Advertisement
E-Paper

প্রতারিত স্বাস্থ্যকর্মীকে স্বাস্থ্যভবনের ঘরে বসিয়ে পালিয়েছিল প্রতারকেরা

মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের ভয় দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধরা পড়েছে আরও দু’জন। বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের গাড়িটি। গত কয়েক মাস ধরে হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হাড়োয়া-সহ উত্তর ২৪ পরগনার নানা জায়গা থেকে প্রতারণার অভিযোগ আসছিল পুলিশের কাছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সাবধান করে নির্দেশিকা জারি করেন বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩১

মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের ভয় দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধরা পড়েছে আরও দু’জন। বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের গাড়িটি।

গত কয়েক মাস ধরে হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হাড়োয়া-সহ উত্তর ২৪ পরগনার নানা জায়গা থেকে প্রতারণার অভিযোগ আসছিল পুলিশের কাছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সাবধান করে নির্দেশিকা জারি করেন বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেখানে বলা হয়, কোনও ভাবে কাউকে যেন তাঁরা টাকা না দেন। স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “প্রতারিত হওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা ধৃতদের সনাক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে যেন আগে দফতরকে জানানো হয়, সে জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জানানো হয়েছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, সোমবার বারাসাতের ছোট জাগুলিয়ার বাগপুল থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই তিন জনকে ধরে মারধর করে দত্তপুকুর থানার হাতে তুলে দেন।

পুলিশ জানায়, মূল অভিযুক্ত প্রৌঢ়ার নাম রীতা রায়। বাড়ি ডায়মন্ড হারবারের সরিষায়। গাড়ির মালিক প্রিয়ব্রত মাইতি এবং চালক মাদাই সর্দারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই তিন জনের সঙ্গে প্রতারণা চক্রে আর কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রীতা নিজেকে নানা জায়গায় সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিত। সে সত্যি কোনও সরকারি দফতরে কাজ করে কিনা, তা-ও তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে নিজেকে ‘সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়’ বলে পরিচয় দিয়ে নানা জায়গায় ঘুরছিল বছর উনষাটের রীতা। স্বাস্থ্য দফতরের হয়ে হাইককোর্ট আইনি বিষয়ে দেখভাল করে বলে দাবি করেছিল সে। নানা ভাবে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করছিল দলটি। এ দিন রীতারা একটি সাদা দামি গাড়ি চড়ে ছোট জাগুলিয়ার জয়পুর গ্রামে আসে। সেখানে তখন শিশুদের টিকা দেওয়ার কাজ করছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী গীতাঞ্জলি দেবনাথ। কাজের পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয় রীতা। তাঁকে গাড়িতে উঠতে বলে। অভিযোগ গাড়িতে বসে গীতাঞ্জলিদেবীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

এ ধরনের প্রতারণার ব্যাপারে সংবাদপত্রে খবর পড়েছিলেন গীতাঞ্জলিদেবী। স্বাস্থ্যকর্তার নির্দেশও তাঁর জানা ছিল। সন্দেহ হওয়ায় তিনি চিৎকার শুরু করেন। তাঁকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালায় রীতারা। এরপরে তারা যায় চালতাবেড়িয়া গ্রামে। সেখানে তখন কাজ করছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী বুলু হোমচৌধুরী। একই ভাবে তাঁর কাছ থেকেও টাকার দাবি করে ওই মহিলা। তত ক্ষণে অবশ্য প্রতারক দলটির কথা মোবাইলে মাধ্যমে গীতাঞ্জলির কাছ থেকে জানতে পেরেছেন বুলু। তাঁর চিৎকারেও ভয় পেয়ে পালায় দলটি।

দুপুরের দিকে তারা পৌঁছয় বাগপুল গ্রামে। সেখানে মৌসুমী সুলতানা নামে এক স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে একই ভাবে টাকা দাবি করে। তিনি গ্রামবাসীদের খবর দিলে তাঁরা গাড়ি ঘিরে ফেলে রীতা-সহ বাকিদের ধরে পেটান। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্তদের সনাক্তকরণের জন্য প্রতারিত হওয়া হাড়োয়ার বাসিন্দা মিতা সাহাকে দত্তপুকুর থানায় পাঠান। মিতাদেবীই ধৃতদের সনাক্ত করেন।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার হাড়োয়ার শালিপুরের হরিপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের টিকা দিচ্ছিলেন মিতাদেবী। বেলা ৩টে নাগাদ সেখানে একটি দামি সাদা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ঝকঝকে চেহারার রীতা এক সঙ্গী নিয়ে নামেন। তারা জানায়, হাইকোর্ট থেকে আসছে। পুরনো একটি প্রসঙ্গ টেনে মিতাদেবীকে দায়ী করে আড়াই লক্ষ টাকা দাবি করে তারা। ৭০ হাজার টাকা দিলে বিষয়টি মিটমাট হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় মিতাদেবীকে। এ সব না করলে মিতাদেবীর চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলেও ভয় দেখানো হয়।

মিতাদেবী লাউহাটি এলাকার একটি এটিএম থেকে ৫৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে দেন রীতাদের হাতে। আর টাকা না থাকায় গয়নাগাটিও খুলে দিয়ে দেন। মিতাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিকাশভবনে। সেখানে একটি ঘরে বসিয়ে ‘এখুনি আসছি’ বলে বেরিয়ে যায় ওই প্রতারক মহিলা ও তার সঙ্গী। সন্ধের পরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পুলিশ গিয়ে মিতাদেবীকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, হাসনাবাদের ভেবিয়ার শুভ্রা পাল, মিনাখাঁর চৈতল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কুমকুম চট্টোপাধ্যায়, মালঞ্চের রেহেনা বিবির মতো আরও কয়েক জনকে এ ভাবেই ঠকিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েছে রীতা ও তার দলবল।

nirmal basu basirhat fraud case health workers southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy