Advertisement
E-Paper

নিকা-য় না, মাধ্যমিকে বসল সুহিনা

গোপালনগর থানার উত্তর ব্যাসপুর গ্রামে থাকে ষোল বছরের সুহিনা খাতুন। এক দিন পড়তে চেয়ে নিজের বিয়ে নিজেই আটকে দিয়েছিল। এখন পরিবারও হার মেনেছে তার জেদের কাছে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
পরীক্ষার-পথে: বাবা-মায়ের সঙ্গে সুহিনা। —নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষার-পথে: বাবা-মায়ের সঙ্গে সুহিনা। —নিজস্ব চিত্র।

সকালে স্নান-খাওয়া সেরে শেষ মুহূর্তে বইয়ের পাতায় চোখ বলিয়ে নিচ্ছিল মেয়েটি। একটু পরেই বসবে মাধ্যমিক পরীক্ষায়। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন বাবা-মা। বললেন, ‘‘ভাল করে মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিস।’’

চোখ দু’টো জলে ভিজে আসে মেয়ের। মনে পড়ে যায় পুরনো কথা।

গোপালনগর থানার উত্তর ব্যাসপুর গ্রামে থাকে ষোল বছরের সুহিনা খাতুন। এক দিন পড়তে চেয়ে নিজের বিয়ে নিজেই আটকে দিয়েছিল। এখন পরিবারও হার মেনেছে তার জেদের কাছে।

ব্যাসপুর হাইস্কুলে তখন নবম শ্রেণির পড়ে সুহিনা। বাড়ি থেকে বিয়ের ঠিক হয়। বা়ড়ির মেয়ের ওজর-আপত্তি কেউ কানে তোলেনি।

সুহিনা বুঝে যায়, এ পথে হবে না। সে হাজির হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বরূপরাজ রায়চৌধুরীর কাছে। আকুতি জানায়, ‘‘স্যার, আমি বিয়ে করতে চাই না। পড়তে চাই। কিছু একটা করুন।’’

এক সহ শিক্ষিকাকে সুহিনার বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। তাতেও জল গলেনি। শেষমেশ পুলিশকে খবর দেন স্বরূপরাজবাবু। পুলিশ গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে। তারপরও বাড়ির উপরে নজর রেখেছিল পুলিশ।

প্রথম প্রথম বাড়ির বড়দের রাগ কমেনি মেয়ের উপরে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সুহিনার বাবা-মা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁরা মেয়ের লেখাপড়ায় উৎসাহই দেন, জানায় সুহিনা।

তার বাবা আবদুল জাবের আলি মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে মেয়ের উপরে অভিমান হয়েছিল। পরে ভেবে দেখলাম, মেয়ে কথাটা ঠিকই বলছে। ও যত দিন লেখাপড়া করতে চাইবে, তত দিনই ওকে পড়াব।’’

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সুহিনা ছোট। বাবা স্কুলের পথ মাড়াননি। অন্যের জমি ভাগে নিয়ে চাষবাস করেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে যদি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তা হলে বংশের মুখ উজ্জল হবে। আমরা এখন সেটা চাই।’’

সে সময়ে কাজটা সহজ ছিল না স্বরূপরাজবাবুদের পক্ষেও। বিয়ে বন্ধ হওয়ায় সুহিনার পরিবারের লোকজন প্রধান শিক্ষককে স্কুলে এসে ঘেরাও পর্যন্ত করেছিলেন। তবু মেয়েটি যে শেষমেশ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে, সে জন্য খুশি স্বরূপরাজবাবুও।

স্কুল পুলিশ ও চাইল্ড লাইনের প্রাক্তন কো অর্ডিনেটর স্বপ্না মণ্ডল নানা ভাবে সুহিনাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করছেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটার মনের জোর দেখার মতো।’’

সুহিনাকে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মানে ভূষিত করেছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়া-আসার জন্য অটো ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে।

অটোয় ওঠার আগে সুহিনা বলে যায়, ‘‘পুরনো কথা আর মনে রাখতে চাই না। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটাই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’

Madhyamik Examination Education Suhina সুহিনা মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy