Advertisement
E-Paper

শিল্পাঞ্চলে কালী-তীর্থ নৈহাটি ও মণিরামপুর

শক্তির আরাধনায় এবার আর কান ফাটানো বাজির শব্দ নয় দীপাবলিতে আলোর রোশনাইতে সাজছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। এলইডি আর লেজারের রঙবাহারি আলোর পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় থাকছে রকমারি প্রদীপের প্রদর্শনী। আধুনিক আর চিরায়ত রীতির মেলবন্ধন। কারও পঞ্চাশ তো কারও পঁচিশ উদ্বোধনও হয়েছে ঘটা করে। কোথাও টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী কোথাও আবার সন্ন্যাসী মহারাজ ফিতে কেটেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৭

শক্তির আরাধনায় এবার আর কান ফাটানো বাজির শব্দ নয় দীপাবলিতে আলোর রোশনাইতে সাজছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। এলইডি আর লেজারের রঙবাহারি আলোর পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় থাকছে রকমারি প্রদীপের প্রদর্শনী। আধুনিক আর চিরায়ত রীতির মেলবন্ধন।

কারও পঞ্চাশ তো কারও পঁচিশ উদ্বোধনও হয়েছে ঘটা করে। কোথাও টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী কোথাও আবার সন্ন্যাসী মহারাজ ফিতে কেটেছেন। সর্বত্রই মাইকে ঘোষণা হচ্ছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সতর্কবাণী। শব্দবাজির প্রতিবাদে এবার পুলিশের পক্ষ থেকে কালীপুজোর ঠিক আগে আগেই স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে পদযাত্রা হয়েছে। পথনাটিকাও হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে তৈরি হওয়া কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ বাহিনীর পক্ষ থেকেও প্রতিটি পুজো মণ্ডপে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “শব্দবাজি প্রতিরোধে ধরপাকড় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মানুষকে সচেতন করতে পারাটা সব থেকে বড় সাফল্য। পুজোর পরেই বোঝা যাবে কতটা সফল হতে পারলাম আমরা।’’

ব্যারাকপুর তালপুকুরে উদ্যোগী সঙ্ঘের এ বার পঞ্চাশ বছর। সেখানে উদ্বোধক, ছোটরা। সোদপুর জনকল্যাণ পরিষদের ৪৬ বছরের পুজো। এ বারের থিম, পুরনো দিনের রাজবাড়ি। ছোটদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকছে। ব্যারাকপুরে কালীপুজোর পীঠস্থান নৈহাটি আর মণিরামপুর। নৈহাটির সবচেয়ে বড় প্রতিমা ২৯ হাত কালী নামে পরিচিত। দেউলপাড়ার এই পুজো এ বার ৫১ বছরে পড়ল। পুজোতে মেলাও বসে। পুজো শেষে এই প্রতিমা বিসর্জন দিতে দমকল ডাকতে হয়। নৈহাটির ঘিঞ্জি এলাকা দিয়ে এত বড় প্রতিমা নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই প্রতিমার চারপাশ ঢেকে হোস পাইপ দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয়। নৈহাটির ঐতিহ্যশালী পুজোর মধ্যে প্রথমেই যে নামটি আসে সেটি হল গঙ্গার ধারে অরবিন্দ রোডে বড়মা’র পুজো। ২১ হাত উঁচু কালী মূর্তি। কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না পরানো হয় পুজোর দিন। মানত করার দীর্ঘ লাইন পড়ে এখানে। পুরনো রীতি অনুযায়ী বড়মা’র বিসর্জনের আগে নৈহাটির কোনও পুজো বিসর্জন হয় না। গোটা অরবিন্দ রোড জুড়েই দু’হাত অন্তর অসংখ্য কালীপুজো হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারাই উদ্যোগ নিয়ে পুজোগুলি পরিচালনা করেন। নৈহাটিতে বারোয়ারি কালীপুজোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোহাঘাটের পুজো। মিত্রপাড়ার গোপাল স্মৃতি সঙ্ঘের পুজোর এ বার ৫০ বছর। মণিরামপুরে এ বারও প্রায় ৫০টি পুজো হচ্ছে।

শ্যামনগরে মুলাজোড় কালীবাড়ির পুজোও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে খুব বিখ্যাত। দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর আদলে কালো পাথরের মূর্তি। দেবী এখানে ব্রহ্মময়ী। পাথুরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুর নিজের মেয়ের নামে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাদ্রালের জয়চণ্ডী মন্দিরে পুজো হয় ডাকাত কালীর। এক সময় এই অঞ্চলে রণ-পা পরে ডাকাতি করতে যেত ডাকাতেরা। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে জয়চণ্ডীর পুজোর প্রথা ছিল।

হালিশহরে সাধক রামপ্রসাদের ভিটে। এখানে দক্ষিণা কালী পূজিতা হন ১৩০ বছর ধরে। পুজোর দিন ভিটে বাড়ি সাজানো হয়। আলোর মালায় সাজে পঞ্চবটি। হালিশহরের শ্যামসুন্দরীতলার কালী মাতৃরূপিণী। দেবী এখানেও খুব জাগ্রত বলে মানুষের বিশ্বাস। শান্তি ও শক্তির সহাবস্থান।

শিল্পাঞ্চলের প্রান্তিক এলাকা বীজপুরে ইতিহাস খ্যাত রঘু ডাকাতের কালীবাড়ি। বীজপুর থানা-সংলগ্ন পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরটি পরিচিত ডাকাত কালীর মন্দির বলেই। ৫০০ বছরের বেশি পুরনো কাঞ্চনপল্লি যার এখনকার নাম কাঁচরাপাড়া-এখানেই একটি নিম গাছের নীচে বসে রঘু ডাকাত নাকি কালীর আরাধনা করতেন। বারোয়ারি কালী পুজো আর ঐতিহ্যের ধারক হওয়া পুরনো পুজোর অদ্ভুত যুগলবন্দি কারখানার ধুলো-ধোঁওয়া আর হিসাবহীন অপরাধের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে।

byarracpur kalipujo led light
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy