হাসপাতালের পথে মাটি মাফিয়াদের হামলায় আহত কিশোরী। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ।
মাটি-পাচারের ডাম্পার এলাকা দিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে প্রতিবাদ করেছিলেন গ্রামের মানুষ। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ মাটি-মাফিয়ারা পেটাল প্রতিবাদীদের। রেহাই পায়নি নবম শ্রেণির এক ছাত্রীও। তাকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান মেয়েটির মা-ও। মা, মেয়ে-সহ জখম তিন মহিলার চিকিৎসা চলছে বারাসত হাসপাতালে। আহতের সংখ্যা জনা দশেক।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানার সহরা গ্রামে। শাসন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে পাপ্পানা ভড়, আশাদুল বেড়ে, ইমদাদুল ভড়, মিজানুর ভড় নামে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “গ্রামের ভিতরে সরু রাস্তা দিয়ে মাটি বোঝাই বিশাল ডাম্পারগুলো বিপজ্জনক ভাবে দিন-রাত যাতায়াত করে। ডাম্পারের ধাক্কায়, কাঁপুনিতে ঘরের ক্ষতি হয়। প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।” তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তেরা তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ার রয়েছে। সে জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি পুলিশ বা তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। অভিযুক্তদের তরফে আশাদুল বেড়ে এ দিন বলেন, “আমরা তৃণমূল করি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, সহরা এলাকায় কৃষিজমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে বহু দিন ধরেই। সেই মাটি বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সহরা গ্রামের এক চিলতে সরু গলি দিয়ে। তারপরে তা চলে যায় বারাসত, বসিরহাটের বিভিন্ন ইটভাটায়। এলাকাবাসীর দাবি, ডাম্পার যাওয়ার পথ মসৃণ করতে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ গ্রামের গলির কাঁচা রাস্তার মাটি কেটে সমান করছিল মাটি-মাফিয়ারা। কিন্তু সরু রাস্তা দিয়ে বিশাল আকারের মাটি বোঝাই ডাম্পার চলায় আপত্তি তুলে সে কাজে বাধা দিয়েছিলেন গ্রামের ১০-১২টি পরিবারের কিছু মানুষ। তারই জেরে মাটি ব্যবসায়ীদের একাংশ তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ।
আহতদের মধ্যে শাসন ইউনিয়ন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী জামিনি খাতুন, তাঁর মা আনোয়ারা বিবি এবং নাজিমা বিবি নামে আর এক মহিলাকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও, আজহারুল ইসলাম, রাসেল আলি, সুকুর আলি নামে অন্য কয়েকজনের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে এলাকায়।
কৃষিজমির মাটি কোনও অবস্থাতেই কাটা যাবে না, এটাই সরকারি নিয়ম। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বারাসত ২ ব্লকের শাসন এলাকায় সে সবের তোয়াক্কা করে না মাটি-মাফিয়ারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের চোখের সামনেই পেল্লায় মাটি কাটার যন্ত্র এবং শতাধিক ডাম্পার প্রায় প্রতিদিনই ঢুকছে শাসনে। ডাম্পারের তলায় চাপা পড়ে শাসন থানার কাছে কয়েক দিন আগেই মারা গিয়েছেন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসনের। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, “পুলিশ অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy