Advertisement
E-Paper

দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য কমায় কিছুটা স্বস্তি হাবরায়

গ্রামীণ পরিবেশ পাল্টে দিন দিন ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠছে শহর হাবরা। বড় বড় দোকানপাট, শপিং মল, রেস্তোঁরা তৈরি হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা, এটিএম সব মিলিয়ে এলাকার আর্থিক চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। ব্যবসার বড় কেন্দ্র হওয়ায় এলাকায় বড়সড় টাকার লেনদেনও হয়। গত কয়েক বছরে জমির দাম হু হু করে বেড়েছে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫০

গ্রামীণ পরিবেশ পাল্টে দিন দিন ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠছে শহর হাবরা। বড় বড় দোকানপাট, শপিং মল, রেস্তোঁরা তৈরি হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা, এটিএম সব মিলিয়ে এলাকার আর্থিক চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। ব্যবসার বড় কেন্দ্র হওয়ায় এলাকায় বড়সড় টাকার লেনদেনও হয়। গত কয়েক বছরে জমির দাম হু হু করে বেড়েছে। ৭-৮ লক্ষ টাকা কাঠা তো বটেই জায়গা বিশেষে ১৫-২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক কাঠা জমি। শুরু হয়েছে ফ্ল্যাট তৈরি। স্কোয়ার ফুটের হিসাবে ১৮০০-২০০০ টাকায় সে সব ফ্ল্যাট বিক্রিও হচ্ছে দিব্যি। রাস্তায় আলো বসেছে। প্রতি ওয়ার্ডে ঢোকার মুখে আছে সুদৃশ্য তোরণ। সব মিলিয়ে কলকাতার কাছে বড় শহর হয়ে ওঠার সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার এই অংশে।

দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তে অতিষ্ঠ ছিলেন হাবরাবাসী। ইদানীং তাদের দৌরাত্ম্য কমেছে বলেই জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে এলাকার মানুষ ও ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বাইরে থেকে অপরাধ সংগঠিত করে দুষ্কৃতীরা এখানে এসে নিরাপদে গা ঢাকা দিয়ে থাকত। দুষ্কৃতীদের অবাধ গতিবিধি দেখতে অভ্যস্থ ছিলেন হাবরার মানুষ। সাম্প্রতিক অতীতে সব থেকে বড় ঘটনা ঘটে স্থানীয় প্রফুল্লনগর এলাকায় একটি রক্তদান শিবিরে। দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি ছুড়ে খুন করে প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরী ও তৃণমূল কর্মী রণজিৎ রায় ওরফে নিগ্রোকে। ডাকাতি, খুন, লুঠ, কেপমারি, চুরি, ইভটিজিং, ধর্ষণ, বোমাবাজি-তোলা ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। জুয়া-সাট্টার ঠেক চলত রমরমিয়ে। শহরে শ’তিনেক সোনার দোকান আছে। কয়েক বছর আগে স্টেশন রোডে একটি সোনার দোকানে ভরসন্ধ্যায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। বেশ কিছু দিন আগে শহরের নামকরা মিষ্টির দোকান থেকে দুষ্কৃতীরা টাকা-ভর্তি লোহার সিন্দুক ডাকাতি করে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার কিনারা আজও হয়নি। ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে এসে কেপমারদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন বহু মানুষ। স্কুলের পথে ছাত্রীরা ইভটিজারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে, এমন নমুনাও আছে। রাজ্যের অন্যতম বড় চালের বাজার হাবরায়। সেখান থেকে ব্যবসার টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা বহু বার ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই করেছে।

সম্প্রতি শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধায়ক তহবিলের টাকায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা। প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ১৪টি পয়েন্টে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, হাবরা একটি ব্যবসায়ীক এলাকা। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। ব্যবসার প্রয়োজনে বহু মানুষ বাইরে থেকে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ব্যবসায়ীদের তো বটেই শহরের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেও ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর ফলে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। পুলিশের দাবি, নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়। হাবরা চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গোপাল সাহা বলেন, “স্থানীয় বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে এলাকায় একটি সান্ধ্য ব্যাঙ্ক চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। উনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই তা চালু হয়ে যাবে। তা হলে চাল ব্যবসায়ীরা খুবই উপকৃত হবেন।”

শহরের নানা উন্নতির পরেও যানজট-নিকাশির মতো হাবরার মানুষের ক্ষোভ আছে চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে। হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভাঙচুর, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছু দিন আগে পর্যন্ত। গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠত মাঝে মধ্যে। সামান্য জটিলতা থাকলেও রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়ার প্রবণতা ছিল বলে অভিযোগ। তবে ইদানীং পরিষেবার মান অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। হাসপাতালের মধ্যেই ছিল খাটাল। হাসপাতালে ঢোকার মুখে ছিল অটো ও ট্রেকারের স্ট্যান্ড। সে সব সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির কাজ চলছে। চালু হয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। চোখের অস্ত্রোপচারের যন্ত্র বসানো হয়েছে। বসেছে ১০০ কেভির একটি জেনারেটর। রোগীর আত্মীয়-পরিজনের রাতে থাকার জন্য রাত্রি নিবাস তৈরি হবে।”

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরকে ঢেলে সাজতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। জয়গাছি সুপার মার্কেটে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় আধুনিক বাস টার্মিনাস তৈরি করা হচ্ছে। হাবরায় কোনও রাতে থাকার মতো হোটেল নেই। পুরসভা জমি কিনে একটি আবাসিক হোটেল ও অনুষ্ঠানগৃহ তৈরি করছে। পুরসভার তৈরি ‘স্বাস্থ্যদীপে’ কম খরচে রক্ত পরীক্ষা চালু হয়েছে। চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুবীন ঘোষ বলেন, “যানজট সমস্যা মেটাতে যশোহর রোডের পাশ থেকে ৭৫ শতাংশ হকারকে তুলে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। আরও বেশি সংখ্যক বাড়িতে পানীয় জলের লাইন পৌঁছে দিতে চারটি বুস্টিক পাম্প স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। আপাতত জলের লাইন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কারণ জলের চাপ কমে গিয়েছে।”

southbengal simanta moitra habra amar sohor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy