Advertisement
E-Paper

রান্নাঘরে চাল টিপে দেখলেন মমতা, ভোটের আঁক কষতে ব্যস্ত নেতারা

প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চাইছে না। প্রার্থীদের কেউ কেউ মুখে বলছেন, জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সকলেই চাপা উত্তেজনায় ছটফট করছেন। আজ, সোমবার বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু। এই কাজে যুক্ত যাঁরা, সকলকে সাড়ে ৭টার মধ্যে গণনাকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকতে হবে। গোটা এলাকা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪২
কামনাসাগরের পাড়ে মোবাইলে মশগুল সুব্রত।

কামনাসাগরের পাড়ে মোবাইলে মশগুল সুব্রত।

প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চাইছে না। প্রার্থীদের কেউ কেউ মুখে বলছেন, জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সকলেই চাপা উত্তেজনায় ছটফট করছেন।

আজ, সোমবার বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু। এই কাজে যুক্ত যাঁরা, সকলকে সাড়ে ৭টার মধ্যে গণনাকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকতে হবে। গোটা এলাকা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে।

ফল প্রকাশের ঠিক আগের দিন, রবিবারটা কী ভাবে কাটালেন প্রার্থীরা, তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, সকলেই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন প্রাণপণে। কেউ ডুবে থাকলেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের হাইভোল্টেজ ভারত-পাক ম্যাচে, কেউ ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লেন প্রকৃতির ছবি তুলতে। কেউ আবার বাড়িতে রান্নার কাজে সময় দিলেন অনেকটা।

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টায় ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সুনসান এলাকা। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভিড় নেই। মতুয়া ভক্তদের বিশেষ দেখা গেল না। বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের সামনে উঠোনে এক মহিলা পুলিশ কর্মী চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। সাংবাদিকেরা যেতেই একটি ঘর থেকে কয়েক জন পুলিশ কর্মী বেরিয়ে এলেন। দেখা গেল, বড়মার ঘরের দরজা বন্ধ। বাড়ির ভিতরে উঠোনে একটি চেয়ারে বসে তৃণমূল প্রার্থী তথা ঠাকুর পরিবারের বড় বৌমা মমতা ঠাকুর সবে স্নান সেরে এসে চুল ছেড়ে রোদে বসে আছেন। পাশে এক মহিলা। হঠাৎ এসে পড়ায় খানিকটা অপ্রস্তুত দেখাল মমতাদেবীকে। বললেন, “সকালেও কয়েকটা টিভি চ্যানেল থেকে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিল। ডান হাতের ব্যথাটা বেড়েছে। কাঁধে একটু ফোলা আছে। পা দু’টো নিয়েও সমস্যা। ভোটের এত ঝক্কি সামলানোর অভ্যেস তো নেই। একটু জ্বরও এসেছে।”

এরই মধ্যে শনিবার ছিল বিভিন্ন এলাকায় মতুয়াদের তিনটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে মমতা ঠাকুরকে ওই অনুষ্ঠানে যেতেই হত। কিন্তু শরীর বাধ সাধায় তা সম্ভব হয়নি। মমতা জানালেন, মোবাইলের যোগাযোগ করে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। ফোন মারফত তাঁর বক্তব্য মাইকে বাজানো হয়েছে। কথা বলতে বলতে ছুটলেন রান্নাঘরের দিকে।

জানালেন, সকালে উঠে বড়মাকে দেখভাল করেছেন, স্নান করিয়েছেন। মমতা এ দিন মুখে বলছেন, ভোটের ফল নিয়ে চাপে নেই। কিন্তু চোখ-মুখ অন্য কথাই বলছে। কী যেন ভেবে চলেছেন কথার ফাঁকে ফাঁকে। বললেন, “মানুষ তো রায় দিয়েই দিয়েছেন। এখন ওই নিয়ে চিন্তা করেই বা কী করব। যা হবে দেখা যাবে।”

ঠাকুরবাড়ির থেকেই আরও এক জন এ বার প্রার্থী হয়েছেন। তিনি মমতাদেবীর ভাইপো সুব্রত ঠাকুর। বাড়িতে গিয়ে প্রথমটায় দেখা মেলেনি। ফোনে খবর দেওয়া হলে কিছু ক্ষণ বাদে এলেন। ঠাকুরবাড়ির কামনাসাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে তরুণ প্রার্থী। জানালেন, বন্ধু-বান্ধব পরিচিতদের সঙ্গে একটু দেখা করতে বেরিয়েছিলেন।

এ দিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ট্রেডমিলে আধ ঘণ্টা হেঁটেছেন। বাড়িতে অনেকে এসেছিলেন। গল্পগুজব করে অনেকটা সময় কেটেছে। তারপর থেকে টিভির সামনে বসে পড়েন। চোখ ভারত-পাকিস্থান ম্যাচের দিকে। ভারতের রান যখন আড়াইশো ছাড়িয়েছে, তখন বাইক নিয়ে কাছাকাছি বেরোন। ব্যক্তিগত কিছু কাজ ছিল। সে সব মিটিয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরে কব্জি ডুবিয়ে কচিপাঁঠার ঝোল দিয়ে লাঞ্চ সেরেছেন।

ভোটের ফল নিয়ে চাপ বোধ করছেন কেমন? সুব্রত বলেন, “দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সকলেই জানিয়েছেন, ফল ভালই হবে।” নিজেই বললেন, “ভিতরে একটু টেনশন তো আছেই। তবে স্বাভাবিক থাকারই চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়।”

টেনশনে আছেন সুব্রতর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণও। পরিচিত সাংবাদিক ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দেখা হলে বা ফোন করে জানতে চাইছেন, ভোটের ফল কেমন হতে পারে। মঞ্জুলবাবু বলেন, “হাজার খানেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। সকলেই তো ভরসা দিচ্ছেন।”

কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডল তুলনায় অনেকটাই চাপমুক্ত। সকালে এসেছিলেন শহরে দলীয় কার্যালয়ে। কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে বেলা ১১টা নাগাদ মোটরবাইকে এক সঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বললেন, “প্রতি রবিবারই সকালে ক্যামেরা হাতে দূরে কোথাও চলে যাই। প্রকৃতির ছবি তোলাটা আমার নেশা। ভোটের জন্য এ ক’দিন সব বন্ধ ছিল। আজ একটু সময় পেয়েই বেরিয়ে পড়েছি।”

যশোহর রোড ধরে বনগাঁ শহর ছাড়িয়ে কুন্তল পৌঁছে গেলেন স্থানীয় কালুপুর ও দোগাছিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায়। ক্যামেরা হাতে ঢুকে পড়লেন সবুজ ঘেরা মাঠে। লেন্সে ধরা পড়ল প্রকৃতির নানা ছবি। কুন্তলের কথায়, “প্রকৃতি আমাকে খুবই টানে। তাই সময় পেলেই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।” টেনশন করার কারণ তেমন নেই কুন্তলের। প্রায় স্বগতোক্তির ঢঙে বললেন, “এ বারও হয় তো কংগ্রেস চতুর্থই হবে। কিন্তু গতবারের তুলনায় আমাদের ভোট বাড়বে অনেকটাই।” তুলনায় হাল্কা মেজাজে আছেন বলেই বোধ হয়, সোমবারের জন্য শ’চারেক রাভাবল্লভী অর্ডার করেছেন তিনি।

সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস এ দিন ছিলেন রাজ্যের বাইরে। ফোনে জানালেন, ব্যক্তিগত কাজে দিল্লি গিয়েছেন। দেবেশবাবুর কথায়, “সকলেই তো বলছেন জিতছি।” তবে সেই বলার উপরে তাঁর কতটা আস্থা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। দেবেশবাবু জানালেন, সোমবার সকাল ৬টায় ফ্লাইট ধরবেন দিল্লি থেকে। দমদমে নেমে সাসরি আসবেন বনগাঁর গণনাকেন্দ্রে।

ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে মমতাদেবীকে এ দিন দেখা গেল রান্নাঘরে। উনুনে ভাত ফুটছে। হাতা দিয়ে তুলে দক্ষ হাতে টিপে টিপে দেখলেন, চাল ঠিকঠাক সিদ্ধ হয়েছে কিনা। ঠিক যেমন সব দলের নেতা-নেত্রীরাও রবিবার রাতভর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কাটাবেন, ভোটারদের মন কতটা পেলেন তাঁরা।


রবিবার ছবিগুলি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

simanta moitra mamatabala thakur subrata thakur kuntal bangaon byelection southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy