Advertisement
E-Paper

ভাঙাচোরা রাস্তা ভাবাচ্ছে পুজো কমিটিকেও

মহালয়ার দিন থেকেই অনেক জায়গায় পুজোর আলো জ্বলে উঠেছে। কয়েক দিন পরেই বাজতে শুরু করবে মাইক। নতুন জামাকাপড় পরে শুরু হবে ঠাকুর দেখার পালা। কিন্তু অসুররূপী বৃষ্টি বাধা দিচ্ছে পুজোর শেষ মুহূর্তের কাজে। দর্শনার্থীরা পুজো দেখতে নিশ্চিন্তে সাজগোজ দেখতে আসতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ধন্ধে পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। বসিরহাট, ক্যানিং মহকুমার কিছু রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে উৎসবের দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৭
খানাখন্দে ভরা রাস্তা। বসিরহাট ও ক্যানিংয়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

খানাখন্দে ভরা রাস্তা। বসিরহাট ও ক্যানিংয়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মহালয়ার দিন থেকেই অনেক জায়গায় পুজোর আলো জ্বলে উঠেছে। কয়েক দিন পরেই বাজতে শুরু করবে মাইক। নতুন জামাকাপড় পরে শুরু হবে ঠাকুর দেখার পালা। কিন্তু অসুররূপী বৃষ্টি বাধা দিচ্ছে পুজোর শেষ মুহূর্তের কাজে। দর্শনার্থীরা পুজো দেখতে নিশ্চিন্তে সাজগোজ দেখতে আসতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ধন্ধে পুজো কমিটির কর্মকর্তারা। বসিরহাট, ক্যানিং মহকুমার কিছু রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে উৎসবের দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। প্রশাসনকে বহু বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের অধিকাংশ মণ্ডপের বাঁশ বাঁধার কাজ এখনও শেষ হয়নি। আকাশের মুখ ভার থাকায় প্রতিমার কাজ চতুর্থী-পঞ্চমীর আগে কোনও ভাবে শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। তার মধ্যে এই এলাকার মানুষের কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরের পথঘাট। বিশেষ করে টাকি ও ইটিন্ডা রোডের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে স্থানীয় বাসিন্দারাই এই পথ দিয়ে চলাচল করতে ভয় পান। পুজোর সময় বাইরে থেকে যে সব দর্শনার্থী আসবেন, তাঁদের ভোগান্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুজোকমিটির কর্তারা।

এসএন মজুমদার, মার্টিনবার্ন, আরএন মুখার্জি-সহ কিছু রাস্তা বৃষ্টির পরে চলাচলের একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা। বিশেষ করে পুরাতন বাজার থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ইটিন্ডা রোড এবং ফাল্গুনি চৌমাথা পর্যন্ত। টাকি রোডের উপর পিচ উঠে গিয়ে রাস্তার মধ্যে জল জমে পুকুরের চেহারা নিয়েছে। মানুষ ওই গর্ত বুঝতে না পারায় প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের ভোটের আগে রাস্তা মেরামতের জন্য কিছু ইট ও স্টোনচিপস রাস্তার দু’ধারে আনা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার একাংশও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শুধু তাই নয়, গাড়ির যন্ত্রাংশগুলিও এই রাস্তায় বার বার ভেঙে যাচ্ছে বলে অভিযোগ গাড়ি চালকদের। এর ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ও অফিস যাত্রীরা ঠিক সময়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়েও গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারছেন না। আশেপাশের দোকানে বৃষ্টির নোংরা জল ঢুকে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে আবদুল রহিম, মিলন নাথ নামে এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, “দোকানের সামনে যদি রাস্তা পুকুরের আকার নেয় তা হলে লোকে চলাচল করবে কী ভাবে? ভিড় কমে গিয়েছে। কেনাবেচা ঠিকমতো হচ্ছে না।” স্থানীয় বাসিন্দা বাবু গাজি, মন্টু মণ্ডলদের দাবি, রাস্তায় জল জমে চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে আকছার। তা ছাড়া, পথচারীরাও পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙছেন। পুজোর আগে রাস্তাঘাট সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ জমেছে সাধারণ মানুষের মনে।

মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে চলাচলের জন্য পূর্ত দফতর রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছে। আশা করি পুজোর আগেই এই কাজ শেষ হবে।”

একই অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাস্তাগুলির। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ সাজাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। কোনও কোনও পাড়ায় লাইটের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে আবার কোনও জায়গায় মণ্ডপের সাজসজ্জা। জয়দেবপল্লি সর্বজনীনের কর্মকর্তা বলু মণ্ডল বলেন, “রাস্তার এই অবস্থার কথা বার বার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি দেখে এ বার আমরাই পুজোর বাজেটের থেকে কিছু টাকা নিয়ে ইট-সুরকি ফেলে রাস্তার গর্ত বুজিয়েছি।” ক্যানিং হাসপাতাল পাড়া সর্বজনীনের কর্মকর্তা অর্ণব রায় বলেন, “ক্যানিং-বারুইপুর রোডের যা অবস্থা তাতে দূর-দূরান্তের মানুষ কী ভাবে আসবেন, তা ভাবছে না প্রশাসন।”

ক্যানিং মহকুমায় ৩০০টি পুজো হয়। তারমধ্যে ক্যানিং শহরে রয়েছে কয়েকটি বড় বাজেটের পুজো। যা দেখতে প্রত্যেক বছরই ভিড় উপচে পড়ে। জনস্রোত শুরু হয় এলাকার মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে থেকে জয়দেবপল্লি রাইস মিল ঘাট পর্যন্ত। এই রাস্তা দিয়েই দর্শনার্থীরা পুজো দেখতে আসেন। অনেক পুজো এই রাস্তা দিয়ে সরিয়ে ভিতরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেহাল রাস্তার কারণে গাঁধী কলোনির দুর্গোৎসব কমিটির কর্মকর্তারা তাদের পুজো মূল রাস্তার পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে গ্রামের ভিতরে নিয়ে গিয়েছে। ওই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা শম্ভু সাহা বলেন, “রাস্তার যা অবস্থা প্রশাসনের সর্বস্তরে কোনও লাভ হয়নি। এত দিনই কিছু করল না, আর পুজোর মুখে কিছু করা যাবে কিনা জানি না।”

ক্যানিং-বারুইপুর রাস্তাটি বহু দিন ধরেই বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে বললেন, “এমনিতেই বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তার উপরে বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। জল জমে অবস্থা আরও খারাপ হয়। বর্ষায় রাস্তায় পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে নিকাশি নালার উপর বসানো স্ল্যাবগুলিও ভেঙে রয়েছে। ফলে এই রাস্তায় মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দুর্ঘটনা লেগে থাকে। রাস্তার পাশে রয়েছে একাধিক স্কুল, বিদ্যুৎ দফতর, ব্যাঘ্র প্রকল্পের দফতর, কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, সিনেমা হল-সহ অন্যান্য অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিস। পুজো ছাড়াও নিয়মিত এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে হাজার হাজার মানুষ। একই হাল বারুইপুর মেইন রোড, মেথর রোড, ক্যানিংয়ের হেলিকপ্টার মোড় থেকে থুমকাঠি মোড় পর্যন্ত। গোসাবা এবং বাসন্তীতেও বহু রাস্তার খারাপ অবস্থা হয়ে পড়ে রয়েছে।

মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “রাস্তাগুলি যে খারাপ তা জানি। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে কথা বলেছি। পুজোর আগেই গর্তগুলি বুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

pujo southbengal canning basirhat damaged road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy