Advertisement
E-Paper

মদ বিক্রি বন্ধ করবই, হুঙ্কার মহিলা বাহিনীর

পুলিশের চোখ এড়িয়ে দিনের পর দিন এ ভাবেই মদ বেচছেন টুনটুনি, বিষ্টুরা। এলাকায় এ ভাবে মদ পাওয়া যায়—তা জানেন সবাই। 

অভিযান: মদ বন্ধে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

অভিযান: মদ বন্ধে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৬
Share
Save

৭৫ টাকায় কিনে এলাকায় বিক্রি করা হয় ৯০ টাকায়। বাড়তি টাকা দিলে ‘হোম ডেলিভারি’-র ব্যবস্থাও রয়েছে।

পুলিশের চোখ এড়িয়ে দিনের পর দিন এ ভাবেই মদ বেচছেন টুনটুনি, বিষ্টুরা। এলাকায় এ ভাবে মদ পাওয়া যায়—তা জানেন সবাই।

ক্যানিংয়ের দিঘিরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে অনেকদিন আগে থেকেই। মদ খেয়ে গ্রামের পুরুষেরা মহিলাদের মারধর করেন বলেও অভিযোগ। এমনকী সকালবেলাতেও মদের টাকা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হয় বলে জানান গ্রামের মহিলারা। বেআইনি মদ বিক্রির বিরুদ্ধে বহু জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ মহিলাদের। তাই শেষ পর্যন্ত নিজেরাই ঠেক ভাঙতে উদ্যোগী হন মহিলারা।

রবিবার ক্যানিংয়ের এই দিঘিরপাড় গ্রামের বেশ কয়েকটি পাড়ার মহিলারা মদের ঠেক ভেঙে দেন। বোতল বোতল মদ ফেলে দিয়েছেন রাস্তায়। কোনও রাজনৈতিক দল সঙ্গে নেই। নেই কোনও সংগঠনও। শুধু মদ্যপ স্বামীদের অশান্তি এবং অত্যাচার থেকে বাঁচতে এবং গ্রামকে বাঁচাতেই এক হয়েছেন প্রভাতী নস্কর, উত্তরা সর্দার, অলোকা সর্দার, সবিতা রায়রা। অভিযোগ, গ্রামের মধ্যেই বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি হচ্ছে।

মানুষ সেখান থেকেই মদ কিনে খাচ্ছেন। প্রভাতী বলেন, ‘‘বাড়ির লোক মদ খেয়ে তো আসছেই। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেগুলোও মদ ধরেছে। রাস্তার ধারে, মন্দিরের চাতালে বসে দিনরাত মদ খাওয়া চলছে। পাড়ার ভেতর মদ বিক্রি বন্ধ হলে এই জিনিসটা বন্ধ হবে। সেই চেষ্টাই করছি।’’ অলোকা জানান, ঘরের অশান্তিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। এই ঠেকগুলোই যত নষ্টের গোড়া। এর থেকে বাঁচতে যা করতে হয় করা হবে।

তবে এই ঘটনার পরেও পরিস্থিতি কিছুই পাল্টায়নি। মঙ্গলবারই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সেই পুরনো চিত্র। মদের জন্য কিছু বাড়িতে সেদিনও অশান্তি হচ্ছে। মারধরও চলছে।

এলাকার মহিলারা জানান, এখনও চোরাগোপ্তা ব্যবসা চালাচ্ছে অনেকেই। অভিযুক্ত এরকম একজনের বাড়িতে গিয়ে হাতে নাতে উদ্ধারও হল বেশ কয়েক বোতল মদ। সঙ্গে থাকা মহিলাদের কয়েকজন মিলে ফের নষ্ট করলেন সে সব। বিক্রেতা টুনটুনি সর্দারের সাফাই, ‘‘নিজেদের খাওয়ার জন্য মদ কিনি। কেউ চাইলে দিই। আমি তো আর কাউকে জোর করে মদ বেচছি না।’’ আরও এক বিক্রেতা বিষ্টু সর্দার বাড়িতেও ধরা পড়ল এক ছবি। ব্যবসা করেন স্বীকার করে নিয়েই বিষ্টুর যুক্তি, ‘‘আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। কাজ করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই মদ বেচি।’’

স্থানীয় আবগারি দফতর সূত্র অবশ্য মদ বিক্রির প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। ওই দফতর থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে টুনটুনিকে কয়েক দিন আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে অবশ্য সে জামিন পেয়ে যায়। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১২ লিটার দেশি মদ বাড়িতে রাখতে পারেন। ক্যানিং সার্কেল আবগারি দফতরের আধিকারিক কপিল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা একাধিকবার ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ১২ লিটার পর্যন্ত মদ থাকলে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তবু গ্রামবাসী অভিযোগ করায় দু’জনকে আমরা গ্রেফতার করি। আপাতত তাঁরা জামিনে মুক্ত।’’ তবে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা এই বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

এ দিকে মহিলারা বলছেন, মদ বিক্রি বন্ধ না হলে আবার অভিযান চলবে। তাঁদের কথায়, ‘‘আবার মদ তুললে আবার এসে নষ্ট করে যাব। যতদিন না পুরো বন্ধ করছে, ছাড়ব না।’’ মহিলাদের এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন গ্রামের পুরুষদের একাংশও। স্থানীয় যুবক সত্য সর্দার বলেন, ‘‘গ্রামের মধ্যে যে ভাবে খোলাখুলি মদ বিক্রি এবং মদ খাওয়া চলছে সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’

Determination Hooch Woman Illegal Business

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}