খাওয়াব-যতনে: শ্যামনগরে ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়
ওরা এখন তাঁর বাড়িরই সদস্য। দু’বেলা খাওয়ার সময়ে হাজির হয়। কারও কারও পাকাপাকি নিবাসও ওই বাড়ি।
শ্যামনগরের গুড়দহে নন্দিতা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি এখন ‘কুকুর বাড়ি’ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। বাড়িতে মানুষ মাত্র তিনজন। কিন্তু সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। এক দু’টি গরু আসে, তা ছাড়া কিছু বিড়ালও আছে। আর বাকিরা সকলেই সারমেয়। নিজের পাড়ার কুকুর তো আছেই। তবে পাড়া-বেপাড়ার কুকুরদের জন্য নন্দিতাদেবীর ভাঁড়ার খোলা দিন-রাত। দুধ-ভাত, মাছ-মাংস কোনও কিছুরই খামতি নেই সেখানে। থালা-বাটি, খাওয়ার জায়গা, স্নানের ব্যবস্থা— সবই করেছেন সারমেয় কূলের জন্য। স্বীকৃত ডাক্তার না হলেও এই কুকুর ও অন্য পশু-পাখির চিকিৎসায় অভিজ্ঞ পাড়ারই পরিচিত একজনকে ধরে নিয়মিত প্রতিটি কুকুরের চিকিৎসাও করান নন্দিতাদেবী।
কেন এমন শখ?
নন্দিতাদেবী জানান, কুকুরে বড় আতঙ্ক ছিল এক সময় তাঁর। কিন্তু বছর দশেক আগে পাড়ার একটি কুকুরের অনেকগুলি টিউমার হয়েছিল। বাড়ির সামনেই সারা দিন শুয়ে থাকত কুকুরটি। অপরিচিত কাউকে দেখলে চিৎকার করে সতর্ক করত বাড়ির লোকজনকে। এ ভাবেই দিন দিন মায়া বাড়ে। কুকুরটির চিকিৎসা করাবেন বলে ঠিক করেন নন্দিতা।
আলাপ হয় ব্রজেন মল্লিকের সঙ্গে। কাছেই থাকেন। ডাক্তারি ডিগ্রি নেই। কিন্তু তাঁকে পশু চিকিৎসক হিসেবেই চেনে সকলে। ব্রজেনবাবুই ওই কুকুরটির শরীরে থাকা ৩২টি টিউমার অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন। নিজের সঞ্চয় ভেঙে এগারো হাজার টাকা দেন নন্দিতাদেবী।
তারপরে এক এক করে বেড়েছে পোষ্যের সংখ্যা। তবে শুধু কুকুরদের খাওয়ানো বা স্নান করানোটাই তাঁর লক্ষ্য নয় বলে জানালেন নন্দিতাদেবী। প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন।
শ্যামনগরের এই এলাকায় কুকুরের উৎপাতে অনেকে রাস্তার কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতেন। কিছু কুকুর বাচ্চা গাড়ি চাপা পড়েও মারা যেত ফি বছর। বাকিদের কয়েকটা বিভিন্ন অসুখে অসুস্থ হয়ে রোগ ছড়াত, পাগল হয়ে কামড়েছে লোকজনকে এমন নজিরও আছে।
মূলত এই কুকুরগুলিকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করাটাই নন্দিতাদেবীর প্রাথমিক চেষ্টা ছিল। কিন্তু অসুস্থ কুকুরকে বাড়িতে রাখাও সমস্যার। বাড়ির সামনে পাঁচিল দিয়েছেন যাতে আপাতত সেখানে রেখে শুশ্রূষা করা যায়। এরপর বাড়ির পিছনেও একটি জায়গা ঘিরে কুকুরদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চান তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা, ভাটপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান সোমনাথ তালুকদারকেও জানিয়েছেন নন্দিতাদেবী। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। কী ভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি, তা তাঁকেই বলতে বলেছি।’’
নন্দিতাদেবী বলেন, ‘‘এলাকার সমস্ত কুকুরদের জন্যই আমার ঘরের দরজা খোলা। ডাইনিং হলে বসেও অনেকে পাত পেড়ে খায়। নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে ওদের এবং আমার ঘর পরিষ্কার করি। ওদের রান্না খাওয়ানো, চিকিৎসা এতেই সময় কেটে যায়।’’
নন্দিতাদেবীর শখ মেটানোর পথে উৎসাহ আছে স্বামী গৌতমবাবুরও। তিনি বলেন, ‘‘অনেকগুলি প্রাণকে ও রোজ সেবা করে। তাদের ভালবাসার দাম কম নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy