Advertisement
E-Paper

খাটালের আবর্জনায় নিকাশি বেহাল, নাজেহাল বাসিন্দারা

বেআইনি খাটালের বর্জ্য পদার্থে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে খালের গতিপথ। বর্ষা এলেই তাই আতঙ্কে থাকেন ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের কামারপোল এলাকার মানুষ। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তা ছাড়া, এই খাটালের সঙ্গে সঙ্গে খালের উপর দিয়ে গজিয়ে উঠেছে কিছু বেআইনি দোকানপাট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৩
বন্ধ হয়েছে নিকাশির পথ। —নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ হয়েছে নিকাশির পথ। —নিজস্ব চিত্র।

বেআইনি খাটালের বর্জ্য পদার্থে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে খালের গতিপথ। বর্ষা এলেই তাই আতঙ্কে থাকেন ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের কামারপোল এলাকার মানুষ। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তা ছাড়া, এই খাটালের সঙ্গে সঙ্গে খালের উপর দিয়ে গজিয়ে উঠেছে কিছু বেআইনি দোকানপাট।

এলাকায় বসু এবং খোলাখালি নামে দু’টি প্রধান খাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন কর্তারা নির্দেশ দেওয়ার পরেও সরছে না খাটাল। অবিচল দোকানপাট। অভিযোগ, প্রশাসনের একটি অংশের সঙ্গে ‘রফা’ করেই নিশ্চিন্তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালী খাটাল মালিকেরা। অথচ সরিষা থেকে নুরপুর রোডের পাশ দিয়ে কামারপোল, কুশবেড়িয়া এবং রেখা মৌজার প্রায় ৩ হাজার বিঘা এলাকার জল নিকাশির একমাত্র খাল হল বসু খাল।

তবে এই খালটি কামারপোলের বসু পরিবারের ব্যক্তিগত খাল। এই ২০ ফুট চওড়া খালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার দশেক মানুষের জীবন। খালটি মিশেছে হুগলি নদী থেকে বেরিয়ে আসা ৪৫ ফুট চওড়া খোলাখালি খালের সঙ্গে। সেটিও বর্ষার জল ধারণ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। এই খালটির উপরে প্রায় ১৫-২০টি খাটাল রয়েছে। প্রশাসনের গাফিলতিতে প্রায় এক দশকেরও বেশি এই বেআইনি খাটালগুলি এখানে বর্তমান। সেগুলির বর্জ্যই বুজিয়ে দিয়েছে খাল।

বসু পরিবারের উত্তরাধীকারী বরুণ বসু বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে খালের উপর বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালানো বা খাটাল তুলে দেওয়ার জন্য বলে আসছি। এই কারণে গত ২৩ জুন পথ অবরোধও করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি।” অবরোধের দিন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষের। তাতে সামিল হয়েছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা খাটাল মালিকদের বলা হয়েছিল, পনেরো দিনের মধ্যে খালের বর্জ্য সাফ করতে হবে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার ২ বিডিওকে। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও অবস্থা একটুও বদলায়নি। বিডিও তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “খাটালের বর্জ্য পড়ে নিকাশির সমস্যা হচ্ছে। বর্জ্যগুলি তরল হওয়ায় তুলতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এই কাজ খাটাল মালিকদেরই করার কথা। যদি তা তাঁরা না করেন, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে ব্যাপক ভাবে দূষণও ছড়াচ্ছে। গত বছর এলাকায় খালের জল খোলাখালিতে না পড়ে উপচে গিয়ে এলাকা প্লাবিত করে। বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতি হয় ধান ও সব্জি চাষেও। এ দিকে, আবার বানের জল বের না হওয়ার জন্য এলাকার অনেকগুলি পুকুর ভেসে গিয়েছিল। এ বছরও বেশ বৃষ্টি হলে ডোবার আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। খালের এই বেহাল অবস্থার জন্য বার বার সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা অভিরুল লস্কর বলেন, “গত বছর বানের জলে আমার বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। প্রচুর টাকা ক্ষতি হয়। একটি টার্পোলিন পেয়েছিলাম মাত্র। কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। এখনও দেনার দায়ে ডুবে আছি।” এখানে খালের উপরে নিচু কার্লভার্ট করায় খালের গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পলি পড়েছে বলেও অভিযোগ।

কেন সরছেন না খাটাল মালিকেরা? স্থানীয় খাটাল মালিক হাজি রহমত শেখের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর ছেলে দাবি করেন, তাঁদের কোনও খাটালই নেই। কামারপোলের বাসিন্দা রহমত শেখ-সহ ৫ জন খাটাল মালিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খাটাল চালানোর বাইরেও খালের উপর বেআইনি দোকানপাট নির্মাণে অভিযুক্ত এই প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “বিডিওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবেন।” প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যেখানে প্রায় দশ হাজার মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, সেখানে হাতে গোনা কয়েকজন খাটাল মালিক ছাড় পাবেন না। প্রশাসনের একটি অংশের সঙ্গে খাটাল মালিকদের রফা হচ্ছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”

diamond harbor drainage system blocked drainage system cattle shed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy