Advertisement
E-Paper

ঈদের সকালে মায়ের খুনের খবর পেল তিন ভাইবোন

মাস দু’য়েক আগেই পাঁচ মাসের বোন নাসরিনাকে সঙ্গে নিয়ে মা তিন ছেলেমেয়েকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। কোথায় যাচ্ছেন, বলেও যাননি। সে সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল অষ্টম শ্রেণির সেলিমা, ষষ্ঠ শ্রেণির নোসিয়া ও চতুর্থ শ্রেণির রাজু। ঈদের আগের রাতে সেলিমা ও নোসিয়া হাতে মেহেন্দি পড়েছিল। ইচ্ছে ছিল, মঙ্গলবার ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে ঈদ পালন করবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:১৭
হতভম্ব সন্তানরা।

হতভম্ব সন্তানরা।

মাস দু’য়েক আগেই পাঁচ মাসের বোন নাসরিনাকে সঙ্গে নিয়ে মা তিন ছেলেমেয়েকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। কোথায় যাচ্ছেন, বলেও যাননি। সে সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল অষ্টম শ্রেণির সেলিমা, ষষ্ঠ শ্রেণির নোসিয়া ও চতুর্থ শ্রেণির রাজু। ঈদের আগের রাতে সেলিমা ও নোসিয়া হাতে মেহেন্দি পড়েছিল। ইচ্ছে ছিল, মঙ্গলবার ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে ঈদ পালন করবে। কিন্তু নিমেষে ভেস্তে গেল সব। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হঠাৎ তাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল পুলিশের দু’টি গাড়ি। খবর এল, তাদের মা হাসিনা মণ্ডলের (৩৫) দেহ উদ্ধার হয়েছে তাদেরই মাসির বাড়ির মাটির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে।

ঈদের সব আনন্দ মুহূর্তে ফিকে হয়ে যায় তিন ভাই-বোনের। পাঁচ মাসের বোনের কোনও হদিস মেলেনি। বড় মেয়ে সেলিনা বলে, “মা মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে বেশ কিছু দিনের জন্য চলে যেত। কিন্তু ফিরেও আসত। এখন আর ফিরবে না।” কোথায় যেত মা, তা অবশ্য কিছুই জানতে পারত না ছেলেমেয়েরা। প্রশ্ন করলে, উল্টে জুটত মার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হানিডাঙা গ্রামেই হাসিনার বোন চায়নার শ্বশুরবাড়ি। স্বামী আকবর মণ্ডল শাশুড়ি ও তাদের তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে চায়না। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বনগাঁ থানার পুলিশ হানিডাঙা গ্রামের আকবর মণ্ডলের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে হাসিনার মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, আকবর গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। বছর খানেক আগে স্বামীকে নিয়ে চায়নার সঙ্গে তাঁর দিদি হাসিনার মারপিট হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, আকবরের সঙ্গে হাসিনার বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

এখানেই উদ্ধার হয়েছে দেহ।

পরিমল তরফদার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শনিবার থেকে আকবরের বাড়ির শৌচাগারের পাশ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। আকবরকে জানালে সে বলে, সাপ মরে পড়ে রয়েছে। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল।” এ দিন সকাল থেকে দুর্গন্ধে টিঁকতে না পেরে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ আসার মিনিট পনেরো আগে আকবর সপরিবারে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, হাসিনা কবে এসেছিল, তাঁরা দেখেননি।

হাসিনার শ্বশুরবাড়ি গোপালনগর থানার বামনডাঙা গ্রামে। তাঁর স্বামী বিনারুল মণ্ডল বাইরের রাজ্যে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। হাসিনার শ্বশুর অলিল মণ্ডল থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করছেন। তবে নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ হয়নি। শাশুড়ি মনোয়ারা বলেন, ‘‘পাঁচ মাসের নাতনির কী হল কে জানে।’’ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ময়না-তদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে।

ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও মীর সহিদুল আলি ও থানার আইসি নন্দন পানিগ্রাহী। নিখোঁজ শিশুর খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অন্তত দিন দ’শেক আগে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছিল ওই মহিলাকে।

—নিজস্ব চিত্র।

eid bangaon murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy