Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিকাশকে দেখে বেড়েছিল ক্ষোভ

লকেটকে যে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে, তাতে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা সামনে এসেছে বলে মনে করছেন সন্দেশখালির মানুষ। যে গ্রামে বৃদ্ধার বাড়ি-হোটেল, তার কাছেই থাকেন বিকাশবাবু।

বিকাশ সিংহ।

বিকাশ সিংহ।

নির্মল বসু
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার ‘সুবিচার’ চাইতে সন্দেশখালির গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে নৌকো থেকে ডাঙাতেই নামতে পারেননি। উল্টে শুনতে হয়েছে, ‘‘ধর্ষণকারী তো ধরা পড়েছে, আপনার পাশে যে নেতা দাঁড়িয়ে, তাঁকে ধরবে কে?’’

যাঁকে উদ্দেশ করে এই মন্তব্য, তিনি বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিকাশ সিংহ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বহু টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিকাশবাবু-সহ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমেছে সিআইডি। ইতিমধ্যে ধরাও পড়েছেন বসিরহাটের এক বিজেপি নেতা। এ হেন বিতর্কিত নেতা, যাঁকে সিআইডিও খুঁজছে, তাঁকে লকেটের পাশে দেখে বৃহস্পতিবার আরও চটে যান বিক্ষোভকারীরা। লকেট ফিরে যাওয়ার পরে ধামাখালিতে প্রহৃত হন বিকাশবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং দলের আর এক কর্মী।

লকেটকে যে হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে, তাতে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা সামনে এসেছে বলে মনে করছেন সন্দেশখালির মানুষ। যে গ্রামে বৃদ্ধার বাড়ি-হোটেল, তার কাছেই থাকেন বিকাশবাবু। ওই চত্বরে বিজেপির কম নয়। তা সত্ত্বেও লকেটকে গ্রামে ঢুকতে যে বাধা দেওয়া হতে পারে, সেই আগাম খবরটুকু ছিল না দলের কাছে। নৌকো থেকে পাড়ে ভিড় দেখে বিজেপি নেত্রী ধরে নেন, তাঁকে দেখতেই এসেছেন সকলে। পাড়ের দিকে তাকিয়ে হেসে হাত নাড়েন লকেট। পাশে তখন বিকাশবাবুও হাজির! অথচ, তাঁর এলাকার মানুষ যে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে নয়, বরং বিক্ষোভ দেখাতে এসেছে, সেটুকু আঁচ করতে পারেননি তিনি।

বিকাশবাবুর বিরুদ্ধে দলের অন্দরেও ক্ষোভ আছে। হিঙ্গলগঞ্জের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘বিকাশবাবুর কথায় বারোশো পরিবারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছি। সেই টাকা বিকাশবাবুকে দিই। ওই টাকা ফেরত পাননি কেউ। ঘরও দেওয়া যায়নি কাউকে।’’ পুলিশ সুপারের কাছে বিকাশবাবু-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন জয়দেববাবু। বসিরহাটের ঘুসুড়ি গ্রামের বিজেপি নেতা সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘বিকাশবাবুর কথায় শ’চারেক পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করেছি। এখন মার খাওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ সব নেতাকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। বসিরহাট মহকুমার আরও কিছু বিজেপি নেতা ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনা শীর্ষ নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘যাদের মুখে কেবলই সারদা-নারদার কথা শোনা যায়, তারা গরিব মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ঘর দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা লুঠ করছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে বিকাশবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Bikash Singh BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE