Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ঘুমন্ত তরুণীর গায়ে আগুন, গ্রেফতার স্বামী

দরিদ্র বাবা বিয়েতে জামাইয়ের দাবি মেনেই কানের দুল দিয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু তাতেও মন ওঠেনি জামাইয়ের। এ বার দাবি ছিল, মোটর বাইক। এক বছর সময় চেয়েছিলেন মেয়ের বাবা। কিন্তু জামাইয়ের তর সয়নি। দরকার পড়লে কানের দুল জোড়া বেচেও তার নাকি চাই মোটর বাইক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

দরিদ্র বাবা বিয়েতে জামাইয়ের দাবি মেনেই কানের দুল দিয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু তাতেও মন ওঠেনি জামাইয়ের। এ বার দাবি ছিল, মোটর বাইক। এক বছর সময় চেয়েছিলেন মেয়ের বাবা। কিন্তু জামাইয়ের তর সয়নি। দরকার পড়লে কানের দুল জোড়া বেচেও তার নাকি চাই মোটর বাইক।

এই নিয়েই চলছিল মনোমালিন্য। অশান্তি। অত্যাচার। শেষমেশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বছর আঠারোর তরুণী তুহিনা বিবি। পরিবারের দাবি, মারা যাওয়ার আগে ওই তরুণী জানিয়ে গিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে ঘুমের মধ্যে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায় হাড়োয়ার লতারবাগান এলাকায়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তুহিনার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

এ দিকে, উত্তেজিত জনতা তুহিনার স্বামী জাহাঙ্গির মোল্লার বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। পুলিশ তাঁদের নিরস্ত করতে গেলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের উপরেই চ়ড়াও হয়। লাঠি উঁচিয়ে কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। পরে জাহাঙ্গিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র মাস পাঁচেক আগে হাড়োয়ার খাসবালান্দার তুহিনাকে বিয়ে করেছিল জাহাঙ্গির। প্রেমের সম্পর্ক ছিল দু’জনের। প্রথম দিকে বিয়েতে মত না থাকলেও মেয়ের মুখ চেয়ে মেনে নিয়েছিলেন বাবা রফিকুল মোল্লা। চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। জামাইকে কথা দিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে টুকটুকে নতুন মোটর বাইক দিয়ে জামাইয়ের মন রাখবেন।

কিন্তু কে শোনে কার কথা!

পেশায় দর্জি জাহাঙ্গির, তার বাবা-মা-ভাসুরেরা সদ্য বিবাহিতা মেয়েটির উপরে অত্যাচার শুরু করে বলে অভিযোগ।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত শুক্রবার একই ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জোর অশান্তি হয়। রাত ১২টা নাগাদ পাড়া-পডশিরা জানতে পারেন, তুহিনার গায়ে আগুন লেগেছে। তাঁরাই খবর দেন মেয়েটির বাপের বাড়িতে।

তুহিনার মামা সাজাহান মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা তড়িঘড়ি এসে দেখি, আমাদের মেয়ের শরীর ততক্ষণে বেশির ভাগটাই পুড়ে গিয়েছে। ওকে হাড়োয়া হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকর হাসপাতালে। সে সময়ে তুহিনা জানিয়েছিল, ও ঘরে ঘুমোচ্ছিল। সেই সময়ে ওর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

মেয়ের বাড়ির লোকজন জানান, চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ মেয়েকে বাঁচানো যাবে না। সেই মতো বন্ডে সই করে তুহিনাকে নিয়ে তাঁরা বাড়ি চলে আসেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা নাগাদ মারা যান ওই তরুণী।

এরপরেই মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জাহাঙ্গিরের বাড়িতে হামলা চলে। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ঘরে আগুন দিতে যায়। খবর পেয়ে হাড়োয়া থানা থেকে র‌্যাফ-সহ বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারা লাঠি উচিঁয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

ইতিমধ্যে পিঠটান দেয় জাহাঙ্গির আর তার বাড়ির লোকজন। পরে অবশ্য জাহাঙ্গির ধরা পড়ে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ দিকে, বিকেলের দিকে ফের একপ্রস্থ উত্তেজনা দানা বাঁধে। জনতা দাবি করে, মৃতদেহটি জাহাঙ্গিরের ঘরের মধ্যে কবরস্থ করা হবে। পুলিশ বুঝিয়ে সুঝিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Fire Arrested Husband
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE