রয়েছে পার্ক তৈরি করার। অনুষ্ঠান মঞ্চ বা কমিউনিটি হল আশপাশের অনেক পঞ্চায়েত এলাকায় থাকলেও আমাদের এখানে নেই।

রূপব্রত: গ্রামে একমাত্র বড় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বিশপুর হাইস্কুল। সেই স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। উচ্চ মাধ্যমিকের কোনও শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক স্তরেও বহু পদ শূন্য। এলাকায় পড়াশোনার মান ক্রমশ কমছে শিক্ষকের অভাবে।

সোমা: বায়লানি বাজার বড় বাজার। বহু মানুষ আসেন। অথচ মাছ, মাংস বা আনাজ বাজার খুব অগোছালো, এলোমেলো। কোনও স্থায়ী কাঠামো নেই। বর্ষায় সমস্যা হয় কেনাকাটা করতে। বাজারের জন্য একটা স্থায়ী কাঠামো তৈরি হলেও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

অনুপম: স্বাস্থ্য পরিষেবা খুব সমস্যাজনক। রাতে কেউ অসুস্থ হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টাকি হাসপাতালে যেতে হয় অথবা খুলনা হাসপাতালে। রাতেগ্রামে কোনও চিকিৎসা পরিষেবাই মেলে না।

সোমনাথ: ভোট দেওয়ার সময়ে এ সব কথাগুলো নিশ্চয়ই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যারাই ক্ষমতায় আসুক, এ সব দিকে যেন নজর দেয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panchayat Election Hingalganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy