Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আর্থিক অনুদান-সরঞ্জাম পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধীরা

বছর পাঁচেক আগে পড়ে গিয়ে দু’টো পা অচল হয়ে গিয়েছিল মগরাহাটের খনকার বাজার গ্রামের বাসিন্দা হালিমা বিবির। বছর চল্লিশের ওই মহিলা আজ ও পর্যন্ত তেমন কোনও সরকারি সাহায্যই পাননি। চলাফেরার করার জন্য সরকারি একটা সংস্থা থেকে একটি ট্রাই সাইকেল জুটেছিল। সেটুকুই সম্বল। উস্তির এসফর হালদার বধির। পোলিও আক্রান্ত সালাম গাজির ছোট থেকেই হাত দু’টি অকেজো। সকলেরই অবস্থা হরেদরে একই রকম।

দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

বছর পাঁচেক আগে পড়ে গিয়ে দু’টো পা অচল হয়ে গিয়েছিল মগরাহাটের খনকার বাজার গ্রামের বাসিন্দা হালিমা বিবির। বছর চল্লিশের ওই মহিলা আজ ও পর্যন্ত তেমন কোনও সরকারি সাহায্যই পাননি। চলাফেরার করার জন্য সরকারি একটা সংস্থা থেকে একটি ট্রাই সাইকেল জুটেছিল। সেটুকুই সম্বল। উস্তির এসফর হালদার বধির। পোলিও আক্রান্ত সালাম গাজির ছোট থেকেই হাত দু’টি অকেজো। সকলেরই অবস্থা হরেদরে একই রকম।

বছর দু’য়েক আগে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করার জন্য আর্থিক সাহায্য ও সরঞ্জাম বিতরণের সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিবন্ধীদের হাতে সে সব প্রায় কিছুই পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় ৯টি ব্লক রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে সমাজকল্যাণ দফতর থেকে এলাকায় প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা কত, তাদের কী কী সরঞ্জাম লাগতে পারে, তার তালিকা চাওয়া হয়েছিল। জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে সেই নির্দেশ অনুযায়ী প্রায় সমস্ত ব্লক থেকে বছর দু’য়েক আগেই তথ্য-পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছিল।

প্রতিবন্ধীদের জন্য ট্রাই সাইকেল, কানে শোনার যন্ত্র, কৃত্রিম অঙ্গ, হুইল চেয়ার দেওয়ার কথা ছিল। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করতে অথবা ছোটখাটো কুটিরশিল্পের কাজে যুক্ত করতে ১০ হাজার করে টাকা অনুদানও দেওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়াও, প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের লেখাপড়ার সরঞ্জাম বিলির পরিকল্পনা করা হয়।

কিন্তু অভিযোগ, বছর দু’য়েক ধরে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি সাহায্য পাওয়া প্রায় বন্ধ। ফলে তাঁরা ব্লকের সমাজকল্যাণ দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। যাঁদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল, তাঁদেরই আগ্রহ বেশি। কিন্তু বার বার সরকারি অফিসে ঘুরেও তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ব্লকে প্রায় ৮-১০ হাজার প্রতিবন্ধী আছেন। এরা অধিকাংশই দুঃস্থ পরিবারের। অনেকেরই ভিক্ষাবৃত্তি জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। ফলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বেশির ভাগই কিনে উঠতে পারেন না তাঁরা। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সন্মীলনীর ডায়মন্ড হারবার মহকুমা সম্পাদক জিয়াউল মল্লিক বলেন, “আমাদের নিয়ে কেউ ভাবনা-চিন্তা করে না। বিভিন্ন ব্লকে সমাজকল্যাণ দফতরে আর্থিক অনুদানের আবেদন করা হলেও কোথাও সে সব অনুমোদন হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ বণ্টন করা হচ্ছে না। কোথাও আবার বছরের পর বছর অনুমোদনই মিলছে না।” এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক তুষার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ব্লক সমাজকল্যাণ দফতর থেকে যে সমস্ত নামের তালিকা আমার কাছে পাঠানো হয়, তা আমি ঊধর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই। আমার এখানে কোনও প্রকল্পের টাকা বা সরঞ্জাম পড়ে নেই।” তিনি জানান, ব্লকে ব্লকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালনের জন্য এ বছর কোনও টাকা মঞ্জুর হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবন্ধীদের নেওয়া ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় নতুন করে তাঁদের ঋণ দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE