Advertisement
E-Paper

পুরসভার সাফল্যের মধ্যেও কাঁটা যানজট

গত ২২ জুন চার বছরে পড়ল বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। সেই উপলক্ষে কাজের খতিয়ান দিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে পুরসভা। এই চার বছরে পুরসভার কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষ সামগ্রিক ভাবে খুশি থাকলেও বনগাঁর যানজট সমস্যার কিন্তু সমাধান হল না এখনও। আর তা নিয়ে কিছুটা হলেও হতাশ পুরবাসী। প্রায় সাড়ে চোদ্দ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বনগাঁ পুর এলাকায় রয়েছে ২২টি ওয়ার্ড। প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার পরিবার বাস করেন সেখানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০১:৩১
বাঁ দিকে, এই ভবনেই চলে স্বাস্থ্যদীপ প্রকল্প। ডান দিকে, যানজটের পরিচিত দৃশ্য বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, এই ভবনেই চলে স্বাস্থ্যদীপ প্রকল্প। ডান দিকে, যানজটের পরিচিত দৃশ্য বনগাঁয়। নিজস্ব চিত্র।

গত ২২ জুন চার বছরে পড়ল বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। সেই উপলক্ষে কাজের খতিয়ান দিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে পুরসভা। এই চার বছরে পুরসভার কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষ সামগ্রিক ভাবে খুশি থাকলেও বনগাঁর যানজট সমস্যার কিন্তু সমাধান হল না এখনও। আর তা নিয়ে কিছুটা হলেও হতাশ পুরবাসী।

প্রায় সাড়ে চোদ্দ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বনগাঁ পুর এলাকায় রয়েছে ২২টি ওয়ার্ড। প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার পরিবার বাস করেন সেখানে। ২০১০ সালের পুর-নির্বাচনে তৃণমূল ৬টি আসন পায়। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫টি, সিপিএম ১০টি। নির্দল প্রার্থী পেয়েছিলেন ১টি আসন। কংগ্রেস ও নির্দলের সমর্থনে পুরবোর্ড গঠন করে কংগ্রেস-তৃণমূল। পরে অবশ্য নির্দল ও কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুরনো, জীর্ণ পুরভবন ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন পুরভবন।

বনগাঁর বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস। এখনও পর্যন্ত সেটি না হওয়ায় হতাশ বনগাঁর মানুষ। যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তার উপর ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড, অটো স্ট্যান্ড বা ভ্যানের স্ট্যান্ড। তার উপর যশোহর রোডের দু’পাশ হকারদের মাধ্যমে জবরদখল হয়ে যাওয়ায় রাস্তাটি আরও সরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তার উপর ফুটপাথ বলে আর কিছু নেই। শহর জুড়ে কয়েক হাজার অনুমতিহীন ভ্যানের দাপট। পুরসভার তরফে মাঝে-মধ্যে বেআইনি ভ্যানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় না। বনগাঁ শহরের বাটার মোড় থেকে ১ নম্বর রেল গেট পর্যন্ত মাত্র ১ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে লেগে যায় আধ ঘণ্টারও বেশি সময়। পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য শ’য়ে শ’য়ে পণ্যবাহী ট্রাক শহরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। তার জন্যও যানজট তৈরি হয়।

শহরের মতিগঞ্জে বাগদা রোডে, ত্রিকোণ পার্ক এলাকার চাকদহ রোডে, আদালতের সামনে স্কুল রোডে বাসস্ট্যান্ড গজিয়ে উঠেছে। নিউ মার্কেট এলাকায় যশোহর রোডের পাশে আরও একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। আর যত্রতত্র তৈরি হয়েছে অটোর স্ট্যান্ড। মতিগঞ্জে সোম ও শুক্রবার হাট বসে। দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি করে ফসল নিয়ে আসেন চাষিরা।

ফলে ওই দু’দিন যানজট সমস্যা আরও বেড়ে যায় ওই এলাকায়। বাসিন্দাদের দাবি, বাস টার্মিনাস তৈরির জন্য দ্রুত পুর-কর্তৃপক্ষকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার পক্ষ থেকে উদ্যোগী হলেও রাজনৈতিক সহমতের অভাবে মহকুমাশাসকের দফতরে বহু বার বৈঠক হওয়া সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। এ ছাড়াও, জমির সমস্যা ছিল।

তবে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসের জন্য কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় চাঁপাবেড়িয়া এলাকায় বনগাঁ-চাকদহ সড়কের পাশে পূর্ত দফতরের জমি রয়েছে। সেইখানে মোটেল (গাড়ি-সহ থাকার ব্যবস্থা) তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে সেখানে বাস টার্মিনাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।

বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য যানজট সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরি করতে। শহরের মধ্যে পূর্ত দফতরের ওই জমি ছাড়া আর কোনও বড় জমি নেই যেখানে বাস টামির্নাস তৈরি করা যায়। জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে জমি পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তার পরিবর্তে পাশে পুরসভার যে জমি রয়েছে, সেটি মোটেল তৈরির জন্য দিয়ে দেওয়া হবে।”

বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার মোটেল তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা ওই জমিতে বাস টার্মিনাস চাইছি। প্রয়োজনে বাস টার্মিনাসের উপরে মোটেল তৈরি করা যেতে পারে।’’ পুরসভা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে রাস্তায় ৫৭ জন পুর-কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।

যানজট নিয়ে মানুষ হতাশ হলেও সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কিন্তু খুশি তাঁরা।

সাধারণ মানুষের চিকিৎসার কথা ভেবে চালু হয়েছে স্বাস্থ্যদীপ প্রকল্প। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা সেখানে রোগী দেখছেন। নামমাত্র খরচে আলট্রাসোনোগ্রাফি, ইসিজি এক্স-রে-সহ নানা পরীক্ষা করানো যাচ্ছে স্বাস্থ্যদীপে। পাশাপাশি, দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য বিনা বেতনে পড়ানোর জন্য চালু হয়েছে অবৈতনিক শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র, যেখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করবার সুযোগ পাচ্ছেন। পুরসভার চারটি স্কুলে চালু হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র।

পুরসভার তরফে ইতিমধ্যেই আবেদনের ভিত্তিতে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত আর্সেনিক-মুক্ত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সুকান্তপল্লিতে তৈরি হচ্ছে ১০ লক্ষ লিটার জল ধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন ‘ওয়াটার রিজারর্ভার’।

এ ছাড়াও, পিচের রাস্তা ঢালাই করা, গভীর নলকূপ বসানোর মচেতা কাজও করা হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। তবে নিকাশি-নালা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বাসিন্দাদের। তাঁদের কথায়, ‘‘অল্প বৃষ্টি হলেই বেশ কিছু এলাকায় জল জমে যায়। নালাগুলি নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকে। নিয়মিত পরিষ্কার করা না হওয়ায় তা দিয়ে বৃষ্টির জল বেরোয় না। দুর্গন্ধ ছড়ায়।” তবে জ্যোৎস্নাদেবীর বক্তব্য, ‘‘অতীতের পুর-বোর্ডগুলি অপরিকল্পিত ভাবে নিকাশি-নালা তৈরির ফলেই এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষও নালায় প্লাস্টিক বা নোংরা ফেলেন। তাঁদেরও সচেতন হতে হবে।” তাঁর সংযোজন, নিকাশি সমস্যা মেটাতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।

বনগাঁর মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্মশানে বৈদ্যুতিন চুল্লি ও শহরে একটি অডিটোরিয়াম তৈরি করার। দিন কয়েক আগেই বৈদ্যুতিন চুল্লি চালু করা হয়েছে শ্মশানে।

স্থানীয় টাউনহল এলাকায় জোর কদমে চলছে অডিটোরয়াম তৈরির কাজ। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে পুরসভা সূত্রে। শহরের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্ন রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মোড়ে বসানো হয়েছে হাইমাস্ক লাইটের টাওয়ার। শহরের সৌন্দর্যায়নও নিয়েও সচেতন হয়েছে পুরসভা।

বনগাঁর ত্রিকোণ পার্ক এলাকাটির সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র-সহ নানা মনীষীর মূর্তি বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও, বিএসক্যাম্প মোড়ে বাংলাদেশের ভাষা শহিদদের স্মরণে শহিদ-স্মারক তৈরি করা হয়েছে। বনগাঁ থানার ঘাটে তৈরি করা হয়েছে একটি বড় পার্ক।

কী বলছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুনীল সরকার?

তাঁর কথায়, ‘‘পুর এলাকায় সামগ্রিক উন্নয়ন হচ্ছে। আমরাও উন্নয়নের ব্যাপারে সহযোগিতা করছি। কিন্তু ওয়ার্ডগুলির ভিতরে এখনও পর্যাপ্ত আলো নেই। নিকাশি ব্যবস্থা-সহ আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।’’

জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পুরবাসীদের নাগরিক পরিষেবা দিতে চাই। তাতে কতটা সফল হয়েছি, তা বলবেন পুর এলাকার বাসিন্দারাই।’’

southbengal bangaon traffic jam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy