Advertisement
E-Paper

‘মায়ের কোল যে খালি হবে, মানতে পারিনি’

রেললাইনের কাছে বাড়ি বলে পড়ে যাওয়ার আওয়াজ আগেও শুনেছি। তবে এ দিন খবরটা আমার মেয়ে মুন্নি দিয়েছিল। বাড়িতে টিভি দেখছিলাম মেয়ে এসে বলল ট্রেন থেকে একজন পড়ে গিয়েছেন।

বীণা সাধু 

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৪
দুর্ঘটনা: এখান থেকেই মিলেছিল জখম যুবক। দেখাচ্ছেন বীণা।  ছবি: সুজিত দুয়ারি।

দুর্ঘটনা: এখান থেকেই মিলেছিল জখম যুবক। দেখাচ্ছেন বীণা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

রেললাইনের কাছে বাড়ি বলে পড়ে যাওয়ার আওয়াজ আগেও শুনেছি। তবে এ দিন খবরটা আমার মেয়ে মুন্নি দিয়েছিল। বাড়িতে টিভি দেখছিলাম মেয়ে এসে বলল ট্রেন থেকে একজন পড়ে গিয়েছেন।

সিরিয়াল বন্ধ করে ছুটে গেলাম রেল লাইনের পাশে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখলাম, এক যুবক পড়ে আছে। ততক্ষণে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে। একজন ওই যুবকের গায়ে হাত দিয়ে দেখতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, মনে হয় মারা গিয়েছেন। হাত দিও না।

আমার সঙ্গে ছিলেন আমার স্বামী ঝন্টু। তাঁকে বললাম, বাড়ি থেকে টর্চ নিয়ে আসতে। টর্চ জ্বালিয়ে দেখি ছেলেটির মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। শ্বাস পড়ছে। নড়ছে চোখের পাতাও। তখনই বুঝলাম বেঁচে আছেন। মনে মনে ঠিক করলাম, যে ভাবেই হোক ছেলেটিকে বাঁচাতে হবে। কোনও মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে তা মানতে পারছিলাম না।

চোখের সামনে অনেককে আগে ট্রেন থেকে পড়ে মরে যেতে দেখেছি। খুব কষ্টও পেয়েছি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। নিজেকে অসহায় মনে হতো। তাই এ বার যখন সুযোগ পেলাম তখন শেষ চেষ্টা করতে দু’বার ভাবিনি।

চিৎকার করে একটি ভ্যান ডাকতে বললাম। পাশে রাস্তা দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ভ্যানচালক। যাত্রীকে অনুরোধ করে ভ্যান থেকে নামিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু জখম যুবকটিকে ভ্যানে তুলতে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। সকলকে বললাম, আমি একজন মহিলা হয়ে যখন এগিয়ে এসেছি, তখন তোমাদের কোনও ভয় নেই। তখনও অনেকে পুলিশি ঝামেলার কথা বলছিলেন। কেউ কেউ আমাকে সর্তকও করেছিলেন। কিন্তু তখন এইসব কথা গ্রাহ্য করিনি। মনে হয়েছে, পরে বিপদ হলে, হবে। ছেলেটির প্রাণ বাঁচাতেই হবে।

শেষে আমার স্বামী ও আরও দুই যুবক ছেলেটিকে ভ্যানে তুলে দেন। তাঁকে নিয়ে আমরা হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের দিকে রওনা হই।

ওই হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে ডাকলাম। তিনি এসে দ্রুত যুবককে দেখলেন। মাথায় ১২টি সেলাই হল।

যুবককের কাছে থাকা ফোন থেকে বাড়ির নম্বর খুঁজে বার করলাম। এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে যুবকের বাড়ির লোকজনকে দুর্ঘটনার খবর দিই। ততক্ষণে হাসপাতালে আসেন রেল পুলিশের কর্তারা।

যুবকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে আরজিকরে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। যুবকের পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার সকালে আমাকে জানিয়েছেন, এখন ছেলেটি ভাল আছে। ভোর রাতে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তবে এই কাজ করতে পেরে আমি তৃপ্তি পেয়েছি। ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। সাধারণ মানুষের বোঝা উচিত দুর্ঘটনায় আহত কাউকে দেখলে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত। পুলিশি ঝামেলার ভয়ে সবাই পিছিয়ে যান। আমি তো জখম যুবককে হাসাপাতালে নিয়ে গেলাম। আমাকে তো কোনও পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

Train Habra হাবড়া ট্রেন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy