Advertisement
E-Paper

ল্যাবরেটরি নেই, বিজ্ঞান পড়ার প্রবণতা কমছে একাদশে

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেশির ভাগ স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান না থাকা বা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় মাধ্যমিকে ভাল ফল করা সত্ত্বেও একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হতে পারছে না পড়ুয়ারা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০২:১১

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেশির ভাগ স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান না থাকা বা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় মাধ্যমিকে ভাল ফল করা সত্ত্বেও একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হতে পারছে না পড়ুয়ারা। অনেকে আবার নামি স্কুলে চলে যাওয়ায় নতুন করে বিজ্ঞান বিভাগের অনুমোদন পাওয়া স্কুলগুলোর বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাসঘর ফাঁকাই পড়ে থাকছে। অনেক পড়ুয়ার পরিবার আবার বিজ্ঞান পড়ার খরচ বহন করতে না পারায় কলা বিভাগেই ভর্তি হচ্ছেন। সব মিলিয়ে জেলার স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান পাঠের চিত্রটা মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়।

ব্যাসপুর হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিকে ৬৭৪ পেয়ে রাজ্যে সম্ভাব্য নবম হয়েছে বনগাঁর গোপালনগরের আকাইপুরের বাসিন্দা নির্ঝর চট্টোপাধ্যায়। নিজের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান না থাকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ভর্তি হতে হয়েছে পাশের আকাইপুর নবগোপাল হাইস্কুলে। গাইঘাটার চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয় (উচ্চ-মাধ্যমিক) থেকে পরীক্ষা দিয়ে এ বার মাধ্যমিকে ৬৭৯ নম্বর পেয়ে সম্ভাব্য চতুর্থ হয়েছে বনগাঁর মধুলিকা ঘোষ। নিজের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। কিন্তু উন্নত মানের ল্যাবরেটরি নেই। তাই মেয়েকে পাশের চাঁদপাড়া বয়েজ স্কুলে ভর্তি করেছেন মধুমিতার বাবা। বললেন, ‘‘ওর নিজের স্কুলেই ভর্তির ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ওই স্কুলে ল্যাবরেটরি না থাকায় মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।’’ ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার মাধ্যমিকে ওই স্কুলের ৪০ জন পরীক্ষার্থী স্টার পেয়েছে। অথচ এখনও পর্যন্ত এক জনও বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়নি একাদশ শ্রেণিতে। ল্যাবরেটরির সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় জানান, নতুন করে দু’লক্ষ টাকার ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম কেনা হবে। তাঁর মতে, ‘‘হয়ত স্কুলে কম্পিউটার সায়েন্স নেই বলে ছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। তাছাড়া আমরা শিক্ষিকারা তো বাড়িতে গিয়ে পড়াই না। তাই এই স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার আগ্রহ কম।” পুরনো বনগাঁ হাইস্কুলে ২০১২-১৩ শিক্ষা বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগের অনুমোদন হয়ে গেলেও এখনও পঠন-পাঠন চালু হয়নি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর জন্য এখনও কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। নেই পরীক্ষাগারও। তাই চালু করা যায়নি পঠনপাঠন। প্রধান শিক্ষক বংশীবদন কর্মকার জানান, এ বার স্কুল থেকে ৭৩ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার মধ্যে স্কুলেই ৫২ জন কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কয়েক জন অন্য স্কুলে গিয়ে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। গত বার এই স্কুলে জনা তিনেক পড়ুয়া শহরের স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়। তাঁর কথায়, “সিলেবাস কঠিন হওয়াতেই এখানে পড়ুয়ারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় না। তবে আগামী বছর থেকে আমরা পড়ুয়াদের বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে উত্‌সাহ দেব। আশা করছি, আগামী বছর এখানে বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন চালু হয়ে যাবে।”

পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকেরা বলছেন, “বিজ্ঞান নিয়ে পড়াতে হলে প্রতি বিষয়ে গৃহশিক্ষক প্রয়োজন হবে। সবার পক্ষে তো সেই আর্থিক ভার বহন করা সম্ভব হয় না।” শিক্ষকদের একাংশের মতে, গ্রামে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবার থেকে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে স্কুলে। মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও আর্থিক কারণে তাদের পক্ষে পরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না। আবার যে সব স্কুলে সদ্য বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে, সেই স্কুলগুলিতে পঠন-পাঠনের মান নিয়ে সংশয় থাকায় পড়ুয়ারা ভর্তি হতে চাইছে না বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। গত বছর কালীতলা বিশ্ববন্ধু শিক্ষানিকেতনে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের অনুমোদন হয়েছে। এই বছর থেকে শুরু হয়েছে পঠনপাঠন। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫ জন ওই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছে। অথচ আসন রয়েছে ২৫ জনের। প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষকও রয়েছেন। রয়েছে উন্নত মানের পরীক্ষাগারও। কিন্তু ওই স্কুল থেকে পাশ করেও একই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চাইছে না পড়ুয়ারা। এ বছর মাধ্যমিকের পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দেবনাথ পাশের আঙরাইল বিদ্যামন্দির, পুরনো বনগাঁ হাইস্কুল, নগেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে গিয়ে সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও মাধ্যমিক পাশ করা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করেন যাতে তাঁর স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেন। কিন্তু তাতেও যে ফল হয়েছে, এমনটা নয়। ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৬৫৯ নম্বর পেয়েছে সায়ন বসু নিজের স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হলেও ৫৮০তার থেকে কম নম্বর পাওয়া পড়ুয়ারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য বেছে নিচ্ছে শহরের স্কুল। যেমন আঙরাইল বিদ্যামন্দিরে এখনও বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়নি। এই স্কুল থেকে যারা মাধ্যমিকে ভাল ফল করছে, তাদের বেশিরভাগই ৬-৭ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ হাইস্কুল বা শক্তিগড় হাইস্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে যাচ্ছে। অথচ পাশের কালীতলা স্কুলে পড়তে চাইছে না প্রায় কেউই। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘আশপাশের যে সব স্কুলে বিজ্ঞান নেই, সেখানে নিজে গিয়ে মাধ্যমিক পাশ করা পড়ুয়া ও তাদের আত্মীয়দের বলেছিলাম আমাদের স্কুলে কোচিং- এর মতো করে পড়ানো হবে। প্রয়োজনে বাড়তি সময় দিয়ে পড়াবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এমনও বলেছিলাম, পড়া শুরু হওয়ার পরে যদি মনে হয়, ঠিক মতো পঠন-পাঠন হচ্ছে না, তা হলে অন্য স্কুলের জন্য টিসি দিয়ে দেব।” তাঁর মতে, মাধ্যমিকে ভাল ফল করার পরে ছাত্র-ছাত্রীরা শহরের নামী স্কুলে এসে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। যেমন দশ কিলোমিটার দূরে বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও বনগাঁ হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য ফর্ম তুলেছে এক ছাত্র। তার কথায়, ‘‘এখানে ভাল ছাত্ররা পড়াশোনা করে। তাদের সঙ্গে পড়তে পারলে ফল ভাল হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই কষ্ট হলেও এখানেই পড়তে চাই।’’ ওই স্কুলের শিক্ষক চন্দন ঘোষ বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভীষণ চাপ থাকে। এ বার ১২৫ জনকে ফর্ম দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাগারের জায়গা আরও বাড়াতে পারলে ভাল হয়।”

অন্য দিকে সুকুমারবাবুর মত, “শিক্ষা দফতরের উচিত নিদিষ্ট এলাকা ঠিক করে দেওয়া। তাহলে আমাদের মতো স্কুলগুলো বাঁচবে।” যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর শীল বলেন, “একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে এলাকাভিত্তিক ভাবে পড়ুয়াদের ভর্তি করা সম্ভব নয়। যে মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে, তার লক্ষ্য থাকে ভাল স্কুলে ভর্তি হওয়া। তাদের উপর

তবে আঙরাইল বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক সুবোধ বসুর মতে, ‘‘সাধারণ ভাবে পড়ুয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার প্রবণতা কমছে। মাধ্যমিকের সঙ্গে উচ্চ-মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। দিল্লি বোর্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাঠ্যসূচি কঠিন করা হয়েছে। অভিভাবকেরা মনে করছেন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ফল খারাপ হতে পারে। তাছাড়া কলা বিভাগে এখন যথেষ্ঠ ভাল ফল করছে পড়ুয়ারা। ৮০ শতাংশের উপরে নম্বর পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমাদের এলাকায় কলা বিভাগে পড়ার আগ্রহই বেশি।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শকেরও তাই মত।

no laboratory decrease in trends of taking science streams at class eleven bongaon simanta moitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy