Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাজের খোঁজে বেরিয়ে টাকা খোয়াল কিশোর 

শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার দূরত্ব কত, জানত না বছর তেরোর প্রোজ্জ্বল সরকার। আবার কলকাতা থেকে অসম যেতে কত সময় লাগে, তা-ও ধারণা ছিল না। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৮
Share: Save:

শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার দূরত্ব কত, জানত না বছর তেরোর প্রোজ্জ্বল সরকার। আবার কলকাতা থেকে অসম যেতে কত সময় লাগে, তা-ও ধারণা ছিল না।

এক ট্রাক চালক ‘দাদা’র কথায় মোটা বেতনের লোভে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় এসেছিল ছেলেটি। শেষ পর্যন্ত তাকে নিঃস্ব অবস্থায় শুক্রবার উদ্ধার করে বীজপুর থানার পুলিশ। জানা যায়, প্রোজ্জ্বলের কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে ওই ট্রাক চালক তাকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে। পুলিশের সাহায্যে শেষে রবিবার বাড়ি ফিরতে পেরেছে ছেলেটি। পুলিশ জানিয়েছে, প্রোজ্জ্বলের বাড়ি অসমের তিনসুকিয়ার বোরাগাঁও থানার বাটালিমারি গ্রামে। কাজের খোঁজে মাস সাতেক আগে সে চলে এসেছিল শিলিগুড়িতে। একটি খাবার দোকানে কাজ জুটিয়ে নেয়। সেখানে দিব্যি চলছিল। কিন্তু কাজের তুলনায় পারিশ্রমিক সামান্য মনে করত সে।

মাস ছ’য়েক আগে সেই দোকানে খেতে গিয়েছিল এক ট্রাক চালক। আলাপ হয় প্রোজ্জ্বলের। কথায় কথায় নিজের কম পারিশ্রমিকের কথা জানিয়েছিল সে। তখনই ট্রাক চালক ‘দাদা’ তাকে প্রস্তাব দেয়, কলকাতায় আসার। তার ট্রাকেই খালাসির কাজ দেওয়ার কথা বলে। মাস গেলে মোটা টাকা বেতন পাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তার এক কথাতেই লরিতে চড়ে কলকাতা পাড়ি দেয় প্রোজ্জ্বল।

মাস ছ’য়েক ধরে খালাসির কাজ করেওছিল। তাকে খাওয়ার টাকা দিত ওই চালক। কিন্তু মাসমাইনে কখনও দেওয়া হত না। প্রোজ্জ্বল পুলিশকে জানিয়েছে, টাকা চাইলে ‘দাদা’ বলত, ‘‘কাছে টাকা থাকলে খরচ হয়ে যাবে।’’ ফলে সেই টাকা তার নিজের কাছেই রাখত বলে জানিয়েছিল চালক। বাড়ি যাওয়ার সময়ে এক সঙ্গে ওই টাকা তাকে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল। বীজপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার সকালে কাঁপা-বিজনা মোড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে প্রোজ্জ্বলকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সুস্থ হয় সে। জানায়, ট্রাক চালকের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল। প্রোজ্জ্বলকে তাকে কিছু টাকা দিয়েওছিল সে। এত কম টাকা কেন, তা জানতে চাইতেই ‘দাদা’ রেগে আগুন। শুক্রবার ভোরে ট্রাক থামিয়ে মারধর করে তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় চালক। যাওয়ার সময়ে তার কাছে থাকা টাকা ও অন্য জিনিসপত্রও ছিনিয়ে নেয়।

প্রোজ্জ্বলের কাছে বাড়ির ঠিকানা জেনে বোরাগাঁও থানায় যোগাযোগ করে পুলিশ। সেখানকার পুলিশ প্রোজ্জ্বলের বাড়িতে খবর দেয়। রবিবার তার বাবা শম্ভুনাথ সরকার চলে আসেন বীজপুর থানায়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘‘ছেলের খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। টাকা গিয়েছে যাক। ছেলেটাকে যে খুঁজে পেয়েছি, সেই অনেক। আর ওকে একা ছাড়ব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beating Money Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE