Advertisement
E-Paper

চি়ড়িয়াখানা এবং শহরতলির আদলে তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ

বাঘ, হাতি, ভাল্লুক, কুমিরের সঙ্গেই দেখা মিলবে গা ছমছমে হানাবাড়ির। একই সঙ্গেই থাকছে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের পুজোয় খরচ হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা! বসিরহাট শহরের সঙ্গেই টাকি, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া কিংবা মিনাখাঁয় শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর কাউন্ট-ডাউন। বাইরে কর্মরতেরা ইতিমধ্যেই গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৪
আমরা সবাই ক্লাবের আলোকসজ্জা।

আমরা সবাই ক্লাবের আলোকসজ্জা।

বাঘ, হাতি, ভাল্লুক, কুমিরের সঙ্গেই দেখা মিলবে গা ছমছমে হানাবাড়ির। একই সঙ্গেই থাকছে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের পুজোয় খরচ হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা! বসিরহাট শহরের সঙ্গেই টাকি, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া কিংবা মিনাখাঁয় শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর কাউন্ট-ডাউন। বাইরে কর্মরতেরা ইতিমধ্যেই গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন।

ইছামতীর নদীর ধার ঘেঁষে তৈরি বসিরহাট শহর ও তার আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি। তবে এখানে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যাও কয়েকশো। এ বার ত্রিমোহনী এলাকায় বসিরহাট ব্রিক সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে জ্বলবে প্রায় এক লক্ষ জলন্ত প্রদীপ। উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি এই প্রদীপ থেকে অগ্নিকাণ্ডের কোনও ভয় নেই। এ বার প্রতিমা, মণ্ডপ, আলোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা।’’ বসিরহাট জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠ এ বার ৮৫ বছরে পা দিয়েছে। এখানে প্লাইউডের উপর প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে শিল্পী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় তৈরি করছেন প্রায় ৯০ ফুট উঁচু নেপালের বৌদ্ধনাথ মন্দির। এখানে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতায় উঠে জলন্ত প্রদীপের আলোর মধ্যে দিয়ে প্রতিমা দেখতে হবে। বাহারি আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে গোটা এলাকা। এই পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম জয়ন্ত কুণ্ডু জানান, তাঁদের এ বারের বাজেট প্রায় ১২ লাখ টাকা। বসিরহাট কলেজের সামনে টাকি রাস্তার পাশে প্রান্তিক ক্লাব তৈরি করছে কাপড়-থার্মোকল দিয়ে কারুকাজ করা প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ। অন্য দিকে, বাজারপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আকর্ষণ হল কুমারটুলি থেকে আনা প্রতিমা।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ইটিন্ডা রাস্তার পাশে ১১ পল্লি, সঙ্ঘশ্রী, দেবদূত সঙ্ঘ এবং জামরুলতলা যুবক সঙ্ঘের প্রতিমা দর্শকদের নজর কাড়বে। আর্শীবাদ, বিধান সঙ্ঘ, প্রভাতী সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, অর্ঘ্য, সাহিত্য সঙ্ঘ, বলাকা, দি প্রগ্রেসিভ রিজেন্ট ক্লাব, নবশ্রী, রত্নদ্বীপ, স্মৃতি সঙ্ঘের আলো এবং মণ্ডপ আকর্ষণীয়। ইছামতি সঙ্ঘের এ বারের থিম হল হানাবাড়ি। উদ্যোক্তারা জানান, ভূতের বাংলোর আদলে মণ্ডপটি তৈরি করছেন শিল্পী সুজিত রায়। অগ্রগামী পুজো কমিটি ৫৭তম বর্ষে তৈরি করেছে হনুমান মন্দির। ‘উই দ্য গ্রিনে’র এ বারের থিম উত্তরণ। মণ্ডপের শিল্পী সোমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এককোষী প্রাণী থেকে কী ভাবে মানুষের জন্ম হল সেটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নৈহাটি তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপে থাকছে দুর্গা, কালী-সহ অনেক দেবদেবী এবং বাহারি মডেল। হুগলির বাঁশবেড়িয়া থেকে আসা শিল্পীরা বদরতলা রিক্রিয়েশন ক্লাবে এ বার তৈরি করছেন আস্ত একটা চিড়িয়াখানা। ওই ক্লাবের সম্পাদক প্রিয়ব্রত সরকার বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানায় থাকছে জীবন্ত পাখি, মাছ, রাজহাঁস, সাপ, বাঁদর, ঘোড়া। এছাড়াও থাকছে কৃত্রিম ভাবে তৈরি সিংহ, হাতি, বাঘ, ভাল্লুক, কুমির।’’ মণ্ডপের মধ্যে একটি গোটা শহরতলি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে নৈহাটি শক্তি সঙ্ঘ। নিয়নের আলো দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে তাক লাগাতে চাইছে বসিরহাটের আমরা সবাই। নিউ উদয় সঙ্ঘ, মিলন সঙ্ঘ, টাউন ক্লাব, বিদ্যুৎ সঙ্ঘ, অমর সঙ্ঘ, বিধান স্মৃতি সঙ্ঘ, জাগ্রত সঙ্ঘ, বিবেকানন্দ সঙ্ঘের মণ্ডপে থাকছে বাহারি আলোকসজ্জা। হাড়োয়ার ব্রাহ্মণচক নেতাজি সঙ্ঘের মণ্ডপ হচ্ছে রাজভবনের আদলে। বসিরহাটের দ্য ইয়ং সেন্টারে থাকছে বাহারি আলো।

উদ্যোক্তারা জানান, দক্ষিণ ভারতের বিবেকানন্দ মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করছে দেশবন্ধু অ্যাথলেটিক ক্লাব। মণ্ডপের সামনেই রামকৃষ্ণ, সারদা, বিবেকানন্দের পাশাপাশি দুর্গা প্রতিমারও বড় কাট আউট থাকছে। চন্দননগরে আলো দিয়ে সাজানো হচ্ছে নবারুণ সঙ্ঘ, ভারতী সঙ্ঘ, ইউনাইটেড ক্লাবের মণ্ডপ। আকর্ষণীয় মণ্ডপ তৈরি করেছে ইয়ং স্টার ক্লাব এবং বিদ্যুৎ সঙ্ঘ। দি নিউ মুন ক্লাবে ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহেশ্বর-সহ দুর্গাপ্রতিমা দর্শকদের মন কাড়বে। মাটির দেওয়াল এবং খড়ের চালের ঘরে দুর্গাবন্দনা করছে সবুজ সঙ্ঘ। প্রভাতী সঙ্ঘ, সংস্কৃতি সঙ্ঘ, আশ্রমপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব, মহুয়া সঙ্ঘ, স্মৃতি সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, নেতাজি সঙ্ঘ, জাগ্রত সঙ্ঘ, কল্লোল, আজাদ হিন্দ সঙ্ঘ, নবপল্লির মণ্ডপের প্রতিমাও দর্শকদের কাড়বে বলে দাবি।

উদ্যোক্তাদের দাবি, সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ তৈরি করছে নবীন সঙ্ঘ। দণ্ডিরহাট এলাকায় অভ্যুদয় সঙ্ঘের ঢাকের সাজের প্রতিমা দর্শকের মন কাড়বে। নেপালের বৌদ্ধ মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপ করেছে প্রগতি সঙ্ঘ। চৌমাথার বিধান সঙ্ঘ, যুব যাত্রী এবং দেশপ্রিয় ব্যায়াম সমিতির পূজো আলো এবং প্রতিমা মানুষের মন কাড়বে। বিদেশি বাড়ির অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করেছে স্বরূপনগরে শাঁড়াপুল ডাকবাংলো গ্রামবাসীবৃন্দ। খোলাপোতার হিমাচল সঙ্ঘ, নেহালপুর অভিযান সঙ্ঘ, বাদুড়িয়ায় পাইওনিয়ার ক্লাবের আকর্ষণ হল বাহারি আলো। সুন্দর মণ্ডপ করেছে অগ্নিবীণা, মুক্তি সঙ্ঘ, অভিযাত্রী, নবশ্রী, যুবশান্তি সঙ্ঘ। মিনাখাঁর মালঞ্চ তরুণ সঙ্ঘ বাদামের খোসা এবং তুষ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছে। টাকির রিক্রিয়েশন ক্লাব, থুবা ব্যায়াম সমিতি, বিবেকানন্দ স্পোটিং, মিলন সমিতি, আর্কিড, হিঙ্গলগঞ্জের টাইগার ক্লাব, পল্লি উন্নয়ন সংস্থা, পথের দাবি, গ্রামাট্রিক ক্লাব এবং শঙ্কর সমিতির সুন্দর মণ্ডপ বাহারি আলো এবং প্রতিমাও দর্শক টানবে বলে উদ্যোক্তাদের আশা।

ছবিগুলি তুলেছেন নির্মল বসু।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy