Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তারুণ্যের হাতেই উন্নয়নের গতি, মত নতুন প্রার্থীদের

কেউ মনে করছেন, রাজনীতি ছাড়া সমাজসেবা হয় না। আর সে কারণেই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ভোটে দাঁড়িয়েছেন, দুনীর্তিমুক্ত স্বচ্ছ নাগরিক পুর পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ থেকে। কেউ বা শ্বশুরের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান। ওঁরা সকলেই অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর ভোটে প্রথম বারের প্রার্থী।

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

কেউ মনে করছেন, রাজনীতি ছাড়া সমাজসেবা হয় না। আর সে কারণেই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ভোটে দাঁড়িয়েছেন, দুনীর্তিমুক্ত স্বচ্ছ নাগরিক পুর পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ থেকে। কেউ বা শ্বশুরের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান। ওঁরা সকলেই অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর ভোটে প্রথম বারের প্রার্থী।

৫ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ছেন তরুণ তুর্কী সঞ্জয় রাহা। ছাত্র রাজনীতির সূত্রে তিনি জেলা রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। ছত্রিশ বছরের সঞ্জয়বাবুর বাড়ি অবশ্য ২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেই অর্থে তিনি পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বহিরাগত প্রার্থী। কিন্তু তিনি এলাকায় এতটাই পরিচিত যে তাঁকে আলাদা করে নিজের পরিচিতি ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে হচ্ছে না। অতীতে তিনি ছিলেন জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি। বর্তমানে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। সঞ্জয়বাবু ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তৃণমূলের সময় হীরাকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। যা নিয়ে অবশ্য প্রথম দিকে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ ছিল।

জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে (এ বার বেড়ে হয়েছে ২৩টি) তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২০টি ওয়ার্ড। নতুন মুখ এবার ৭টির বেশি দেওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়। নতুন প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন সঞ্জয়।

কেন সঞ্জয়বাবুকে প্রার্থী করা হল? জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, ছাত্র সংগঠনের কাউকে প্রার্থী করতে হবে। সেই মতো বেছে নেওয়া হয় সঞ্জয়কে। নতুন প্রজন্ম তুলে আনতেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তরুণ প্রার্থী বলেন, ‘‘সারা বছর ধরেই নানা সমাজসেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকি। জন প্রতিনিধি হয়ে ওই কাজ আরও ভাল ভাবে করতে পারব বলেই ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ প্রার্থীর কাকা নৃপেন্দ্রনাথ রাহা কংগ্রেস নেতা ছিলেন। যদিও সঞ্জয়বাবু যখন রাজনীতি শুরু করেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবে তৃণমূল দল গঠন করেছেন। দলনেত্রীর আদর্শে অনুপ্রানণত হয়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানালেন সঞ্জয়। জয়ী হলে তাঁর লক্ষ্য থাকবে, ‘‘ওয়ার্ডের গরিব মানুষের কাছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা যাতে আরও বেশি করে পৌংছে দেওয়া যায়, সে দিকে।

(বাঁদিকে) সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্না নন্দী, তনুজা চক্রবর্তী, অসিত সাহা, দেবশ্রী রায় এবং সঞ্জয় রাহা।

বছর চৌত্রিশের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা দেবশ্রী রায়কে এ বার তৃণমূল প্রার্থী করেছে ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তাঁর শ্বশুর নান্টুরঞ্জন রায় ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর। নান্টুবাবু দীর্ঘদিনের দলীয় নেতা। অতীতে তিনি পুরসভার বিরোধী দলনেতাও ছিলেন। ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত হওয়ায় নান্টুবাবু দাঁড়াতে পারেননি। তাই দল তাঁর বৌমা দেবশ্রীকে প্রার্থী করেছে। স্কুল থেকে ফিরে বিকেল গড়ালে প্রার্থী প্রচারে বেরোচ্ছেন। দেবশ্রী বলেন, ‘‘এমনিতেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডটি একটি মডেল ওয়ার্ড। শ্বশুরমশাইয়ের সামান্য যা অসমাপ্ত কাজ আছে, তা সম্পূর্ণ করব বলেই ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ কাজ বলতে যেটুকু বাকি তা হল, পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা ও আর বেশি করে গরিব মানুষের বিপিএল তালিকায় নাম তুলে বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করা। দেবশ্রী মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে সমাজসেবা যুক্ত। সে জন্যই ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলে জানালেন।

১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ বারই প্রথম সিপিআই প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন অসিত সাহা। বাবুসোনা নামেই তিনি ওয়ার্ডের মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। বছর সাতচল্লিশের বাবুসোনা বিকম উত্তীর্ণ। শারীরশিক্ষাতেও ডিগ্রি আছে। অবিবাহিত বাবুসোনা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ভোটে সময় বামেদের মিটিং-মিছিলে তাঁকে দেখা যেত অনেক দিন ধরেই। ওয়ার্ডের অনুন্নয়ন তাঁকে ভোটে দাঁড়াতে উৎসাহ জুগিয়েছে বলে জানালেন। তাই দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি আপত্তি করেননি। অসিতবাবুর কথায়, ‘‘১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি বরাবরই উপেক্ষিত। রাস্তা বেহাল। নিকাশি সমস্যা ভয়াবহ। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছায়নি।’’ অবিবাহিত বাবুসোনা মূলত বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকাল সন্ধ্যা প্রচার করছেন। প্রচার চলছে ফেসবুকেও। নিজে তো বটেই, বন্ধুরাও তাঁর হয়ে সেই দায়িত্ব নিয়েছেন।

৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বপ্না নন্দী। বছর পঁয়তাল্লিশের স্বপ্নাদেবী গৃহবধূ। লেখাপড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। বাপের বাড়িতে ছিল কংগ্রেসি পরিবেশ। আর শ্বশুরবাড়িতে এসে পড়লেন বাম আবহে। সেই থেকে বামপন্থী রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। স্বামী মানব নন্দীও সিপিএম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বপ্নাদেবীর নিজেরও ইচ্ছা ছিল ভোটে দাঁড়ানোর। দল যখন সেই প্রস্তাব দেয়, তখন আর না করেননি। প্রার্থীর কথায়, ‘‘ওয়ার্ডে নিকাশি সমস্যা ভয়াবহ। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছানোরও সমস্যা আছে। ওয়ার্ডে গরিব মানুষেরা যাতে মাসের এক তারিখের মধ্যে বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার টাকা হাতে পান, সেই ব্যবস্থা করব।’’ ‘দুনীর্তিমুক্ত স্বচ্ছ পুর পরিষেবা’ সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি।

এই পুরসভায় বামেরা এ বার নতুন মুখের প্রার্থী করেছে ১৮ জনকে। সিপিএমের অশোকনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘নয়া প্রজন্মের জাগরণ চেয়েছি বলেই নতুনদের প্রার্থী করা হয়েছে।’’

১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেস এ বার প্রার্থী করেছে বছর বত্রিশের স্নাতক ডিগ্রিধারী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেসের অশোকনগরের প্রাক্তন সভাপতি। ওয়ার্ডে বসে মিটিং করে এলাকার মানুষ তাঁকে প্রার্থী মনোনীত করেছিলেন। তিনি মনে করেন, ‘‘অল্পবয়সী যুবকেরা ভোটে দাঁড়ালে নতুন উদ্যোমে ঝাঁপিয়ে পড়বে, কাজে গতি আসবে।’’ ওয়ার্ডের উন্নয়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনিও। সায়ন ব‌লেন, ‘‘ভোটে দাঁড়িয়েছি, কারণ ওয়ার্ডের রাস্তা সংস্কার করব। নতুন রাস্তা করব। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেব। আর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নত করব।’’

বিজেপিতেও এ বার নতুন মুখের ছড়াছড়ি। ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দলের প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তী। এমএ পাশ। পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। তা দেখাশোনা করেন তনুজাই। ’৯০ সাল থেকে তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এত দিন তিনি নিজেকে ভোটে দাঁড়ানোর মতো যোগ্য বলে মনে করেননি বলে জানালেন। তনুজার কথায়, ‘‘আমার মনে হয়েছে, এত দিনে মানুষের কাছে নিজের কাজের মাধ্যমে পৌঁছতে পেরেছি। তাই ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ তনুজা মনে করেন, ‘‘রাজনীতি ছাড়া সঠিক ভাবে সমাজসেবা করা যায় না। সে কারণেই ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ তিনি মনে করেন, শিক্ষিত মহিলারা যত বেশি করে ভোটের রাজনীতিতে আসবেন, ততই দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে। ভোটে জয়ী হলে ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়ন করবেন বলে জানালেন তনুজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE