Advertisement
E-Paper

ছিঁচকে চোর ভেবে হামিদকে পিটিয়ে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা

বোমা বাঁধতে গিয়ে ডান হাতের কজ্বি থেকে পাঞ্জাটা উড়ে গেলে কী হবে, বাঁ হাতে রিভলবার ধরে সমানে গুলি-বোমা ছুড়তে ওস্তাদ সে। রাম দা হাতে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেও দড় আব্দুল হামিদ দপ্তরি। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকাতে ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক-অস্ত্র পাচার, তোলা আদায়ের ভুরি ভুরি অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
হামিদ দপ্তরি।

হামিদ দপ্তরি।

বোমা বাঁধতে গিয়ে ডান হাতের কজ্বি থেকে পাঞ্জাটা উড়ে গেলে কী হবে, বাঁ হাতে রিভলবার ধরে সমানে গুলি-বোমা ছুড়তে ওস্তাদ সে। রাম দা হাতে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেও দড় আব্দুল হামিদ দপ্তরি। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকাতে ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক-অস্ত্র পাচার, তোলা আদায়ের ভুরি ভুরি অভিযোগ।

বসিরহাটের গয়ড়া গ্রামের বিষ্টুপুরে দোতলা বাড়ি বছর পঁয়তাল্লিশের হামিদের। তার নাম শুনলে এলাকার মানুষ আতঙ্কে জড়সড় হয়ে পড়েন। একাধিকবার ধরা পড়ে জেল খাটলেও অপরাধের রাস্তা থেকে সরে আসেনি সে। অনেক বাড়ির মহিলারা নাকি বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর সময়ে ‘হাত কাটা হামিদ’-এর ভয় দেখায়। ঠিক যেন শোলের গব্বর সিংহ।

তবে এলাকায় তার দাপট বড় একটা দেখাত না হামিদ। বরং এলাকার মানুষ টাকা-পয়সা চাইলে সাহায্যও পেত তার কাছে। এলাকায় সে পরিচিত ‘মাস্টার’ নামে।

পুলিশের রেকর্ড বলছে, বছর সতেরো আগে একবার বাড়ির পিছনে বোমা বাঁধার সময়ে বোমা ফেটে তার ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। তবে মাস তিনেক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এলাকার কাউকে কাউকে হামিদ নাকি বলেছিল, অনেক হয়েছে। আর নয়। এ বার সব ছেড়েছুড়ে সুস্থ জীবনে ফিরবে।

ফিরব বললেই কী আর ফেরা যায়? স্বভাব যাবে কোথায়! এলাকারই একটি সোনার দোকানে সাটার কেটে, গ্রিল ভেঙে চুরির পরিকল্পনা করেছিল হামিদ। তা করতে গিয়ে ধরাও পড়েছে। কিন্তু সে ঘটনাও বেশ নাটকীয়।

ঘটনাটা রবিবারের। রাতের দিকে সে দিন ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। লোডশেডিং। চার দিকে নিকষ কালো। শব্দ শুনে লোকজন এসে ধরে ফেলে চোরকে। নগরকচুয়া বাজার এলাকার মানুষ যখন সাধারণ চোর ভেবে বেদম পেটাচ্ছেন হামিদকে, তখনও তার পরিচয় বুঝে উঠতে পারেননি কেউ। এমনকী, পুলিশে হাতে তুলে দেওয়ার পরেও তার পরিচয় জানা যায়নি। তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামিদের এক সঙ্গে অবশ্য আগেই পালিয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু লোকজন যখন জেনে গিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী আসলে হামিদ, তাঁদের এখন আত্মারাম খাঁচাছাড়া। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হাতকাটা হামিদ কী রকম প্রতিশোধ তুলবে, তা ভেব এখনই রাতের ঘুম ওড়ার জোগাড় লোকজনের। সকলে এতটাই ভয় পেয়েছেন, কেউ নাম জানাতেও চাইলেন না। বরং উত্তর মিলল, “কেন নাম জানতে চেয়ে আমাদের বিপদ আরও বাড়াতে চাইছেন।”

ভয়ে আছেন বিষ্টুপুরের মানুষও। হামিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁদের মুখে। অনেক বার কাকুতি-মিনতি করে জানা গেল, ছোট থেকেই অসৎ সঙ্গে পড়ে বখে যাওয়া কিশোরই এখন ভয়ঙ্কর দুষ্কৃতী হামিদ।

বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, “চুরি-ছিনতাই হামিদের কাছে সামান্য ব্যাপার। বড় বড় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ওঠাবসা তার। হামিদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা ডাকাতির অভিযোগ আছে।’’ পুলিশ জানায়, বয়স বাড়ায় ইদানীং অনেক অপারেশনে নিজে যেতে না পারলেও লোক ভাড়া করে এনে দুষ্কর্ম ঘটায় হামিদ। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হামিদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমার হাতে সে একবার ধরা পড়েছিল। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের অন্ধকারের পথে নেমে পড়েছে।”

ঘটনার দিন খবর পেয়ে দেগঙ্গা, বসিরহাট এবং বাদুড়িয়া থানার পুলিশ এসেছিল। জনতার অভিযোগ, দেগঙ্গা এলাকায় প্রায়ই চুরি হচ্ছে। আর এ সবের পিছনে আছে হামিদই।

hamid daptari basirhat anti social southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy