Advertisement
E-Paper

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাহীনতার অভিযোগ, পড়াশোনা লাটে স্কুলে

সংখ্যালঘু ফান্ডের টাকা কারচুপির অভিযোগ। মিড ডে মিলের চাল লোপাট। ক্লাসের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকা গল্পে মশগুল বলেও অভিযোগ। অফিস রুম বা কমন রুমে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪

সংখ্যালঘু ফান্ডের টাকা কারচুপির অভিযোগ। মিড ডে মিলের চাল লোপাট। ক্লাসের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকা গল্পে মশগুল বলেও অভিযোগ। অফিস রুম বা কমন রুমে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান।

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ হেন একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলন শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকেরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দুর্নীতি, নানা আপত্তিকর আচরণের প্রতিবাদে এবং স্কুলের পঠনপাঠনের মানোন্ননের দাবিতে অবস্থান-বিক্ষোভও করেন। প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের এসসি, এসটি এবং সংখ্যালঘু ফান্ডের স্টাইপেন্ডের টাকা নকল সাক্ষর করে আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মিড ডে মিলের চাল চুরিও অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানান, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নানা অজুহাতে এক সঙ্গে অনেকে অনুপস্থিত থাকছেন। স্কুলের অফিস রুমে বা কমন রুমে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। ক্লাসে না গিয়ে মেয়েদের কমন রুমে স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে গল্পে মশগুল থাকছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা আরও জানান, স্কুলের মধ্যে প্রাইভেট টিউশনও করে কেউ কেউ। ক্লাস চলাকালীন ক্লাসের মধ্যেই দেখা যায়, মোবাইল ফোনে গল্প করছেন অনেকে।

পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, স্কুলের কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না। চারদিক নোংরা আবর্জনায় ভর্তি। শৌচালয়গুলি ব্যবহারের অযোগ্য। গত মঙ্গলবার স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা এই সমস্ত অভিযোগ প্রধান শিক্ষককে জানাতে যান। অভিযোগ, তিনি কোনও উত্তর তো দেনইনি, উপরন্তু তাঁদের গালাগাল দিয়ে তাড়িয়ে দেন। পুলিশের ভয়ও দেখান। এরপর ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকেরা ‘বাসন্তী হাইস্কুল বাঁচাও কমিটি’ তৈরি করে নাগরিক সমাজকে সচেতন করতে বাসন্তী বাজার, সোনাখালি বাজার এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে “বাসন্তী স্কুলের কুকীর্তি” সম্বন্ধে প্রচার শুরু করেছেন।

স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সামিম আখতার, জয়দেব মৃধা, অভিজিৎ দাসেরা বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে ধরনের দুর্নীতি ও বেনিয়ম গড়ে তুলেছেন শিক্ষাঙ্গন জুড়ে, তাতে ছাত্ররাও ক্লাসে না এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিক্ষকদের দেখাদেখি প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাদের কোনও কথা শুনতে চাননি। এরই প্রতিবাদে কমিটি তৈরি করে আমরা আন্দোলনের পথে নেমেছি।” তাঁরা আরও জানান, যত দিন না স্কুলে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে, তত আন্দোলন চলবে।

যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রধান শিক্ষক নির্মলচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “ছাত্রদের কথা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। ১৫-১৬ জন ছাত্র-ছাত্রী ঠিক মতো স্কুলে আসছিল না। তাদের সরকারি ভাতার টাকা তুলে রেখেছি পরে দিয়ে দেওয়ার জন্য। স্কুলে গোডাউন নেই। তাই অতিরিক্ত চাল বাইরে রাখতে হয়।” চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। শিক্ষকদের একাংশের আচরণ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগও মানতে চাননি তিনি। স্কুলের পঠনপাঠন আরও ভাল হওয়া উচিত বলেও তাঁর মত। বিষয়টি নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক চন্দ্রশেখর দেবনাথ বলেন, “স্কুলের উন্নয়ন বা মিড ডে মিল-সহ অন্যান্য বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন না। এ নিয়ে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি। কোনও লাভই হয়নি। আমরা চাই এ বিষয়ে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসুন। সুষ্ঠু ভাবে সব হোক।” জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, “স্কুলের টাকা-পয়সার হিসেবে কিছু গণ্ডগোলের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। বাসন্তীর বিডিও কওসার আলির বক্তব্য, “ওই স্কুলের সম্পর্কে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সমস্ত বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

southbengal corruption multiple corruption allegations against teachers basanti high school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy