Advertisement
E-Paper

মুখ ভার আকাশের তোয়াক্কা না করেই আনন্দের জোয়ার

দিনভর মুখ ভার করা আকাশ আর টিপটিপে বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করেই কয়েকশো গাড়ি বোঝাই দূর-দূরান্তের মানুষ টাকির ইছামতী নদীর ধারে চড়ুইভাতির আনন্দে মেতে উঠল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে নৌকোয় ভেসে বেরানো, মাইকে গান বাজানো তো ছিলই, পাশাপাশি ইকো পার্কে ঘুরে, বোটিং করে, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং পাখি দেখে মানুষ কাটিয়ে দিলেন বছরের প্রথম দিনটা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৪
বিনোদনের সকাল। নিজস্ব চিত্র।

বিনোদনের সকাল। নিজস্ব চিত্র।

দিনভর মুখ ভার করা আকাশ আর টিপটিপে বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করেই কয়েকশো গাড়ি বোঝাই দূর-দূরান্তের মানুষ টাকির ইছামতী নদীর ধারে চড়ুইভাতির আনন্দে মেতে উঠল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে নৌকোয় ভেসে বেরানো, মাইকে গান বাজানো তো ছিলই, পাশাপাশি ইকো পার্কে ঘুরে, বোটিং করে, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং পাখি দেখে মানুষ কাটিয়ে দিলেন বছরের প্রথম দিনটা।

গত ২৫ ডিসেম্বর বিশেষ ভিড় না জমায় উদ্বিগ্ন ছিল টাকি পুর প্রশাসন। চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল ইছামতীর ধার ঘেঁসে গড়ে ওঠা গেস্ট হাউসের মালিক এবং পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেশার ব্যবসায়ীদের কপালেও। এ সবের মাঝে আবার বছরের প্রথম দিন সকাল থেকে বৃষ্টি এবং কুয়াশার জেরে রোদের মুখ দেখা যায়নি। উদ্বেগ বাড়ছিল ব্যবসায়ী মহলে। এ বারে কি তা হলে শীতের ছুটিতে পর্যটকদের দেখা মিলবে না?

তবে বেলা একটু গড়াতেই সে দুশ্চিন্তায় জল ঢেলে শুরু হয় গাড়ির লাইন। হাজারে হাজারে মানুষ ভিড় করতে থাকেন টাকির বিভিন্ন এলাকায়। দুপুরের দিকে টাকিতে গিয়ে দেখা গেল তিল ধারণের জায়গা নেই। নদী-সংলগ্ন এলাকায় জায়গার অভাবে অনেক দল, শ্মশান থেকে ইকো পার্কের মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জোড়া ধানের জমিকেই চড়ুইভাতির জন্য বেছে নিয়ে মাইক বাজিয়ে ফুর্তিতে মেতে উঠেছে।

বসিরহাট, বাদুড়িয়া এবং টাকির ইছামতী-সংলগ্ন এলাকায় চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষের জন্য রীতিমতো তৎপর ছিল তিনটি পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাদের তরফে অতিথি আপ্যায়ন, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানোই ছিল। রাস্তা-পার্কে রঙবেরঙের আলোর সঙ্গে ফোয়ারা লাগানো হয়েছে। সর্বত্রই পুলিশের সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারদের টহল দিতে দেখা গিয়েছে। গণ্ডগোল এড়াতে টাকিতে পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি টহল দিতে দেখা যায় সীমান্ত পাহারায় থাকা বিএসএফ জোয়ানদের।

ইছামতীর ধারে টাকিতে অপরূপ সুন্দর পরিবেশে নদীর ধারে গাছ-গাছালিতে ঘেরা ছোট ছোট কটেজে আনন্দে মেতেছিল বনভোজনে আসা মানুষজন। টাকি গেস্ট হাউসের পাশে নারকেল গাছের সারির মাঝে ভ্রমণরসিক মানুষের ভিড় জমেছিল। পুরসভার উদ্যোগে মাছরাঙা দ্বীপ দেখার জন্য নৌকো, ভুটভুটি এবং লঞ্চের ব্যবস্থা করা ছিল। নদীর ধার ঘেঁসে গড়ে ওঠা একাধিক সরকারি, বেসরকারি গেস্ট হাউসও ছিল ভিড়ে ঠাসা। জালালপুর গ্রামে ইছামতীর গা ঘেঁসে চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সুন্দরবনের আদলে গরান, গোল, সুন্দরী-সহ নানা গাছে ভরা জঙ্গল এবং ইকো পার্কে বিকেলের দিকে ভালই ভিড় জমে।

টাকির তুলনায় ভিড় কম হলেও বসিরহাটের মির্জাপুরে ইছামতীর পাশে তৈরি শহিদ দীনেশ মজুমদার শিশুপার্ক এবং ইছামতী পিকনিক গার্ডেনেও অনেক মানুষ এসেছিলেন। এখানে বাঁশের লম্বা সাঁকো পেরিয়ে শতাধিক লম্বা ঝাউ গাছের বাগানের মধ্যে বিচালির ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে বনভোজনের আনন্দই অন্য রকম। রান্না করার আলাদা জায়গা, খেলার মাঠ, বাথরুম, স্নানের ব্যবস্থা, গাড়ি রাখার জায়গা সহই রয়েছএ এখানে। এক সময়ে ঠিক হয়েছিল জলাশয় বাদ দিয়ে প্রায় তেষট্টি বিঘা জমিতে ওই পার্কটি আরও আকর্ষণীয় করতে এবং সেখানে রাত্রিবাসের জন্য বসিরহাট পুর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে ট্যুরিস্ট লজ, কুমির প্রকল্প, টয়ট্রেন, রোপওয়ে, সায়েন্স পার্ক। কিন্তু সে পরিকল্পনা আর বাস্তবে এগোয়নি। বাদুড়িয়ার তারাগুনিয়া গ্রামের পিকনিক স্পটে পশু-পাখি, স্লিপ, দোলনা এবং পুকুরে ময়ূরপঙ্খী নৌকোয় জল-ভ্রমণ সহ ছোট ছোট কটেজের সামনে বিশেষ দিনের আনন্দে মেতেছিল মানুষ।

ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই পিকনিক করতে ক্যানিং মহকুমারও বিভিন্ন প্রান্তে উপচে পড়ল পর্যটকদের ভিড়। ছোট থেকে বড় সকলে এ দিন আনন্দে মেতে উঠল। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবার নানা স্পট ঘুরে দেখা গেল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ত্রিপল, প্লাস্টিক টাঙিয়েই চলছে রান্না, খাওয়া-দাওয়া। একে অন্যকে পাল্লা দিয়ে বক্সে বেজে চলেছে হিন্দি-হাংলা গানের ফুলঝুরি। তালে তালে পা মেলাচ্ছেন সব বয়সের মানুষ।

এরই মধ্যে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কিছু কিছু জায়গায় গাড়ি পার্কিং করিয়ে ফি নিয়ে রোজগার করতে নেমে পড়েছিল অনেকে। পিকনিক স্পটগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা থাকায় ড্রামে করে জল নিয়ে স্থানীয় মানুষ ব্যবসার আশাতেও বেরিয়েছেন। ক্যানিংয়ের ডাবুতে মাতলা নদীর বুকে নৌকো ভ্রমণ করতে দেখা গেল এক পর্যটককে।

পিকনিকে আসা ক্যানিংয়ের এক ব্যবসায়ী অশোক বিশ্বাস বললেন, “সারা বছরই কাজে ব্যস্ত থাকি। বছরের প্রথম দিনটা তাই মিস করতে চাই না। বৃষ্টির মধ্যেও সে জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বনভোজনে।”

south bengal celebration new year bad weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy