Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাচন বড় বালাই, সাজছে পার্ক ও রাস্তা

সাজছে ইছামতীর ধারের পার্ক। পিচ পড়ছে রাস্তায় রাস্তায়। পুরভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা বিজেপিকে রুখতে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করছে শাসক দল। তাই আলো, রাস্তা, নিকাশি নালা, পানীয় জল-সহ এক গুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে সামনে রেখে বসিরহাট পুর এলাকা সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উদ্যোগে তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে কাজও।

আবুদৈয়ান রোড। —নিজস্ব চিত্র।

আবুদৈয়ান রোড। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৫
Share: Save:

সাজছে ইছামতীর ধারের পার্ক।

পিচ পড়ছে রাস্তায় রাস্তায়।

পুরভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা বিজেপিকে রুখতে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করছে শাসক দল। তাই আলো, রাস্তা, নিকাশি নালা, পানীয় জল-সহ এক গুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে সামনে রেখে বসিরহাট পুর এলাকা সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উদ্যোগে তড়িঘড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে কাজও।

সম্প্রতি বসিরহাটে সেচ দফতরের বাংলোয় বৈঠকে পুরসভার চেয়ারম্যান অতসী আন, ভাইস-চেয়ারম্যান অমিত দত্ত-সহ দলের কাউন্সিলর এবং বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে দলের চেয়ারম্যান ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে এক কোটি টাকা ব্যয়ে পুর এলাকায় নানা উন্নয়নমূলক কাজের কথা ঘোষণা করেন সাংসদ ইদ্রিশ আলি। সেখানে সাংবাদিক বৈঠকে পুর এলাকা আলোর সাজানো, রাস্তার উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের গাড়ি, নালা পরিষ্কার এবং ইছামতী নদী সংলগ্ন পার্কগুলি আধুনিক পরিকাঠামোয় গড়ে তোলার কথা বলেন ইদ্রিশ এবং দীপেন্দু। সেই ঘোষণার পরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাস্তা সংস্কার এবং পার্ক চওড়া করার কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দদের অনেকেই মনে করেন, ভোটের কথা মাথায় রেখেই তড়িঘড়ি এই উদ্যোগ। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, দেরিতে হলেও পুরসভার যে এ বার টনক নড়েছে, তা ভাল। তাঁদের মতে, পর্যটকদের কাছে ইছামতী ভিন্ন মাত্রা বহন করে। পুর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে যে-ই থাকুন না কেন, শহর সাজানোর দিকে কাউকে মন দিতে দেখা যায় না বললেই চলে। টাকি, বাদুড়িয়া এবং বসিরহাটতিনটি পুরসভা তৃণমূলের হাতে থাকা সত্ত্বেও বিধানসভা ভোটে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলের নিরিখে বসিরহাট পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে তৃণমূল, বিজেপির থেকে ভোটে পিছিয়ে। যার জেরে তৃণমূলের কপালে এই চিন্তার ভাঁজ। তাই ভোটের বাদ্যি বেজে উঠতেই উন্নয়ন দিয়ে ছিদ্র বোজানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

তিন মাস হল অনাস্থায় কংগ্রেসকে পরাজিত করে বসিরহাট পুরসভার দখল পেয়েছে তৃণমূল। ক্ষমতায় এসে পানীয় জল এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করাই প্রথম লক্ষ্য হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান। কিন্তু বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাসের পরাজয়ের পিছনে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়া একটা বড় কারণ বলে মনে করেন দলেরই একাংশ। তাই আর কোনও প্রতিশ্রুতি না দিয়ে আসন্ন পুরভোটের আগে তৃণমূলের পুরবোর্ড যে কাজ করে দেখাতে চাইছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন দলের নেতাদের একাংশও।

ইদ্রিশ জানান, শহরকে নতুন করে সাজাতে প্রথম পর্যায়ে ইছামতী সেতুর ধারে বোটঘাট, বসিরহাট স্টেশনের কাছে ময়লাখোলা, চৌমাথা এবং ত্রিমোহনী এলাকায় বিশেষ আলো লাগানোর টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। পরে টাউন হল, কলেজ এবং ভ্যাবলা স্টেশন এলাকাতেও ওই আলো লাগানো হবে। এ ছাড়াও সব ওয়ার্ডে দু’হাজার আলো লাগানো হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে হেলথ ক্যাম্প করা হবে। পানীয় জলের অভাব মেটাতে ১০টি জলের ট্যাঙ্কের পাশাপাশি ৪টি মশা মারার কামান ও ময়লা পরিষ্কারের জন্যও গাড়ি কেনা হচ্ছে। সাংসদের দাবি, প্রয়োজনে বসিরহাটের উন্নয়নের জন্য তাঁর সাংসদ তহবিল থেকেও অর্থ সাহায্য করা হবে। দীপেন্দু বলেন, “পানীয় জল, রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলা শাসক-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে মাস্টার প্লান তৈরি হয়েছে।”

শহরের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের এই প্রচেষ্টাকে কী ভাবে দেখছে বিরোধী দলগুলি?

কংগ্রেস নেতা বাবলি বসু বলেন, “বিজেপির ভয়েই কাজের এত ফিরিস্তি। আগে প্রতিশ্রুতি মতো কাজ হোক। পরে যা বলার বলব।” সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “নির্বাচন আসন্ন। তাই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে। কাজ হলে প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না।” বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “এ শহরের রাস্তার যা হাল সকলেই জানেন। আমিই বিধানসভায় সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছি। রাস্তা-সহ শহরের উন্নয়ন যদি সত্যিই হয়, খুশি হব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

municipal vote nirmal basu roads repairing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE