Advertisement
E-Paper

আজ ভোট, নজরে মতুয়াবাড়ি

প্রচারে গা ঘামিয়েছে সব পক্ষ। আজ, শুক্রবার ফাইনাল পরীক্ষা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। উপ নির্বাচন হলেও যে আবহে ভোট হচ্ছে, তা রাজনৈতিক ভাবে সব দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। সারদা-কাণ্ডের দীর্ঘ ছায়া শাসক দল তৃণমূলের ভাবমূর্তির উপরে কতটা প্রভাব ফেলল, তা জানার আগ্রহ আছে রাজ্যবাসীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩১
স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে বড়মার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রক্তচাপ দেখা গেল ১৪০/৮০। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে বড়মার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রক্তচাপ দেখা গেল ১৪০/৮০। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

প্রচারে গা ঘামিয়েছে সব পক্ষ। আজ, শুক্রবার ফাইনাল পরীক্ষা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন।

উপ নির্বাচন হলেও যে আবহে ভোট হচ্ছে, তা রাজনৈতিক ভাবে সব দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। সারদা-কাণ্ডের দীর্ঘ ছায়া শাসক দল তৃণমূলের ভাবমূর্তির উপরে কতটা প্রভাব ফেলল, তা জানার আগ্রহ আছে রাজ্যবাসীর। ইতিমধ্যেই শাসক দলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদকে অভিযুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আরও অনেকেই যে গোয়েন্দাদের নজরে আছেন, সে কথাও জানা যাচ্ছে। তার উপরে কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের ফলে বিজেপি শিবির এখন রীতিমতো উজ্জীবিত। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বা তাঁর ছেলে সুব্রত ঠাকুর দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। যা তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর। একদা দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও মহিলা কমিশনের সদস্য পদ এবং দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কুমার শানু, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো তারকাদের সম্প্রতি বিজেপি শিবিরে যোগদানের ঘটনাও তাদের বাড়তি ভরসা জোগাচ্ছে।

তবে বিজেপির রমরমা বাজারে কিছুটা হলেও খোঁচা দিয়েছে দিল্লি ভোটের ফলাফল। সেখানে অরবিন্দ কেজরিবালের ঝাড়ুর ধাক্কায় শোচনীয় পরাজয়ের ধাক্কা তারা কবে সামলে উঠতে পারে, তা দেখার। বিরোধীদের বক্তব্য, দিল্লির ভোট দেখিয়ে দিয়েছে, বিজেপির জয়ের রথও থমকে যেতে পারে। নরেন্দ্র মোদীর ঔদ্ধত্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। দিল্লির ভোটের ফল এ রাজ্যেও কতটা পড়ে, তা দেখার।

বনগাঁর ভোটে বিস্তর নাটক ও জল্পনা জিইয়ে রেখে শেষ মুহূর্তে দলের প্রার্থী মমতা ঠাকুরের হয়ে দু’দিন প্রচারে নেমেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। কিন্তু দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর গত কয়েক মাসে বাড়িতে থাকা দূরত্বের জন্য এ বার বনগাঁ লোকসভা বা কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের কোনও দায়িত্ব তিনি পাননি। যদিও কয়েক মাস আগে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে যে ভাবে ঘাঁটি গেড়ে থেকে তৃণমূলের হারানো ভোটব্যাঙ্ক অনেকটাই উদ্ধার করেছিলেন মুকুল, সে কথা এখনও জেলায় তাঁর অনুগামীরা তো বটেই বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনও স্বীকার করেন। আসনটি শেষমেশ হাতে না এলেও ভোটের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল মুকুলবাবুর কুশলী নেতৃত্ব। এ বার বনগাঁয় ভোট বৈতরণী পেরতে দায়িত্বের সেই ব্যাটন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে।

অশোকনগরের বিল্ডিং মোড়ের কন্ট্রোল রুমে বসে শুক্রবার সকাল থেকে ভোট দেখভাল করবেন জ্যোতিপ্রিয়, এমনটাই জানাচ্ছেন দলের নেতারা। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেশি বেশি করে মানুষ যাতে বুথমুখো হন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে দিনভর নিজেদের অন্নজলের ব্যবস্থা না করে হলেও সেই দায়িত্ব নিতে হবে। ভোট শেষ হলে ইভিএম মেশিন স্ট্রং রুমের দিকে রওনা না দেওয়া পর্যন্ত কর্মীদের ছুটি নেই।

দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা চলছে, “এ বারের ভোট-পর্বটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুদার (জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ডাক নাম) চোখ দিয়েই দেখছেন।” দলের সংকটের সময়ে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারলে সেটা যে জ্যোতিপ্রিয়র রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পক্ষেও উল্লেখযোগ্য হবে, তা বলাইবাহুল্য।

অন্য দিকে, শক্তহাতে ভোটের হাল ধরতে প্রস্তুত বিজেপিও। শুরুর দিকে প্রার্থীকে নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও পরের দিকে তা অনেকটাই সামলানো গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলার নেতারা। বিজেপির এরকটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রতি বুথে তাঁদের কর্মী তো থাকছেনই, তা ছাড়াও বুথের ২০০ মিটার দূরে ক্যাম্পেও কর্মীদের রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া, গ্রামের ভিতর থেকে ভোটাররা যাতে ভোট দিতে বেরোন, তা নিশ্চিত করতেও তাঁদের কর্মীরা সজাগ থাকবেন। কোথাও ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে কিনা, ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধা হচ্ছে কিনা, তা-ও দেখবেন কর্মীরা।

বনগাঁর ভোট সার্বিক ভাবে তদারক করছেন বিজেপি নেতা বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী। তিনি জানালেন, কল্যাণীতে শাসক দলের লোকজন আমাদের ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে। মারধর করতে করতে পারে বলেও আমাদের আশঙ্কা। কর্মীদের মমূল কাজ হবে, ভোটারদের ভয় ভাঙিয়ে তাদের বুথে নিয়ে আসা।” কলকাতায় বসে নেতারা কন্ট্রোল রুম থেকে ভোট-পর্বে চোখ রাখবেন বলেও জানালেন তিনি। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে গাইঘাটায় রুটমার্চ করানো হয়েছিল বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি।

প্রচারে নিবিড় জনসংযোগের দিকে গুরুত্ব দিয়েছিল সিপিএম। ভোটের যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে সারা দিন দলের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব খোঁজ রাখবেন বলে জানিয়েছেন সিপিএমের স্থানীয় নেতারা।

কংগ্রেসের সংগঠন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে দীর্ঘ দিন ধরেই দুর্বল। প্রার্থী কুন্তল মণ্ডলকে দলের একাংশের হাতে হেনস্থাও হতে হয়েছে। তারপরেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে দলের কর্মীদের বড় অংশকেই পাশে পেয়েছেন কুন্তল। তবে এ বার ভোটে তাঁরা যে জেতার আশা খুব একটা করছেন না, সে কথা অধীরবাবুর বক্তব্যেও স্পষ্ট। মুশির্দাবাদের কান্দিতে এ দিন এক সভায় তিনি বলেন, “বনগাঁতে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। কিন্তু বিরাট কিছু ফল হবে, তা বলতে পারব না।” যার কারণ হিসাবে তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে সাড়ে সাঁইত্রিশ বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। বহু দিন কংগ্রেস ওই সব এলাকায় প্রার্থীই দিতে পারিনি। এখন প্রার্থী পেয়ে কংগ্রেস কর্মীদের দেখা মিলছে।”

নজরে বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জ।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

মতুয়া ভোট কোন দিকে গড়ায়, এ বার সে দিকে নজর রাখছে সব পক্ষই। বৃহস্পতিবার মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা সুনসান। পুলিশি প্রহরা আছে। বারান্দায় বেরিয়ে এসেছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণীদেবী। বড়মা বলেই যাঁকে এক ডাকে চেনেন মতুয়া ভক্তেরা। বড়মাকে বলতে শোনা গেল, ক্ষীণ কণ্ঠে বলছেন, “বাড়ি যাব।” কোন বাড়ি, জানতে চাইলেন তৃণমূল নেতা ধ্যানেশনারায়ণ গুহ। বড়মা বললেন, “ওরকান্দি।” বাংলাদেশের এই জায়গাতেই ছিল তাঁর আদি বাস। ধ্যানেশবাবু বললেন, “এটাই তো তোমার বাড়ি।” বড়মা চুপ। ধ্যানেশ আশ্বস্ত করলেন, “ভোটটা মিটুক, তারপরে তোমাকে নিয়ে যাব।”

পরিবারের বিভাজন ঠেকাতে পারেননি বড়মা। ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ এবং বড় বৌমা মমতা ঠাকুরের মধ্যে বিভাজন পাকাপাকি হয়েছে। মঞ্জুলের ছেলে সুব্রত বিজেপি এবং মমতা ঠাকুর তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় সেই বিভাজনে পাকাপাকি শিলমোহর লেগেছে। মতুয়া ভোটারদের একাংশের বক্তব্য, ঠাকুরবাড়িতে রাজনীতির এই বিভাজনে তাঁরা খুশি নন। বড়মার দেশের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে কি পারিবারিক কাজিয়ারই একটা প্রকাশ নয়, ভাবাচ্ছে মতুয়া ভক্তদেরও।

bangaon vote by election southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy