Advertisement
E-Paper

ইয়াসে ধ্বংস মাছ-চিংড়ি চাষ, জোগান নিয়ে প্রশ্ন

আগামী দিনে বাজারে মাছ-চিংড়ির জোগানে সমস্যা হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৬:৪৫
ক্ষতি: মিনাখাঁয় জলমগ্ন মাছের ভেড়ি।

ক্ষতি: মিনাখাঁয় জলমগ্ন মাছের ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

কড়া বিধিনিষেধের জেরে সমস্যা চলছিল কয়েকদিন ধরেই। ইয়াসে কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে মাছ-চিংড়ি চাষ। এর জেরে আগামী দিনে বাজারে মাছ-চিংড়ির জোগানে সমস্যা হতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।

বসিরহাট মহকুমা জুড়ে মাছ-চিংড়ির চাষ হয়। হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, স্বরূপনগর, হাসনাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভেড়ি করে চাষ করা হয় গলদা, বাগদা চিংড়ি। এছাড়া নদীর ধার দিয়ে ছোট-বড় পুকুর কেটে ভেটকি, পার্সে, তেলাপিয়া, হাইব্রিড মাগুর মাছের চাষ করা হয়। এই সব এলাকায় চাষ হওয়া মাছ-চিংড়ি রাজ্যের বাইরে, এমনকী বিদেশেও রফতানি হয়। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, রাজ্য জুড়ে কড়া বিধিনিষেধের ফলে গত কয়েকদিন ধরেই মাছ রফতানি সেভাবে হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায় মন্দা চলছিল। ইয়াসে বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে প্রায় সব মেছোভেড়িই। শ’য়ে শ’ য়ে মাছ মরেছে। জলে ভেসে বহু মাছ নদীতে চলে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকার। সমস্যায় পড়েছেন মাছ চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েক লক্ষ মানুষ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে ভেড়িতে পিন বা বাচ্চা ছাড়া হয়। সেই পিন বড় হওয়ার পর, বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস থেকে চিংড়ি বিক্রি শুরু হয়। এবার সেই বিক্রির সময়ই আঘাত হেনেছে ইয়াস। ফলে বহু ভেড়িতেই বিক্রির জন্য তৈরি চিংড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাছ চাষের ক্ষেত্রেও বহু পুকুর-ভেড়িতে বিক্রির উপযুক্ত মাছ তৈরি ছিল। ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সন্দেশখালির ভেড়ি ব্যবসায়ী সুবল সর্দার, পরিতোষ মৃধারা জানান, ইয়াসে এলাকার অন্তত ২৬ হাজার বিঘার ভেড়ি নদীর জলে ভেসে গিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার বিঘা এখনও জলে ডুবে আছে। হাড়োয়ার মাছের আড়ৎদার সঞ্জু বিশ্বাস জানান, এলাকায় প্রায় বারো হাজার বিঘা জমিতে মাছ চাষ হয়। মালিক-কর্মচারি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নোনা জল ঢুকে প্রায় সব মাছই মরে গিয়েছে। মিনাখাঁর মেছোভেড়ির মালিক রাজেশ মণ্ডল, জলিল মোল্লারা জানান, এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বিঘার মেছো ভেড়ির মাছের ক্ষতি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। বসিরহাটের তপারচর এলাকার এক হাইব্রিড মাগুর চাষি রতন বৈদ্য বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে এলাকার বহু ছেলে ইছামতী নদীর ধারে ছোট ছোট পুকুর কেটে হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করছেন। এই মাছের বড় অংশ শিলিগুড়ি এবং কলকাতার বাজারে বিক্রি হয়। ইয়াস সব দফা রফা করে ছেড়েছে।” স্থানীয়রা জানান, মহকুমার বহু মানুষের আয়ের প্রধান মাধ্যম মাছ চাষ। এই চাষে ক্ষতি হওয়ায় অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, রাজ্যের বাইরে, এমনকী বিদেশও এখানকার মাছ রফতানি হতো। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগামী দিনে মাছ বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। ব্যবসায়ীদের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লেগে যেতে পারে কয়েক বছর।

বসিরহাট মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “মাছ ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে দেখা হচ্ছে।”

Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy