গেট বন্ধ।
সকাল সাড়ে ১১টা। স্কুলে প্রবেশের দু’টি গেটই তালা-বন্ধ।
গেটের বাইরে একটি ভ্যানে মাইক বেঁধে তখন স্লোগান দিচ্ছেন কয়েক জন যুবক। হাতে ডিওয়াইএফ ও এসএফআই-এর পতাকা। মাইকে কখনও অনুরোধ, কখনও হুমকি, কখনও বা আবেগের বর্হিপ্রকাশ। কিন্তু কিছুতেই নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষকে। ছাত্র সংগঠনের ধর্মঘটের ডাককে পাত্তা না দিয়ে স্কুলের স্বাভাবিক পঠনপাঠন বহাল রাখলেন কর্তৃপক্ষ।
মাইকে এক যুবককে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে হুমকির সুরে বলতে শোনা গেল, “ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূূর্ত ভাবে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কেউ আন্দোলনে সামিল হতে চাইলে আপনাদের অধিকার নেই তাতে বাধা দেওয়ার।” আর এক জন বলছেন, “চিড়িয়াখানার খাঁচায় যে ভাবে পশুপাখিদের বন্দি করে রাখা হয়, আপনারা সে ভাবেই পড়ুয়াদের গেটে তালা দিয়ে বন্দি করে রেখেছেন।”
বাইরে তখন চলছে বিক্ষোভ।
কিছুটা অপ্রত্যাশিত এই ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবিথী স্কুলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চারটি বাম ছাত্র সংগঠন রাজ্য জুড়ে যে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, তা সফল করতে এ দিন গাইঘাটার ওই স্কুলে হাজির হয়েছিল বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ আন্দোলনকারীরা স্কুলে ঢুকে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের কাছে ক্লাসে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। প্রধান শিক্ষক তাঁদের সাফ জানিয়ে দেন, ক্লাসে গিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। তিনি তাঁদের স্কুল চত্বরের বাইরে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাঁরা বাইরে বেরিয়ে গেলে স্কুলের গেটগুলিতে তালা দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের অফিসিয়াল কাজের জন্য সহকর্মীদের বাইরে পাঠাতে হয়। সে সময় গেটের তালা খুলতেই দু’বার ওই যুবকেরা স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়েন। পরে অবশ্য তাঁদের বাইরে বেরও করে দেওয়া হয়েছে।” স্কুল গেটের সামনে নাগাড়ে মাইকে চিত্কার চেঁচামেচির ফলে প্রায় এক ঘণ্টা শিক্ষকদের ক্লাস নিতে প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। পড়ুয়াদেরও মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে স্কুল সূত্রের খবর। শেষমেশ আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টা নাগাদ ফিরে যেতে বাধ্য হন। তারপর থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই দিনভর ক্লাস হয়েছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এসএফআইয়ের গাইঘাটা পূর্ব লোকাল কমিটির আহ্বায়ক পার্থজিত্ সাহা বলেন, “আমরা কাউকে জোর করে বেরিয়ে আসতে বলিনি। তবে কেন পড়ুয়াদের আটকে রাখা হবে?” গাইঘাটার বেশ কয়েকটি স্কুলে এ দিন পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল কম। গোপালনগর-সহ বনগাঁ মহকুমার কিছু স্কুল অবশ্য কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন।
ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy