Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অন্ধকারে ডুবে থাকা সড়কে দেখা মিলল না পুলিশি টহল

রাত ১টা ৫ মিনিট। চাকদহ চৌমাথার সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। যার এক দিকে রানাঘাট, অন্য দিক ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় বারাসতের দিকে। দেখা গেল, শীতের রাতে রাস্তার ধারে মোটরবাইক নিয়ে গুলতানি করছে এক দল মদ্যপ যুবক। তাদের সঙ্গীসাথী কয়েক জন মাঝে মধ্যে হুস হুস করে বাইক নিয়ে যাতায়াত করছে। পুলিশের গাড়ির টিকিটিও দেখা গেল না কোত্থাও।

পথবাতির রেশটুকু নেই চাকদহ চৌরাস্তা মোড়ে।

পথবাতির রেশটুকু নেই চাকদহ চৌরাস্তা মোড়ে।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

রাত ১টা ৫ মিনিট। চাকদহ চৌমাথার সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। যার এক দিকে রানাঘাট, অন্য দিক ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় বারাসতের দিকে। দেখা গেল, শীতের রাতে রাস্তার ধারে মোটরবাইক নিয়ে গুলতানি করছে এক দল মদ্যপ যুবক। তাদের সঙ্গীসাথী কয়েক জন মাঝে মধ্যে হুস হুস করে বাইক নিয়ে যাতায়াত করছে। পুলিশের গাড়ির টিকিটিও দেখা গেল না কোত্থাও। বনগাঁর দিকে ফিরতি পথে দেখা গেল, রাস্তার বাঁ দিকে সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে। কোথাও আবার রাস্তার ধারে পড়ে আছে ইমারতি মালপত্র। চৌমাথা ছাড়ানোর পরেই সড়কে কোথাও আর আলো চোখে পড়ল না। শীতের ঘন কুয়াশার মধ্যে তখন উল্টো দিকের গাড়ির হেডলাইট দেখে এগোতে হল সাবধানে।

রাত ১টা ২০ মিনিট। চুয়াডাঙা বাজারের কাছে পুলিশ বা আরজি পার্টির কাউকে চোখে পড়ল না।

রাত দেড়টা। বিষ্ণুপুর বাজার। এখানেও দোকানপাট সব বন্ধ। টিমটিমে কিছু আলো জ্বলছে বাজারে। তিনটি এটিএম চোখে পড়ল। কিন্তু সেখানে পাহারায় দেখা গেল না কাউকে। পুলিশের টহলদারি ভ্যানও নজরে এল না।

রাত সওয়া ২টো। গোপালনগর বাজার এলাকায় ঢোকার আগে রেলগেট এলাকায় দেখা গেল, ট্রাক থামিয়ে কিছু যুবক টাকা নিচ্ছে। কেউ বাধা দেওয়ার নেই।

হাতে গোনা কয়েকটি বাজার এলাকা ছাড়া রাতের বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কে কার্যত কোনও আলোই জ্বলে না। পুলিশের দেখা মেলা মানে তো রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ, নদিয়ার চাকদহ ও উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর মধ্যে প্রায় ৩২ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা ধরে দিনের বেলা তো বটেই, রাতেও বহু গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার ধারে ধারে একাধিক পেট্রলপাম্প থাকলেও রাতে সে সব বন্ধ। মাঝরাস্তায় তেল ফুরলো কী যে হবে, দেবা না জানন্তি!

দু’টি-তিনটি বাজারে সিভিক ভলেন্টিয়ার যদি বা চোখে পড়ল, পুলিশের দেখা পাওয়া গেল না। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে চুরি-ছিনতাইয়ের বহু অভিযোগ আছে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে লুঠপাটের ঘটনাও ঘটেছে বার কয়েক। একাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনারও সাক্ষী দুই জেলার মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী এই রাস্তাটি। কিন্তু পর্যাপ্ত আলো কিংবা পুলিশি ব্যবস্থা রাতভর ঘুরে দেখা মিলল না কিছুরই। বিভিন্ন পুজো-পার্বণে রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার অভিযোগ বহু বার উঠেছে চাকদহ থেকে বনগাঁ আসার এই রাস্তায়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এ বাদে অন্য কোনও বক্তব্য নেই পুলিশের। রাতে টহলদারি ভ্যান থাকে বলে দাবি করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার পুলিশ কর্তারা।

নদিয়া জেলার চাকদহ থানার অধীনে রয়েছে এই রাস্তার ১৭ কিলোমিটার অংশ। বাকিটা বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর ও সামান্য কয়েক কিলোমিটার বনগাঁ থানার অন্তর্গত এলাকায়। রাতের সড়কে চাকদহের দিক থেকে বাইক ও ছোট গাড়িতে করে প্রায়ই সন্দেহজনক যুবকদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল। স্থানীয় মানুষ এবং রাতে যাঁদের এই পথে যাতায়াত করেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাঝে মধ্যে সাধারণ মানুষের গাড়ি আটকে তল্লাশির নামে হেনস্থা করে পুলিশ। পরিচয় দিলেও পুলিশকে জানাতে হয়, কোথায় কী কাজে এত রাতে যাওয়া হয়েছিল। সে বেলা আইনের শাসন কড়া। কিন্তু হাওয়া কাঁপিয়ে চলে যাওয়া হেলমেটহীন মোটর বাইক সওয়ারিদের দিকে ফিরেও তাকায় না পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ। নম্বর প্লেটহীন গাড়িও চোখে পড়ে মাঝে মধ্যে। কিন্তু কে তাদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, উত্তর নেই কারও কাছে। কয়েক বছর আগে সংকীর্ণ রাস্তাটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে নদিয়ার একাংশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যান চালকেরা ওই সড়কটি ব্যবহার করেন। যশোহর রোডের যানজট ও বেহাল অবস্থার কারণে পেট্রাপোলগামী বহু পণ্যবাহী ট্রাকও ওই সড়ক ধরে যাতায়াত করে। রাতে এই পথে যাতায়াতকারী কেউ কেউ বললেন, “দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াত চলে এই রাস্তায়।”

গোপালনগর থানা এলাকা দিয়ে আসার সময়ে দেখা গেল, নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইক নিয়ে হনুমান টুপিতে মাথা ঢেকে কারা যেন যাতায়াত করছে। ওই সব বাইক চালায় পাচারকারীরা, জানা গেল এলাকার মানুষজনের কাছে। অভিযোগ, একে তো পুলিশের টহলদারি ভ্যান দেখাই যায় না। তার উপর, যদি বা টহল থাকে, পুলিশ এদের সচরাচর ঘাঁটায় না। ফলে ট্রাক বা ছোট গাড়ির চালক-যাত্রীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন।

বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কে এসে যখন শেষ হল কাজ, তখনও চোখে পড়েনি পুলিশের একটিও টহলদারি ভ্যান।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal simanta maitra bangaon elcetricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE