হঠাত্ ছুটও লাগালেন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
ঘণ্টা দু’য়েকের সফরে কখনও রাস্তার পাশের বাড়িতে ঢুকে ছোলা খেয়ে, কখনও নিজেই গাড়ি চালিয়ে, কখনও হঠাত্ রাস্তায় দৌড় শুরু করে বনগাঁ মাতালেন বাবুল।
মঙ্গলবার বনগাঁয় ভোটের প্রচারে এসেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। সোমবারের মতোই এ দিনও বহু মানুষ তাঁকে দেখার জন্য ভিড় করেন।
এ দিন বনগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র বাটার মোড়ে বাবুল যখন পৌঁছন, ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁয়েছে। নীল ফেডেড জিন্স আর ছাইরঙা জামা পরা তারকা সাংসদের জন্য প্রার্থী সুব্রত এবং দলের নেতা কেডি বিশ্বাস আগে থেকেই হুডখোলা জিপ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বাবুল আসছেন শুনে রীতিমতো ভিড় জমে যায় সেখানে। সুব্রত গাড়িতে উঠতে বলেন বাবুলকে। কিন্তু তখন থেকেই যেন হাজারো চমক অপেক্ষা করে ছিল বনগাঁবাসীর জন্য। গাড়িতে না উঠে বাবুল সটান ঢুকে পড়েন পাশের কাপড়-জামার মার্কেটে। ব্যবসায়ীরা তো হতবাক। মার্কেটের দোতলাতেও তরতরিয়ে উঠে পড়েন বাবুল। মিনিট দশেক পরে নেমে আসেন কাচের গ্লাসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে।
কফি শেষ করেই এক লাফে জিপে উঠে পড়েন। তাঁকে দেখতে গোবরডাঙা থেকে এসেছিলেন সুশীল দাস। সুযোগ মিলতেই পকেট থেকে লজেন্স বের করে এগিয়ে দিলেন। বাবুল লজেন্স নিয়ে মুখে চালান করে দিলেন। হাত বাড়িয়ে আরও একটি চেয়েও নিলেন। গাড়ি চলতে থাকল যশোহর রোড ধরে বনগাঁর ১ নম্বর রেলগেটের দিকে। সময় যত গড়াচ্ছিল, ভিড়টা বড়সড় মিছিলের চেহারা নিচ্ছিল। গাড়ি নিয়ে এগোনো দুষ্কর হচ্ছিল। জনতাকে সামলাতে আধা সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের কালঘাম ছোটে। নিরাপত্তারক্ষীদের ফাঁক গলে বাবুলের সঙ্গে হাত মেলান এক মহিলা। বাস-অটোর যাত্রীরাও মুখ বাড়িয়ে বাবুলকে দেখার বা মোবাইলবন্দি করার চেষ্টা চালান। অতি উত্সাহী এক যুবক তাঁকে একটি সানগ্লাস দেন। বাবুল তা চোখে পড়ে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন লাগছে?” উত্তরে প্রশংসা ফিরে এল বলাইবাহুল্য। বাবুল সসানগ্লাসটি ফফেরত দিতে চাইলে ওই যুবক বলেন, দাদা যদি এটা উপহার হিসাবে নেন, তবে তিনি বড্ডই খুশি হবেন। বাবুল অবশ্য সেই অনুরোধ ফিরিয়েছেন, রাস্তায় এক ভক্ত তাঁর গলায় মালা পরিয়ে দেন। পর ক্ষণেই বাবুল নিজের গলা থেকে মালা খুলে পাল্টা তাঁর গলায় পরিয়ে দেন। অটোগ্রাফ শিকারিদের অজস্র খাতা-পেন ধেয়ে আসতে থাকে তাঁর দিকে। কাউকে নিরাশ করেননি বাবুল।
নিউমার্কেট থেকে বাঁ দিকে রামনগর রোড ধরে আপনজন ক্লাবের মাঠ পর্যন্ত গিয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরে গাড়ি। পাটকাঠিতে গোবর লেপা দেখে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো এক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “এটা ঘুঁটে?” মহিলা বলেন, “না, এটা মশাল।” মহিলা জানান, তাঁদের ছোলার কারখানা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাবুল বলেন, “ছোলা খাব।” যেমন বলা তেমনি কাজ। গাড়ি থেকে নেমে মহিলার বাড়িতে ঢুকে পড়েন বাবুল। মহিলা তাঁকে ছোলা দেন। খানিকটা মুখে পুড়ে নেন। বাকিটা সঙ্গে নিয়ে নেন। মহিলাকে বলেন, “ছোলা যখন খাইয়েছেন, আপনার সঙ্গে ছবি তুলব।” মহিলা বলেন, ‘‘আশীর্বাদ করুন, কারখানা যাতে বড় হয়।” ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ফের বড়সড় চমক! এ বার গাড়িতে না উঠে আচমকাই দৌড় শুরু করেন বাবুল। এক মহিলার কোলে থাকা শিশুকন্যাকে নিয়ে আদর করেন। বাচ্চাটির বয়স জানতে চান। মহিলা বলেন, “দু’বছর।” বাবুলের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, “খুব সুন্দর দেখতে। বড় হয়ে নায়িকা হবে।”
এক বৃদ্ধা পরিবারের অসচ্ছ্বলতার কথা জানিয়ে বাড়ির কারও জন্য একটা কাজের আর্জি জানান। বাবুল তাঁকে বলেন, “সব হবে। ভোটটা শুধু বিজেপিকে দিন।” প্রায় আধ কিলোমিটার দৌড়ে যান বাবুল। বৌ-মেয়েরা তাঁকে ছেঁকে ধরেন। সুযোগ পেয়ে কেউ কেউ জড়িয়ে ধরেন। বাবুল বলেন, “শুধু ভালবাসা দিলে হবে না। ছবি তুলতে হবে।” দৌড় শেষ করে গাড়িতে ওঠেন বাবুল। তবে এ বার বেছে নেন চালকের আসন। পাশে সুব্রতকে বসিয়ে রীতিমতো দক্ষ হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাতে থাকেন। ঢাকাপাড়া পর্যন্ত গাড়ি চালান। রাস্তার হাল দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। গাড়ি থেকে নেমে বনেটে ওঠার চেষ্টা করলে চালক নিষেধ করেন। তাঁর কথা শুনে বাবুল ঝুঁকি নেননি। সুঁটিয়ার বাসিন্দা বাবুল বিশ্বাস নামে এক গাড়িচালক অনুরোধ করেন, “উত্তরীয়টা দেবে!” বাবুল কালক্ষেপ না করে নিজের গলা থেকে উত্তরীয় খুলে তাঁকে পড়িয়ে দেন। তখন ওই যুবকের আনন্দ দেখার মতো!
বেলা ৩টে নাগাদ কলকাতার দিকে রওনা হন বাবুল। তাঁর আগে বলে যান, “আমাকে ভালবাসলেই হবে না। সুব্রতকে ভোটটা দিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy