এই জমিতেই হল ভিতপুজো। দেখা যাচ্ছে পুরনো শিলান্যাসের ফলকটিও। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
অবশেষে শুরু হল আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ। বাগদায় সীমান্তবর্তী এই এলাকায় এর আগেও একবার একটি কলেজ তৈরির জন্য জমি দিয়েছিলেন হেলেঞ্চা গালর্স হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মৃণালিনী বিশ্বাস। কিন্তু নানা কারণে সে সময় কাজ শুরু না হওয়াতে তিনি ওই জমি ফিরিয়ে নেন। ২০১৩ সালের মে মাসে এই কলেজের জন্য ১ একর ৯৬ শতক জমি আবারও দান করেছেন তিনি। জমিতে ভিত পুজোও হয়েছে। কলেজটি তৈরি করছে রাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন। প্রাথমিক ভাবে কাজ শেষ করতে বছর খানেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কাজের বরাত পাওয়া সংস্থা। এই কলেজকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে পিছিয়ে পড়া ব্লক বাগদার সাধারণ মানুষ। আইটিআই কলেজ তো দূরের কথা, বছর দশেক আগে পর্যন্ত এখানে কোনও সাধারণ কলেজও গড়ে ওঠেনি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগদা ব্লকের জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করেন। এলাকায় এখন কলেজ বলতে রয়েছে বিআর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়। সেখানে আবার সব বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয় না। কলকাতায় বা অন্যত্র গিয়ে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি সকলের নেই। এলাকায় কাজের সুযোগও কম। তাই বহু যুবক ভিন রাজ্যে বা অন্য দেশে পাড়ি দেন। এলাকায় আইটিআই কলেজ তৈরি হলে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সেখান থেকে কারিগরী শিক্ষা নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন বলে স্বপ্ন নিঃসন্তান মৃণালিনীদেবীর। সে কারণেই জমি দেওয়ার কথা ভেবেছেন বলে জানালেন।
২০০৪ সালেও একবার একটি ট্রাস্টি বোর্ডকে ২ একর ৫৬ শতক জমি দান করেছিলেন মৃণালিনীদেবী ও তাঁর স্বামী মনীন্দ্রভূষণ বিশ্বাস। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি বারাসতের তত্কালীন প্রয়াত সাংসদ রঞ্জিত পাঁজা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নামাঙ্কিত কলেজটির শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা জটিতলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। ইতিমধ্যেই মারা যান মনীন্দ্রবাবু। তিনি এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক ছিলেন। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকতাও করতেন।
জমি দিয়েও কলেজ তৈরি না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মৃণালিনীদেবী। ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে জমিটি ফিরিয়ে নেন তিনি। গত বিধানসভা ভোটে বাগদা থেকে দাঁড়িয়ে বিধায়ক ও রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি দফতরের মন্ত্রী হয়েছেন উপেন বিশ্বাস। উপেনবাবুর সঙ্গে মৃণালিনীদেবীদের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। উপেনবাবু বলেন, “আমি বিধায়ক হওয়ার পরে মৃণালিনীদেবী জমিটি নিঃশর্তে দান করেছিলেন রাজ্য সরকারকে। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ওই জমিতে আইটিআই কলেজ করব। সেই মতো কলেজটি তৈরি হচ্ছে।” এর ফলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন উপেনবাবুও। তবে আগের বার যতটা জমি দিয়েছিলেন মৃণালিনীদেবী, এ বার তার থেকে কিছুটা কম দিয়েছেন। তবে ওই পরিমাণ জমি আইটিআই কলেজ তৈরির জন্য যথেষ্ট বলে জানাচ্ছে প্রশাসনের একটি সূত্র।
মৃণালিনীদেবী বলেন, “আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল, এলাকায় একটি কলেজ হবে। স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতেই আইটিআই কলেজ তৈরির জন্য জমি দান করেছি।” অতীতে তিনি চেয়েছিলেন স্বামীর নামে কলেজটি তৈরি হোক। কিন্তু এখন অবশ্য নামকরণ নিয়ে তাঁর কোনও বিশেষ ভাবনা নেই। শুধু চান, দ্রুত কলেজটির পঠন পাঠন শুরু হোক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের অগস্ট মাসে ওই শিক্ষিকা জমির দানপত্র বাগদার সাব রেজেস্ট্রি অফিসে গিয়ে সই করে দেন। প্রাথমিক ভাবে কলেজটি তৈরির জন্য কারিগরী শিক্ষা দফতর ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। এলাকার শিক্ষক অঘোরচন্দ্র হালদার বলেন, “মৃণালিনীদেবীর এই দান এলাকার মানুষ সারা জীবন মনে রাখবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy