উল্টে পড়া ট্রাক। ইনসেটে, ইটের ঘায়ে জখম চালক। —নিজস্ব চিত্র।
সবে আলো ফুটেছে। বুধবার ভোরে, বনগাঁ-চাকদহ সড়ক ধরে ছুটে চলা চাল বোঝাই ট্রাকটিকে হাত দেখিয়ে দাঁড়াতে বলেছিল স্থানীয় পুজো কমিটির ছেলে-ছোকরারা। গতি বেশি থাকায়, ট্রাকটি থামতে সময় নিয়েছিল একটু। সাত সকালেই চাঁদা আদায়ে নেমে পড়া ওই যুবকদের তাতে তর সয়নি। চালক ট্রাক থামাতে দেরি করছে দেখে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে তারা। চালকের মুখ ফেটে রক্তারক্তি কাণ্ড। শুধু তাই নয়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটিও দাঁড়িঘাটা সেতুর কাছে উল্টে যায়।
বেগতিক দেখে ওই যুবকেরা চম্পট দিলেও, উল্টে যাওয়া ট্রাকের বেশ কয়েক বস্তা চালও নিয়ে যায় তারা। এ ক্ষেত্রে ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে আসে টহলদারি পুলিশই। তারাই আহত চালক নারায়ণচন্দ্র বসুকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই চালকের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় পুজো কমিটির সদস্য কালু সাধুখাঁকে। তবে ওই পর্যন্তই। দাঁড়িঘাটা এলাকার ওই পুজো বন্ধ করার ব্যাপারে গোপালনগর থানার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কিন্তু কেন?
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “পুজো কমিটিতে ভাল-মন্দ সব ধরনের মানুষই তো রয়েছেন। তাই পুজো বন্ধ করে পুলিশ অতটা কড়া হতে চায়নি।” তাঁর দাবি, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তা হলে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হল কিসের ভিত্তিতে? জবাব দিতে পারেননি ভাস্করবাবু।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানান, জোর করে চাঁদার জুলুমের সঙ্গে ‘তোলাবাজি’র কোনও ফারাক নেই। সে ক্ষেত্রে শুধু জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারই নয়, সংশ্লিষ্ট পুজোও বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “তোলাবাজি ও চাঁদার জুলুম প্রায় সমার্থক শব্দ। আইনের চোখে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ।” তাঁর ব্যাখ্যা, চাঁদার জুলুম এবং জোর করে চাঁদা আদায়ের সময়ে খুনের হুমকি, মারধর অভিযোগে থাকলে ৩৮৪, ৩৮৫ এবং ৩৮৬ ধারায় মামলা করা যেতে পারে। এমনকী, ওই পুজোও বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক বলেও তাঁর মন্তব্য। ওই ধারায় মামলা রুজু করলে, অভিযোগ প্রমাণ হলে অন্তত তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
রাজ্যেই এর নজির রয়েছে। জেলা পুলিশের খবর, এ বছর বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় চাঁদার জুলুমবাজির জেরে অন্তত ৪টি পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন, গোপালনগরের ওই পুজো তার ব্যতিক্রম হবে কেন?
বিভিন্ন পালা-পার্বণের মরসুমে রাস্তাঘাটে গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়ের ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। দুই ২৪ পরগনায় তার বহর যথেষ্ট বেশি বলেই দাবি করেছেন ‘ফেডারেশন অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’। এ ব্যাপারে দুর্গা পুজোর পরে তারা মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবহণমন্ত্রীর কাছে দরবারও করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। চিঠি দিয়ে আগাম সতর্ক করা হয়েছিল রাজ্য পুলিশের এডিজি ট্র্যাফিক-কে। তবে পুলিশ যে সে ব্যাপারে সতর্ক হয়নি, তা বিভিন্ন জেলা পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগেই স্পষ্ট। ফেডারেশনের সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন চলতে থাকলে উৎসবের মরসুমে ট্রাক চালানোই মুশকিল হয়ে উঠবে।” গোপালনগরের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy