গ্রিল ভাঙার শব্দে বাড়িতে চোর ঢুকেছে মনে করে গৃহস্থ কনকনে শীত উপেক্ষা করে লেপ-তোষক সরিয়ে বিছানা ছেড়ে বেরিয়েছিলেন। উঁকিঝুঁকি মেরে কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে ফের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। খানিক পরে ফের বাইরের বারান্দার গ্রিল ভাঙার শব্দ। আবারও বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন গৃহকর্তা। এ বারও দেখেন, সব সুনসান। কারও টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। আর ঘুমোবেন না ঠিক করেন গৃহকর্তা। শব্দের রহস্য ভেদ করেই ছাড়বেন, পণ করে বসেন।
রাত তখন প্রায় ১টা। দেগঙ্গার দক্ষিণ কাউকেপাড়ার আব্দুল আজাদ ওরফে লাল্টু ফের শব্দ পেয়ে খাড়া হয়ে বসেন বিছানায়। বুঝতে পারেন, সত্যি সত্যিই বাইরে কেউ দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। ভাই আব্দুল রশিদকে ডেকে তোলেন তিনি। বাইরে বেরিয়ে আলো জ্বেলে দেখেন, গ্রিলের একাংশ ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তত ক্ষণে সটকে পড়েছে দুষ্কৃতীরা। দাদাকে ঘরে পাঠিয়ে লাল্টু বন্ধুদের ডেকে নিয়ে বাড়ির কাছে একটু দূরে গা ঢাকা দিয়ে থাকেন।
শীতের রাত যেন গড়াতেই চায় না। ঘুমেও চোখ লেগে আসছে। এ ভাবেই ঘণ্টা খানেক কেটে যায়। রাত ২টো নাগাদ ফের চোর পৌঁছয় লাল্টুদের বাড়ির বারান্দার কাছে। হাতুড়ি দিয়ে গ্রিলের গেট ভাঙার চেষ্টা শুরু করে। এ দিকে দূরেই বিচালি গাদার পাশে বসে নজর রেখেছিলেন লাল্টুরা। পা টিপে টিপে সকলে এসে দাঁড়ান চোরের ঠিক পিছনে। উত্তেজনায় তখন মেতে আছে চোর। পিছনে না তাকিয়েই হাত বাড়িয়ে বলে, “কী হল রে, লোহা কাটার করাতটা এনেছিস?” তার পরেই চোরের গালে বিরাশি সিক্কার এক চড়। সকলে হই হই করে ধরে ফেলে তাকে।
পরে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে রাজু মণ্ডল নামে ওই চোরকে। পুলিশ জানায়, বারাসাতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা রাজুর চুরিবিদ্যায় নামডাক আছে। একাধিক বার ধরা পড়েছে। কখনও “হুজুর আর ভুল হবে না” কখনও “এই তিন সত্যি বলছি” কখনও “ধর্মের দিব্যি” কেটে ছাড় পেয়েছে সে। কিন্তু পেশা বদলায়নি। রাজুর কথায়, “কী করে বুঝব যে আমাকে ধরার জন্য এই কনকনে ঠান্ডার রাতে জেগে বসে থেকে কেউ পাহারা দেবে। তা ছাড়া যত বারই গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করছিলাম, তত বারই গৃহস্থ জেগে যাচ্ছল। ফলে একটা জেদ চেপে যায়। মনে হচ্ছিল, যে করেই হোক আজ রাতে এ বাড়িতে চুরি করতেই হবে। নয় তো সঙ্গীদের কাছে আমার মান-ইজ্জত থাকত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy