বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণায় সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইছামতী থেকে সরবে কচুরিপানা। সংস্কার করা বিভিন্ন নদী, খাল, সেতুর। উন্নত করা হবে নিকাশি ব্যবস্থা। বনগাঁ লোকসভা এলাকায় সরকারি অনুষ্ঠানে এসে এ ভাবেই নানা উন্নয়নপ্রকল্পের বার্তা দিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, এ জন্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচ করা হবে। শহরে কচুরিপানা পরিষ্কারে টেন্ডার ডাকার কাজও শেষ। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
শনিবার বনগাঁয় খেলাঘর ময়দানে মন্ত্রীর এ ঘোষণাকে যতটা না উন্নয়নের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি ভোটের রাজনীতির জন্য বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএম থেকে কংগ্রেস, বিজেপি সকলেরই বক্তব্য, সামনেই বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচন। ইতিমধ্যেই বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে হেরেছে তৃণমূল। তার উপর এখন সারদা নিয়ে বেকায়দায় তারা। তাই বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচন জিততে তারা মরিয়া। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বিরোধীদের বক্তব্য, ক্ষমতায় আসার সাড়ে তিন বছর পরে ওদের মনে হয়েছে উন্নয়ন করা দরকার। আর সেটা কখন না, যখন শিয়রে ভোট। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের দাবি, বিরোধীরা উন্নয়ন চায় না বলেই এমন অভিযোগ করছে।
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নেপালদেব ভট্টচার্য বলেন, “মানুষ সত্যিই সব দেখছে। এটা যে পুরোটাই তৃণমূলের ধাপ্পাবাজি তাও বুঝছে। শিলান্যাসের শিলা পোঁতা ছাড়া ওরা যে আর কিছুই করতে পারেন না তা মানুষ জানেন।” বিজেপির জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত বলেন, “এ সব সমস্যা বনগাঁর মানুষর দীর্ঘদিনের। এতদিন এ সব নিয়ে হুঁশ ছিল না। এখন ভোট আসতে টনক নড়েছে। মানুষ ওদের ক্ষমা করবে না।” আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি (শহর) তাপস মজুমদারের কথায়, “ওরা সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায়। এত দিন সমস্যার দিকে নজর ছিল না। সামনে ভোট আসতে স্থানীয় মানুষের উন্নয়ন নিয়ে ওদের ঘুম হচ্ছে না। ওঁরা এখানকার মানুষকে অপমান করছেন।”
ইছামতী সংস্কার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। এ নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। বিক্ষিপ্ত ভাবে কাজ হলেও হয়নি দাবি মেনে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার। সাধারণের ক্ষোভ যাতে লোকসভার উপনির্বাচনে তাঁদের বিরুদ্ধে না যায়, সে জন্যই তড়িঘড়ি উন্নয়নের উদ্যোগ বলে মনে করছে রাজনৈতির মহল। তবে সেচ দফতরের কর্তাদের দাবি, ইছামতীর কচুরিপানা তোলার কাজ শেষ হলে বনগাঁ শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হবে। সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নদী থেকে কচুরিপানা পরিষ্কারের পাশাপাশি বনগাঁ লোকসভা এলাকায় আরও কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বরূপনগর ব্লকের অন্তর্গত সোনাই খাল ও কইজুড়ি খাল প্রায় ৫০ বছর সংস্কার হয়নি। কাজটি শেষ হলে স্থানীয় বিলবল্লি এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হবে। হাবরা ও স্বরূপনগর ব্লকের অন্তর্গত পদ্মা নদী, পদ্মা খাল ও নাংলা খালের সংস্কার করা হবে। এই খাল দু’টিও ২০ বছর সংস্কার হয়নি। কাজ শেষ হলে নাংলা বিল নিকাশির সুবিধা হবে। স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত পদ্মা নালা খালের উপর মোল্লাডাঙা পাকা সেতুর সংস্কার করা হবে। সেতু সংস্কার ও চওড়া হলে চারঘাট, দরগাতলা, ভূমিতলা, দিয়ারা মোল্লাডাঙা, টিপির মানুষ তাদের কৃষি পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ করতে পারবেন। ১৮০ দিনের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।
ভোটের আগে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি বনগাঁর ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগও তুলেছে তৃণমূল। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বনগাঁ শহর-সহ জেলার ৬টি জলপ্রকল্প আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। তাও জলের সমস্যা মেটানোর জন্য পাইপ লাইন বসাচ্ছে রাজ্য।” উন্নয়ন নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের উত্তরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এটা উন্নয়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy